‘সাসটেইনেবল কোস্টাল এন্ড মেরিন ফিশারিজ প্রকল্পর আওতায় মডেল গ্রাম সমিতির হিসেবে আসেনি ‘কানাইনগর উত্তরপাড়া মৎস্যজীবী গ্রাম সমিতি। নানা সংকটের মধ্যে দিন পার করছে উপকূলীয় জেলে পরিবারগুলো। বংশ পরম্পরায় জেলে, মাছ শিকার ছাড়া যাদের বাঁচার কোনো উপায় নেই, সেই প্রকৃত জেলেরাই সরকারি তালিকায় নিবন্ধিত হতে পারেননি। নিবন্ধন না থাকায় কোনো খাদ্য সহায়তাও তারা পান না। জীবনে কখনো মাছ শিকার করেননি কিংবা যাননি কখনো নদীপাড়ে। প্রধান পেশা ব্যবসা, বাণিজ্য বা ভ্যান চালক। কিন্ত তারা নিবন্ধিত জেলে। আছে জেলে কার্ড। কার্ডের কারণে প্রতি বছর জেলে হিসেবে পান খাদ্য সহায়তা। এতে ভিন্ন পেশার মানুষ পাচ্ছে সরকারি সহায়তা, প্রকৃত জেলেরা হচ্ছেন বঞ্চিত। এমনই অভিযোগ করেন মোংলা উপজেলার চাঁদপাই ইউনিয়নের সাসটেইনেবল কোস্টাল এন্ড মেরিন ফিশারিজ প্রকল্পর আওতায় মডেল গ্রাম সমিতির হিসেবে না আসা ‘কানাইনগর উত্তরপাড়া মৎস্যজীবী গ্রাম সমিতির জেলেরা। প্রকৃত জেলেরা সরকারের দেয়া অনুদান ঠিকঠাকমত পাচ্ছেনা। জেলে না হলেও জেলে কার্ড পেয়েছে অনেকে। প্রকৃত জেলেরা যেন জেলে কার্ড পায় সেদিকে নজর দেওয়ার জোর দাবি জানান ওইসব জেলেরা। তবে তাদের অভিযোগ উপজেলা মৎস কর্মকর্তার চাহিদা না মেটানোর কারণে মডেল হয়নি কানাইনগর উত্তরপাড়া মৎস্যজীবী গ্রাম সমিতি। আমাদের সমিতির অন্তর্ভূক্ত সদস্যরা সাগর, সুন্দরবন ও পশুর নদ সংলগ্ন নদ-নদী থেকে মৎস্য আহরণের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে থেকে। আমাদের সমিতির সংলগ্ন এলাকায় প্রকৃত জেলেরা বসবাস করায় মূলত এটি জেলে পাড়া হিসেবে পরিচিত। আমরা জানি জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থানের মাধ্যমে মৎস্য সম্পদ সুরক্ষায় সরকার নানা সহায়তামূলক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। সরকারের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে “কানাইনগর উত্তর পাড়া মৎস্যজীবী গ্রাম সমিতি”-কে সাসটেইনেবল কোস্টাল এন্ড মেরিন ফিশারিজ প্রজেক্ট কম্পোনেন্ট-৩ এর আওতায় মডেল গ্রাম সমিতির অন্তর্ভূক্তি করলে আমরা প্রকৃত জেলেরা ঠিকমত বাঁচতে পারবো। পশুরপাড় ঘুরে স্থানীয় জেলেদের সাথে কথা বললে তারা জানায় এমন তথ্য। জেলে নুর ইসলাম সরদার বলেন, আমি দীর্ঘ ১০ বছর যাবৎ এ পেশায় আছি। কিন্তু আমি কোন জেলে কার্ড পাইনি। যার কারণে সরকারিভাবে কোন সহায়তা পাইনা। আমার দাবী আমরা যারা প্রকৃত জেলে তারাই যেন জেলে কার্ড পাই। জেলে ধলু তালুকতার বলেন, আমি একজন জেলে হওয়া সত্বেও জেলে কার্ড পাইনা। নদী ছাড়া আমাদের আর কোন আয়ের উৎস নেই। প্রকৃত জেলেরা বাদে অন্যরা জেলে কার্ড পাচ্ছে। কানাইনগর উত্তরপাড়া মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি চয়ন বিশ্বাস বলেন, ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞায় মরি আমরা, মা ইলিশের অভিযানে মরি আমরা, ঝাটকার অভিযানে মরি আমরা কিন্তু সুবিধা পায় চা দোকানদার,ভ্যান চালক। আমাদের উপজেলায় ১২টি দল আছে। মৎস কর্মকর্তা বিদ্যারবাহন সমিতিকে মডেল করেছেন সেখানে ৮৫% লোক চা দোকানদার, ভ্যান চালক। অথচ আমাদের ‘কানাইনগর উত্তরপাড়া মৎস্যজীবী সমিতি ১০০% জেলে থাকা সত্বেও এটি মডেল হয়নি। জেলে নেতা আঃ রশিদ বলেন, আমরা ঝড়-জলোচ্ছাস উপেক্ষা করে নদী-সাগরে মাছ ধরি কিন্তু আমাদের মতো প্রকৃত জেলেদের বাদ দিয়ে চা দোকানদার, ভ্যান চালকদের সমিতিকে মডেল গ্রাম করেছেন। তারা সাগরে চলার মতো ৫টি ট্রলার দেখাইছে কিন্তু আমাদের ৭০টির মতো ট্রলার আছে সাগরে যাবার মতো। আমরা মডেল পাওয়া উপযোগী সত্বেও আমাদের সমিতিকে তারা মডেল করেনি। উপজেলা মৎস কর্মকর্তা জাহিদ সাহেবের চাহিদা ৫লক্ষ টাকা না দিতে না পারায় আমাদের সমিতিটি মডেল হয়নি। এ বিষয়ে সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ জাহিদুল ইসলাম জানান, এই প্রকল্প সরকারের একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এর আগে উপকূলীয় জেলেদের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষে তেমন কোন উদ্যোগ ছিলনা। এ প্রকল্পের কার্যক্রম বাস্তবায়নে সহায়তা করছে সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (এসডিএফ) সংস্থা। মুলত তারাই যাচাই-বাছাই করে একটি মৎস সমিতিকে ‘সাসটেইনেবল কোস্টাল এন্ড মেরিন ফিসারিজ প্রজেক্টর আওতায় আনেন। টাকা চাওয়ার বিষয়টি মিথ্যা বলে জানান তিনি। উল্লেখ্য, মৎস্যজীবীদের আর্থসামাজিক উন্নয়ন, জীবনমান উন্নয়ন, নারী ক্ষমতায়ন, মৎস্য আহরণের মাত্রা ও ধ্বংসাত্বক মৎস্য আহরণের কার্যক্রম হ্রাস, টেকসই মৎস্য আহরণ পদ্ধতির মাধ্যমে উপকূলীয় ও সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ সংরক্ষণ, খাদ্য নিরাপত্ত, শিক্ষা ও চিকিৎসা নিশ্চিতকরণ, স্বাস্থ্য ও পুষ্টির উন্নয়ন সাধন, উদ্যোক্তা তৈরীতে সহায়তাকরণ ও জীববৈচিত্র রক্ষা করার লক্ষে অত্র উপজেলায় বাস্তবায়ন করা হচ্ছে সাসটেইনেবল কোস্টাল এন্ড মেরিন ফিশারিজ প্রজেক্ট। এ প্রজেক্ট’র মূল কার্যক্রম হলে জেলেদের জীবনমানের পরিবর্তন বিষয়ক কার্যক্রম গ্রহণ এবং মেরিন ফিশারিজ ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান প্রণয়ন।