বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ০৪:৫৮ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
কয়রায় সড়কের কাজ ফেলে ঠিকাদার লাপাত্তা, জনদুর্ভোগ চরমে ধনবাড়ীতে বিলুপ্তির পথে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ঢেঁকি মৌলভীবাজার জেলার ৫ উপজেলা ও ৫ পৌর শাখা বিএনপির আহবায়ক কমিটি অনুমোদন নড়াইলে তারুণ্যের উৎসবে বালক-বালিকাদের সাইক্লিং প্রতিযোগিতা লোহাগাড়া প্রেসক্লাবের উদ্যােগে পত্রিকার হকার ও অসহায়দের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ কালকিনিতে জাতীয় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট অনুর্ধ্ব ১৭ এর ফাইনাল ম্যাচ নবাগত নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল ওয়াজেদকে ফুলেল শুভেচছা মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে অভিযান শ্রীমঙ্গলে কৃষি জমি থেকে মাটি কাটার অপরাধে লাখ টাকা জরিমানা শিক্ষকের দুর্ঘটনা নিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টা সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং সাবেক এমপি’র তারাকান্দায় তারুণ্যের ভাবনায় আগামীর বাংলাদেশ শীর্ষক কর্মশালা

ডিভোর্সের নেপথ্য কারণ ও সমাধান

ইসমাঈল সিদ্দিকী
  • আপডেট সময় বুধবার, ৭ জুন, ২০২৩

প্রতিটি মানুষই একটি সুখী-সুন্দর জীবনের প্রত্যাশায় বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ হয়। অসংখ্য স্বপ্ন লালন করে এক মধুময় সম্পর্কে জড়িয়ে দু’জনেই বুনতে থাকে স্বপ্নের জাল, গড়ে তোলে স্বপ্নিল সুখের ঘর। আজীবন সেই স্বপ্নমাখা জীবন কাটানোর আশায় অকৃত্রিম ভালোবাসা আর বিশ্বাস নিয়ে শুরু হয় তাদের বর্ণিল পথযাত্রা। মুছে যায় না পাওয়া কিংবা হারিয়ে ফেলার সব দুঃখ, দুর্দশা। এভাবে সবকিছু ঠিকঠাক চলতে থাকে, মেনে নেয়া আর মানিয়ে নেয়ার মধ্য দিয়ে দু’জনে সুখে স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন যাপন করে। কিন্তু হঠাৎই কখনো কখনো বিচ্ছেদ বা ডিভোর্সের কারণে তাদের সুসম্পর্কে ভাটা পড়ে। তুচ্ছ ঘটনা কেন্দ্র করে এতদিনকার সব সুখস্মৃতিকে ভুলে গিয়ে দু’জন দুই ছাদের নিচে বসবাস করতে শুরু করে। আমাদের সমাজে একটা সময় ‘মেনে নেয়া, মানিয়ে নেয়ার’ সংস্কৃতি চালু ছিল। অন্তত সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে হলেও সব কলহ-বিবাদের অবসান ঘটত; কিন্তু সময় যত এগোচ্ছে, সেই সুস্থ সংস্কৃতি ততই বিলীন হয়ে যাচ্ছে। আর বিচ্ছেদ নামক কালনাগিনীর ছোবলে হাজারো স্বপ্নঘেরা সম্পর্ক বিপর্যস্ত হচ্ছে।
সম্প্রতি বিচ্ছেদ প্রকোপে বাংলাদেশ এক দুর্বিষহ মুহূর্ত পার করছে। সংসার ভাঙার মিছিলে পাড়ি জমাচ্ছে দলে দলে। ইউরোপীয় দেশগুলোয় বিয়েবিচ্ছেদের হার বেশি হলেও এর ঢেউ মারাত্মকভাবে আছড়ে পড়েছে আমাদের দেশে। সমঝোতা বা মানিয়ে চলাকে দুই পক্ষই মনে করে হেরে যাওয়া। কিন্তু শেষ বিচারে ঝগড়া বা জেদ জিতলেও হেরে যায় তাদের সম্পর্কটা। বিচ্ছেদ শব্দটি অতীব কষ্টের। যেকোনো বিচ্ছেদই পীড়াদায়ক। হোক তা বন্ধুত্বের কিংবা বৈবাহিক বন্ধনের। তারপরও মানুষ বিচ্ছেদকে বরণ করে নেয়। সুখের সন্ধানে একাকিত্বকে বেছে নেয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, সমাজে বিচ্ছেদপ্রবণতা কেন বাড়ছে? কেন মানুষ বৈবাহিক জীবন ছেড়ে একলা জীবন বেছে নিচ্ছে? এ নিয়ে সমাজবিজ্ঞানীরা নিজ নিজ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে নানা কারণ বর্ণনা করেছেন। তবে যে কথাটি প্রায় সবাই বলছেন, তা হচ্ছে- ধর্মীয় অনুশাসনের অভাব। আমরা মনে করি, বাস্তবে বিয়েবিচ্ছেদের নেপথ্যে এটিই সবচেয়ে বড় কারণ।
বিয়েবিচ্ছেদের চিহ্নিত কারণগুলোর সাথে ধর্মীয় অনুশাসনের বিষয়টি ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। ধর্মীয় অনুশাসনের বিষয়টি অনেক বিস্তৃত। বিশ্বাস ও মূল্যবোধ, জীবন-দর্শন ও জীবনধারা, স্বামী-স্ত্রী একে অপরের হক সম্পর্কে সচেতনতা, বিনয় ও ছাড়ের মানসিকতা, সন্দেহপ্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসা, পর্দাপুশিদা রক্ষা করা, পরপুরুষ বা পরনারীর সাথে সম্পর্ক ও মেলামেশা থেকে বিরত থাকা, যৌতুকবিহীন বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হওয়া, শারীরিকভাবে অক্ষম হলে বিয়ে থেকে বিরত থাকা, এসবই ধর্মীয় অনুশাসনের অন্তর্ভুক্ত। এগুলো মানা হয় না বিধায় প্রতিনিয়ত বিচ্ছেদের মতো দুঃখজনক ঘটনা ঘটে চলেছে।
ডিভোর্সের ক্ষতিকর দিক : কাক্সিক্ষত প্রশান্তি লাভে ব্যর্থ হয়ে মানুষ পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার মধ্যেই শান্তি খোঁজে। কিন্তু শান্তি তখন সোনার হরিণ হয়ে পড়ে। ডিভোর্স-পরবর্তী সময়ে নানারকম প্রশ্নবাণে আর মানুষের কটুবাক্যে তারা জর্জরিত হতে থাকে। আশপাশের মানুষের সমালোচনায় তাদের জীবন অসহ্য হয়ে ওঠে। খুব কাছের মানুষ তথা পিতা-মাতা, বন্ধুমহল ও সমাজ তাদেরকে আড়চোখে দেখে। এসব বাচনিক আঘাত সইতে না পেরে অনেককে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতেও দেখা গেছে।
ডিভোর্সের ফলে দু’জনের জীবনের সাথে জড়িয়ে থাকা অন্য জীবনগুলোও অসহায় হয়ে পড়ে। কারণ সন্তানরা যদি বাবা-মায়ের স্বাভাবিক সঙ্গ এবং ভালোবাসা থেকে বি ত হয়, তাহলে তাদের জীবন অস্বাভাবিক হয়ে ওঠে। তারা সমাজকে, পরিবারকে, নেতিবাচক হিসেবেই দেখে। তাদের মধ্যে জীবনবিমুখতা সৃষ্টি হয়, যা অত্যন্ত ভয়াবহ।
ডিভোর্স-প্রবণতা পরিবারের সুরক্ষাকে নষ্ট করে দেয়, বিধিবদ্ধ সমাজব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে এবং সামাজিক বন্ধনকে শিথিল করে দেয়, যা মুসলিম সমাজের জন্য খুবই দুঃখজনক ও আশঙ্কাজনক।
সামান্য মনোমালিন্য থেকে বিচ্ছেদের মতো সিদ্ধান্ত কোনো সমাধান হতে পারে না। অতীব যৌক্তিক কারণ ছাড়া তুচ্ছ বিষয় নিয়ে বিচ্ছেদ কোনোভাবেই কাম্য নয় এবং সমাধানও নয়।
কল্যাণের ধর্ম ইসলামেও ডিভোর্সের প্রতি নানাভাবে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে, একান্ত প্রয়োজন ছাড়া বিয়েবিচ্ছেদের কড়া সমালোচনা করেছে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা: থেকে বর্ণিত- রাসূল সা: বলেন, ‘আল্লাহর কাছে সবচেয়ে অপ্রিয় হালাল হচ্ছে তালাক।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ-২০১৮)
হজরত মুহারিব ইবনে দিছার রা: সূত্রে অন্য এক হাদিসে রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহ তায়ালা তার কাছে তালাকের চেয়ে অপ্রিয় কোনো কিছু হালাল করেননি।’ (সুনানে আবু দাউদ-২১৭৭)
অন্য দিকে যে নারী বিনা কারণে তালাক চায় তার ব্যাপারে হাদিস শরিফে বলা হয়েছে- ‘যে নারী তার স্বামীর কাছে বিনা কারণে তালাক প্রার্থনা করে, তার জন্য জান্নাতের সুঘ্রাণ পর্যন্ত হারাম।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস-২০৫৫) কাজেই নারী-পুরুষ উভয়েরই প্রয়োজন, বিচ্ছেদের ব্যাপারে সতর্ক হওয়া, বিচ্ছেদ থেকে দূরে থাকা। বৈবাহিক সম্পর্ক রক্ষায় দু’জনেই সচেষ্ট থাকা। বিচ্ছেদই একমাত্র সমাধান নয়, ডিভোর্সই ভালো থাকার মাধ্যম নয়, এটি দু’জনের মধ্যেই জাগরূক রাখা। দাম্পত্যজীবনে সামান্য মতের অমিল হতেই পারে। রাগ-অভিমান, মনোমালিন্য থাকতেই পারে। সমস্যা যেমন আছে, উত্তরণেরও তো অনেক উপায় আছে।
এ জন্য সাংসারিক জীবনে সমস্যার সৃষ্টি হলে সর্বপ্রথম তা উদ্ভবের কারণ চিহ্নিত করতে হবে। সম্ভাব্য সব সমাধানের পথে বিচরণ করতে হবে। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিশ্বাসের ভিত গড়ে তুলতে হবে। উভয়কেই ছেড়ে দিতে হবে সন্দেহপ্রবণতা। অগাধ বিশ্বাস ও ভালোবাসার সমুদ্রে নিমজ্জিত হতে হবে দু’জনকেই। একপক্ষ মানিয়ে চলবে আর অন্যপক্ষ উদ্ধত মানসিকতার অধিকারী হলে ‘শান্তি’ ও ‘সুখ’ নামক শব্দ সংসার থেকে বিদায় নেবে। এ জন্য দু’জনেরই ছাড় দেয়ার মনোভাব সৃষ্টি করতে হবে।
শরিয়তের নির্দেশনা হচ্ছে- শেষ পর্যন্ত বৈবাহিক সম্পর্ক রক্ষায় প্রয়াসী হওয়ার। তালাক ও বিয়েবিচ্ছেদের পর্যায়টি হচ্ছে সর্বশেষ পর্যায়, যা একান্ত অনিবার্য প্রয়োজনের স্বার্থেই বৈধ করা হয়েছে। এ জন্য যথাসম্ভব মনোমালিন্য দেখা দিলে নিজেরাই মিটমাট করে নেবে, যদি তা বড় আকার ধারণ করার আশঙ্কা হয় তখন দুই পরিবার আলোচনার মাধ্যমে নিষ্পত্তির চেষ্টা করবে। ইরশাদ হয়েছে- ‘তাদের উভয়ের মধ্যে বিরোধ আশঙ্কা করলে তার (স্বামীর) পরিবার থেকে একজন ও তার (স্ত্রী) পরিবার থেকে একজন সালিস নিযুক্ত করবে। তারা উভয়ে নিষ্পত্তি চাইলে আল্লাহ তাদের মধ্যে মীমাংসার অনুকূল অবস্থা সৃষ্টি করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সবিশেষ অবহিত।’ (সূরা নিসা-৩৫) আয়াতের শেষাংশে বলা হয়েছে- উভয় সালিস স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মীমাংসা করে দেয়ার সদুদ্দেশ্য রাখলে আল্লাহ তায়ালা তাদের নেক নিয়ত ও সঠিক চেষ্টার বদৌলতে বনিবনা করে দেবেন। কাজেই বিয়েবিচ্ছেদের আগে এই কুরআনি শিক্ষা অনুসরণ করা কাম্য।
শুধু স্বামী-স্ত্রী নয়, জীবনে মা-বাবা, ভাইবোন, সহকর্মী, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কতজনেরই তো কত কিছু মেনে নিই আমরা। সংসার জীবনেও দু’পক্ষের জন্যই এই মানিয়ে চলাটা জরুরি। এটি মানতে পারলেই বিবাহিত জীবন সুখের স্বাচ্ছন্দ্যের হবে।
বর্তমান সমাজে অধিকাংশের দাম্পত্য জীবন নিরানন্দ একঘেঁয়ে। প্রকৃত দ্বীনি দাম্পত্য শিক্ষার অভাবে সংসার আজ অপ্রীতি ও নানা মনোমালিনোর কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। আর দাম্পত্য জীবন সুখময় করে তোলার উপায় না জানার কারণে বহু দম্পতি দাম্পত্য জীবনে সুখী হতে পারছে না।
এ জন্য অভিজ্ঞজনদের কিছু নসিহা পেশ করা হচ্ছে। এগুলো মেনে চলতে পারলে দাম্পত্য জীবনকে মধুময় করে তুলতে এবং একজন দায়িত্বশীল ও সফল স্বামীরূপে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে আমরা সক্ষম হবো ইনশা আল্লাহ!
১. স্ত্রীকে উপযুক্ত পরিবেশ দিন : আপনি যদি সদ্য বিবাহিত হয়ে থাকেন তবে এই পয়েন্টটি আপনার জন্য অবশ্য পালনীয় নসিহা! আপনি যদি বালু মাটি হতে একটি চারাগাছকে শেকড় শুদ্ধ তুলে এনে দোআঁশ মাটিতে লাগান তবে স্বভাবতই সে চারাটি বাঁচার সম্ভাবনা কম। তবে দোআঁশ মাটিতে সারভাইভ করায় টিকে থাকার জন্য তাকে যদি প্রয়োজনীয় পুষ্টি সংগ্রহের সুযোগ ও পরিচর্যা দেন তাহলে আশা করা যায় চারাটি বেঁচে থাকলে একসময় বড় হয়ে কাঠ বা ফল দেবে। ঠিক তদ্রƒপ আপনি যখন সম্পূর্ণ ভিন্ন পরিবারে ভিন্ন পরিবেশে ১৮-২০ বছর কাটিয়ে দেয়া একটি মেয়েকে স্ত্রী হিসেবে বরণ করে আপনার বাড়িতে নিয়ে আসবেন, তখন আপনার বাড়ির পরিবেশ, বাড়ির লোকজনের আচরণ ও রুচির সাথে মানিয়ে নেয়ার জন্য তাকে অন্তত ন্যূনতম সময়টা তো দেবেন! যে মেয়েটি আপন মা-বাবা, ভাইবোন, বিছানা, বালিশ ছেড়ে আপনাকে স্বামী হিসেবে বরণ করে নিয়েছে, তাকে আপনি আপনার এমন বন্ধু বানিয়ে নিন, এমন একটি পরিবেশ দিন, যাতে সে বুঝতেই না পারে যে, তাকে আপনি ভিন্ন একটা বাড়িতে এনে তুলেছেন! এখন যদি আপনি তা না করে এমনটি চিন্তা করেন যে, ওয়ালিমার পরপরই আপনার স্ত্রী আপনাদের পরিবারের ছাঁচে নিজেকে গড়ে নিয়ে চলতে শুরু করবে, তবে তা হবে চারা লাগিয়ে শুধু তিনবেলা গোড়ায় পানি ঢেলে সপ্তাহখানেক পরই সে গাছ থেকে ফল আশা করার মতো বোকামি। সুতরাং এমন বোকামি করতে যাবেন না।
২. স্ত্রীর গুণের মূল্যায়ন করুন : বেশির ভাগ পরিবারে স্ত্রীরা সারা দিন হাড়ভাঙা খাটুনির পরও স্বামীর মন পায় না। এমনকি এতকিছু করার পরও সামান্য ত্রুটি চোখে পড়া মাত্রই স্বামী তা কঠিনভাবে ধরে বসে। স্ত্রীর সাথে এমনটি কখনো করবেন না। এটি চরম অন্যায় ও জুলুম। স্ত্রীর ভালো গুণ ও পরিশ্রমের মূল্যায়ন করুন। শুধু খুঁত খোঁজা নয়; বরং তার গুণগুলোর প্রতিও আপনার মনোযোগ ও দৃষ্টি নিবদ্ধ করুন।
৩. স্ত্রীর ছোটখাটো ভুলগুলো এড়িয়ে যান : আপনার জীবনসঙ্গিনীকে কোনো ভুল করতে দেখলে তা সযতেœ এড়িয়ে চলুন। মারাত্মক কোনো ভুল না হলে চেপে যান। নবী করিম সা: তার স্ত্রীদেরকে অপছন্দের কিছু করতে দেখলে চুপ থাকতেন। যদিও খুব কমসংখ্যক স্বামীই এ গুণের অধিকারী হতে পারে। আপনি ব্যতিক্রমদের একজন হয়ে উঠতে পারলে যদি দাম্পত্য শান্তি বজায় থাকে তো ক্ষতি কী!
৪. স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসুন : সে যখনই আপনার সামনে আসবে তখনই তাকে মুচকি হাসি দিয়ে সম্ভাষণ জানান। বেশির ভাগ সাক্ষাতের সময়, আর বিদায়ের সময় নিবিড় আলিঙ্গনে তাকে বেঁধে রাখুন কিছুক্ষণ। ভেবে দেখুন, আপনার স্ত্রী যদি সবসময় আপনাকে হাসি-খুশি দেখে তাহলে আপনার জীবন কেমন সুখময় হবে!
৫. স্ত্রীর কৃতজ্ঞতা আদায় করুন : আপনার জন্য, আপনার সংসারের জন্য, আপনার সন্তানদের জন্য সে যে কাজগুলো করছে বা করেছে সেগুলোর জন্য সরাসরি বিনা শর্তে উদার মনে তার কৃতজ্ঞতা আদায় করুন। যোগ্যতা অনুযায়ী তার মেধা ও মননের স্বীকৃতিও দিন। তার কাজে ভুল পেলে দরদ ভরা মন নিয়ে তাকে শুধরে দিন, তার সমালোচনার পরিবর্তে সংশোধনে সহযোগিতা করার চেষ্টা করুন।
৬. গৃহস্থালিয় কাজে স্ত্রীকে সহযোগিতা করুন : কর্মব্যস্ত থাকা সত্ত্বে¡ও যখনই ঘরে ফিরবেন তখন একটু সময় বের করে চেষ্টা করবেন স্ত্রীর কাজে সহযোগিতা করার। শুধু এটি বোঝানোর জন্য যে, সারা দিন সে পরিবারের জন্য একা একা কতটা ঝক্কি-ঝামেলা পোহায়। বিশেষ করে ছুটির দিনটিতে দু’জনে ঘর গোছানোর কাজ শেয়ার করে নিন।
৭. স্ত্রীর সাথে উত্তম ও ভদ্রোচিত আচরণ করুন : নবী করিম সা: বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে ভালো মানুষ সে, যে নিজের স্ত্রীর সাথে সবচেয়ে ভালো ব্যবহার করে। আমি আমার স্ত্রীদের সাথে সবচেয়ে ভালো ব্যবহার করি।’ সবসময় মনে রাখবেন, স্ত্রীর সাথে যা-ই করছেন মৃত্যুপরবর্তী জীবনে মহান আল্লাহর কাছে তার জবাবদিহি করতে হবে। সুতরাং স্ত্রীকে নিজের ভালো একজন বন্ধু ভাবতে শিখুন।
৮. একান্ত ব্যক্তিগত সম্পর্কের সময় স্ত্রীর ইচ্ছাকেও প্রাধান্য দিন : দাম্পত্য জীবনে মানসিক ও শারীরিক প্রশান্তির জন্য সুস্থ ও স্বাভাবিক যৌন সম্পর্কের বিকল্প নেই। তবে তা যেন একতরফা না হয়। নিজের তৃপ্তির পাশাপাশি তার তৃপ্তিকেও গুরুত্ব দিন। একান্ত সম্পর্ক স্থাপনে আপনার ইচ্ছের পাশাপাশি স্ত্রীর ইচ্ছা ও আগ্রহকে অবশ্যই বিবেচনায় রাখবেন। তার মন ও শরীর সায় না দিলে ধৈর্যধারণ করবেন। কখনোই পশু-পাখি বা ক্রীতদাসীর মতো তাকে একতরফা ব্যবহারের চেষ্টা করবেন না। মনে রাখবেন, অধিকাংশ বিয়েবিচ্ছেদের মূল কারণ হচ্ছে যৌনজীবনে অতৃপ্তি।
৯. স্ত্রীর জন্য সামর্থ্যানুযায়ী ভরণপোষণের ব্যবস্থা করুন : খরচ করার ব্যাপারে কিপটেমি করা যাবে না। ইসলামে তো ডিভোর্স দেয়ার সময়েও নারীকে গিফট দেয়ার কথা বলা হয়েছে। কাজেই, স্বাভাবিক সময় যে মাঝে মধ্যে গিফট দিয়ে তাকে সারপ্রাইজড করবেন তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তার হাত শূন্য না রেখে সাধারণ ও জরুরি প্রয়োজন মেটানোর জন্য কিছু অর্থ সবসময় তার হাতে দিয়ে রাখবেন।
১০. জীবনসঙ্গিনীর জন্য সুন্দর একটি নাম নির্বাচন করুন : আপনার জীবনসঙ্গিনীকে ডাকার জন্য খুব সুন্দর একটি উপনাম নির্বাচন করুন। কখনো তাকে কোনো বাজে নামে বা মন্দ শব্দে ডাকবেন না। আল্লাহর নবী সা: তাঁর স্ত্রীদেরকে এমন নামে ডাকতেন, যে নামে ডাকাটা তাঁরা খুবই পছন্দ করতেন। তাই ভালোবাসার মানুষটির জন্য তার মনের মতো একটি সুন্দর নাম নির্বাচন করুন। যে নাম ধরে ডাকলেই খুশিতে তার মন ভরে উঠবে।
শিক্ষার্থী : উচ্চতর গবেষণা বিভাগ, শায়েখ জাকারিয়া ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, ঢাকা




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com