সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় ট্রাক-পিকআপ ভ্যানের সংঘর্ষে নিহত বেড়ে ১৫ জনে দাঁড়িয়েছে। বুধবার (৭ জুন) ভোর সাড়ে ৫টার দিকে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের দক্ষিণ সুরমার নাজিরবাজার এলাকার কুতুবপুরে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার ভাটিপাড়া গ্রামের হারিছ মিয়া (৫০), সৌরভ (২৫), সাধু মিয়া (৪০), তায়েফ নুর (৪৫), সাগর (১৮), রশিদ মিয়া (৪০), দুলাল মিয়া (৫৫), বাদশা মিয়া (৪৫) ও সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার ওয়াহিদ আলী (৪০)। অন্যদের পরিচয় এখনও জানা যায়নি। সিলেটের দক্ষিণ সুরমা থানার ওসি শামসুদ্দোহা জানান, সিলেট মহানগর থেকে পিকআপে করে প্রায় ৩০ জন নারী-পুরুষ নির্মাণশ্রমিক জেলার ওসমানীনগর উপজেলার গোয়ালাবাজার যাচ্ছিলেন। ভোর সাড়ে ৫টার দিকে দক্ষিণ সুরমার নাজিরবাজার এলাকার কুতুবপুর নামক স্থানে পৌঁছালে মুনশীগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা সিলেটগামী বালুবাহী ট্রাকের সঙ্গে শ্রমিক বহনকারী পিকআপের সংঘর্ষ হয়। ঘটনাস্থলেই মারা যান ১১ জন। আহতদের এম এ জি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। ওসমানী হাসপাতাল ফাঁড়ি ইনচার্জ জুয়েল আহমদ জানান, হাসপাতালে মারা গেছেন আরও তিন জন। সব মিলিয়ে ১৪ জন মারা গেছেন। নিহতদের লাশ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।
ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ হস্তান্তর শুরু: সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় পিকআপ ও ট্রাকের সংঘর্ষে নিহত ১৪ জনের মৃতদেহ ময়নাতদন্ত ছাড়াই হস্তান্তর করা শুরু হয়েছে। জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইমরুল হাসানের তত্ত্বাবধানে বুধবার (৭ জুন) বেলা ২টা থেকে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গ থেকে নিহতদের পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়। এর আগে বুধবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে দক্ষিণ সুরমার নাজিরবাজার এলাকার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এতে ঘটনাস্থলে নিহত হন ১১ জন ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় আরও তিন জনের। নিহতদের মধ্যে ১২ শ্রমিকই সুনামগঞ্জের বাসিন্দা। এ ছাড়া রয়েছেন হবিগঞ্জের এক নারী ও নেত্রকোনার একজন। এই ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ১১ জন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেন সিলেট জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইমরুল হাসান। তিনি বলেন, ‘মরদেহগুলো ময়নাতদন্ত ছাড়াই নিহতদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। একই সঙ্গে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতদের ২০ হাজার ও আহতদেরকে ১০ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়া হবে।’
নিহতরা হলেন- সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার গছিয়া গ্রামের মো. সিজিল মিয়া (৫৫), পাতাইয়া কাইমা গ্রামের মৃত ছলিম উদ্দিনের ছেলে একলিম মিয়া (৫৫), আলীনগর গ্রামের মৃত শিশু মিয়ার ছেলে হারিছ মিয়া (৬৫), ভাটিপাড়া গ্রামের সিরাজ মিয়ার ছেলে সৌরভ মিয়া (২৭), ভাটিপাড়া গ্রামের মৃত মফিজ মিয়ার ছেলে সায়েদ নূর (৫০), একই গ্রামের শাহজাহান মিয়ার ছিলে বাদশা (২২), ভাটিপাড়া গ্রামের মৃত সজিব আলীর ছেলে রশিদ মিয়া (৫০), একই গ্রামের শমসের নূরের ছেলে মেহের (২৫) ও মধুপুর গ্রামের সোনা মিয়ার ছেলে দুদু মিয়া (৪০)।
এ ছাড়া সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার বাবনগাঁও গ্রামের শাহীন মিয়া (৪০), একই উপজেলার তলের পতন গ্রামের মৃত আমান উল্যাহ ছেলে আওলাদ হোসেন (৫০), মুরাদপুর গ্রামের মৃত হারুন মিয়ার ছেলে দুলাল মিয়া (২৬), হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের হলদিপাড়া গ্রামের আব্দুর রহিমের স্ত্রী আমিনা বেগম (৪৫) এবং নেত্রকোনার বারহাট্টা থানাধীন দশদার গ্রামের ইসলাম উদ্দিনের ছেলে আওলাদ মিয়া (৪০) মারা গেছেন।
সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মাসুদ রানা বলেন, ‘মরদেহগুলো ময়নাতদন্ত ছাড়াই নিহতদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হচ্ছে। নিহতরা সবাই নির্মাণ শ্রমিক। তারা পিকআপে যন্ত্রপাতি নিয়ে ভোরে ওসমানীনগরে ঢালাইয়ের কাজে যাচ্ছিলেন।’