মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে গত কয়েকদিন ধরে প্রচন্ড গরমের সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে লোডশেডিং। এতে অসহনীয় গরমে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। এই তাপদাহ সবার মাঝেই এক অস্বস্তি ও অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। প্রচ- এই গরমে বেশি বিপাকে পড়েছেন উপজেলার শ্রমজীবি মানুষেরা। গরমের জন্য তারা ঠিকভাবে কাজ করতে পারছেন না। একটু কাজ করলেই হাঁফিয়ে উঠছেন। এতোটাই গরম যে, গাছের ছায়ায় বসে থাকলেও মিলছে না প্রশান্তি। উপজেলার আশিদ্রোন ইউনিয়নের টিকরিয়া এলাকার কৃষক ছমিন মিয়া বলেন, সকালে উঠে ছাতা নিয়ে ক্ষেতে বের হয়েছি। কিন্তু ছাতা মাথায় দেওয়ার পরও কোনো লাভ হচ্ছে না। গরমের কারণে ক্ষেতে কাজ করা যাচ্ছে না। ঘাম বেশি হওয়ায় পিপাসা লাগছে এবং শরীর দূর্বল হয়ে যাচ্ছে। সিন্দুরখান ইউনিয়নের সাইটুলা গ্রামের খেটে খাওয়া মানুষ ছায়েদ আলী মনে এবারের গরমটা অন্য রকম। প্রচন্ড গরমে পানির পিপাসা বেশি লাগে। শরীরে ঘামে গোছল করার মতো অবস্থায় সৃষ্টি হয়ে যায়। কাজের ফাঁকে ফাঁকে বিশ্রাম নিতে হচ্ছে। বাতাসও নেই, একটু বৃষ্টি হলে আমার মতো খেটে খাওয়া মানুষদের জীবিকা নির্বাহ করতে গরমের কষ্টটা লাঘব হতো। প্রচ- এ গরমে সবচেয়ে বিপদে আছেন শ্রমজীবি খেটে খাওয়া মানুষগুলো। রোদে তাকালেই চোখ যেন ঝাপসা হয়ে আসে। টানা গরম আর অনাবৃষ্টিতে মানুষের প্রাণ প্রায় ওষ্ঠাগত। ঘরে-বাইরে কোথাও স্বস্তি নেই। ফ্যানের বাতাসেও গরম হাওয়া বের হচ্ছে। এর মধ্যে মরার ওপর খাঁড়ার ঘাঁ হয়ে এসেছে ঘন ঘন লোডশেডিং। লোডশেডিং হলে বাসার মধ্যে যেন দম বন্ধ হওয়ার অবস্থা। শহরের তুলনায় গ্রামে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ আরও বেশি। বিশেষ করে গত এক সপ্তাহ ধরে গড়ে প্রতিদিন ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে বলে জানিয়েছেন শহরতলীর মুসলিমবাগ এলাকার মাহতাব আলম। তিনি বলেন এই গরমে পরিবারের সবাই খুব কষ্টে আছেন। বিশেষ করে শিশুরা সর্দি-কাশিসহ ঠা-াজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। শহরের পূর্বাশা এলাকার অর্পিত বর্ধন নামের এক কলেজ শিক্ষার্থী বলেন, এই প্রচ- গরমে বিদ্যুৎ বিড়ম্বনা চরমে। ঘন ঘন লোডশেডিং এর যন্ত্রণা সহ্যের বাইরে। ঘন্টায় দুই থেকে তিনবার বিদ্যুৎ আসা যাওয়ার খেলা করে। যদি বিদ্যুৎ ভোগান্তি দূর না হয় তাহলে জনসাধারণের কষ্ট কিভাবে লাঘব হবে। বৃষ্টিএ হচ্ছে না, গরমও কমছে না। তাই পল্লি বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ বিদ্যুৎ বিড়ম্বনা থেকে আমাদের বাঁচান। প্রচন্ড গরমে নানা রোগের মানুষ ভোগছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বাড়ছে ডায়েরিয়া, সর্দি, কাশির রোগী। এব্যাপারে শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. নাজমুল হাসান বলেন, প্রচ- গরমে মানুষের শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশী বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। মানুষের শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে গেলে হিট স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। যখন বাইরের তাপমাত্রা মানুষের শরীরের চেয়ে বেশি মনে হবে এবং বাতাসে আর্দ্রতা কম থাকবে, তখন একটু পর পর বেশি বেশি তরল খাবার ও পানি খেতে হবে। পাশাপাশি পুষ্টিকর খাবার গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই। তিনি আরো বলেন, যারা বাইরে কাজ করেন তাদের বাইরের খাবার কম খেতে হবে। বিশেষ করে এই গরমে খাবারের দিকে একটু বেশি খেয়াল রাখতে হবে। গরমে মানুষের শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দেওয়ায় বমি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই বেশি বেশি বিশুদ্ধ খাবার পানি পান করতে হবে।