নীলফামারীর ছয় উপজেলার ১০৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নেই স্থায়ী ভবন। অস্থায়ীভাবে টিনের ঘর তৈরি করে জোড়াতালি দিয়ে চলছে পাঠদান। এতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বিপাকে পড়েছে। ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের মনিটরিং কর্মকর্তা মো. হাসান তারিক জানান, জেলায় ১০৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোনোটি পরিত্যক্ত, আবার কালবৈশাখী ঝড়ে কোনোটির টিনের চাল উড়ে গেছে। কোনও রকমে টিনের অস্থায়ী ঘর তৈরি করে পড়ালেখা চালিয়ে নিচ্ছেন শিক্ষকরা। লেখাপড়ার মান ভালো রাখতে বাধ্য হয়ে শিশুরাও পড়তে আসে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিদ্যালয়গুলোতে ভবন না থাকায় প্রচ- গরমে শিক্ষার্থীরা ক্লাস করছে টিনের ঘরে। এ ছাড়া বর্ষার সময় বৃষ্টিতে বইখাতা ভিজে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। এই গরমে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা প্রায় অসুস্থ হয়ে পড়ছে।
সদরের চড়াইখোলা ইউনিয়নের দারোয়ানী মেলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বাঁশঝাড়ের পাশে ছোট টিনের ঘরে শিক্ষার্থীরা ক্লাস করছে। শিক্ষকদের বসার জন্য অফিস ঘর নেই। টিনের ঘরের এক কোণে দাফতরিক কাজ চলছে। একই অবস্থা জলঢাকা উপজেলার হলদিবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েরও। বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী রবিউল ইসলাম সানি জানায়, ‘কোনও ক্লাসরুম নেই, বসার জায়গা নেই। আমরা অনেক কষ্টে গরমের মধ্যে পড়ালেখা করি। আর বৃষ্টির সময় বইখাতা ভিজে যায়।’ ওই বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী আব্দুল আলীম বলেন, ‘বিদ্যালয়ে জরুরিভাবে ভবন দরকার। শ্রেণিকক্ষ না থাকায় ভালোভাবে লেখাপড়া করতে পারছি না। স্যারদের বারবার বলি, কিছুই হয় না।’
একই এলাকার অভিভাবক আব্দুল কাদের বলেন, ‘বিদ্যালয়ে পরিবেশ না থাকলে শিশুরা কীভাবে পড়াশোনা করবে? ক্লাসরুম না থাকায় শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় মনোযোগ কম। এই গরমে টিনের ঘরে তারা ক্লাস করছে। এটা কোনও অভিভাবক মেনে নিতে পারে না।’
হলদিবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিক সাবিনা সুলতানা বলেন, ‘এই বিদ্যালয়ে পড়াশোনার মান অনেক ভালো। তবে অবকাঠামো না থাকায় শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিপাকে আছি। এখানে ছয় জন শিক্ষক রয়েছেন। বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ হয় ২০১৩ সালে। শিক্ষার্থী রয়েছে প্রায় ১০০ জন। তবে তারা ক্লাস করে টিনের একটি ঘরে।’
ডিমলা উপজেলার নাউতারা ইউনিয়নের নাউতারা গ্রামের কৈ-পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েরও বেহাল দশা। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আফরোজা সুলতানা জানান, ১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বিদ্যালয়টি। আর চার শ্রেণিকক্ষের একটি ভবন নির্মিত হয় ১৯৯৩ সালে। সাত মাস আগে উপজেলা প্রকৌশল অধিদফতর ভবনটি জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় পরিত্যক্ত ঘোষণা করে। বিদ্যালয় ভবনের তিনটি শ্রেণিকক্ষে ক্লাস না হলেও শিক্ষকরা পরিত্যক্ত ভবনের অফিস কক্ষে ঝুঁকি নিয়ে দাফতরিক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আফরোজা সুলতানা অভিযোগ করে বলেন, ‘ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণার পর অনেক কষ্ট করে ১৫০ জন শিক্ষার্থীর পাঠদান কোনও রকমে চালিয়ে আসছি। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পোহাতে হচ্ছে সীমাহীন দুর্ভোগ। বিদ্যালয় ভবন নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিকবার আবেদন করা হয়েছে। কিন্ত কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। বাধ্য হয়ে টিনের ঘরে পাঠদান করতে হচ্ছে।’ এ ব্যাপারে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নবেজ উদ্দিন সরকার বলেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ ভবনসহ জেলায় এ রকম ১০৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। বিদ্যালয়গুলোতে জরুরি ভিত্তিতে অবকাঠামো নির্মাণ প্রয়োজন। প্রতিটি উপজেলায় বিদ্যালয় কমিটি রয়েছে। তারা যেগুলো মেরামতের দরকার সেগুলো মেরামতের ব্যবস্থা করবেন। যেগুলোর ভবন দরকার সেগুলোর ব্যবস্থা করার জন্য মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে। আশা করি, ধারাবাহিক প্রক্রিয়া শেষ হলে চলতি বছরেই বাজেট বরাদ্দ আসবে।’