সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৫৩ অপরাহ্ন

‘চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক কেনা-বেচা যাবে না’

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় রবিবার, ১১ জুন, ২০২৩

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহারের ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে সেমিনারে বক্তারা বলেন, মৎস্য, পশু ও পোল্ট্রি সামগ্রী খেয়ে মানুষের শরীর সহজেই অ্যন্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে উঠছে। সঠিক মাত্রায় নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ব্যবহার না করার কারণে অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিত কমে যাচ্ছে। আইসিইউতে চিকিৎসা নেওয়া রোগীদের অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল রেজিস্টেন্স ৫২ শতাংশ কমছে। গতকাল রোববার (১১ জুন) সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) এ ব্লক অডিটোরিয়ামে ‘অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল স্টুওয়ার্ডশিপ’ শীর্ষক মাসিক সেন্ট্রাল সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। বিএসএমএমইউ’র সেন্ট্রাল সাব কমিটি এই সেমিনারের আয়োজন করে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, আশঙ্কার বিষয় হলো বর্তমানে রোগীদের শরীরে আইসিইউতে রাখা রিজার্ভ অ্যান্টিবায়োটিক যেমন মেরোপেনাম কাজ করছে না। সেজন্য অবশ্যই আমাদেরকে অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার রোধ করতে হবে এবং এ ব্যাপারে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। এটা করতে না পারলে, ২০৫০ সাল নাগাদ মানুষের শরীর অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হওয়ার ফলে করোনার চাইতে দ্বিগুণ সংখ্যক মানুষ মারা যাবে। তাই রেজিস্ট্রার চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কেউ যাতে অ্যান্টিবায়োটিক ক্রয়-বিক্রয় করতে না পারে সেটা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। ফার্মাকোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. জাহিদুল ইসলাম উপস্থাপিত ‘অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল স্টুওয়ার্ডশিপ প্রোগ্রামস ফর ইনফেকশন কন্ট্রোল ইন এ টার্শিয়ারি কেয়ার হসপিটাল’ প্রবন্ধে বলেন, বিএসএমএমইউ আইসিইউতে চিকিৎসা নেওয়া রোগীদের মাঝে সর্বোচ্চ শতকরা ৫২ শতাংশ রোগীদের অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল রেজিস্টেন্স পাওয়া গেছে। হৃদরোগ, কিডনি, শিশু ও নবজাতক বিভাগের রোগীদের মাঝে এই হার ছিল ২১. ৫ শতাংশ। বর্তমানে বিশ্বে বছরে অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল রেজিস্টেন্স ভোগা রোগীদের মৃত্যুর হার ৭ লাখ। ২০৫০ সাল নাগাদ এই মৃত্যু হার বৃদ্ধি ১ কোটিতে পৌঁছাবে বলে আশঙ্কা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল রেজিস্টেন্স প্রতিরোধ শুধুমাত্র চিকিৎসকদের একার পক্ষে সম্ভব নয়, কারণ পোল্ট্রি শিল্পে উৎপাদিত খাদ্য সামগ্রীতে বিশেষ করে মুরগির মাংসে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্স ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত ৫৫ শতাংশ। মৎস্য, পশু ও পোল্ট্রি শিল্পে ১৯ ধরনের অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার করা হচ্ছে। কৃষি খাতও এর আশঙ্কার আওতামুক্ত নয়।
তিনি বলেন, এসব খাবার খেয়ে মানুষের শরীর সহজেই অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে উঠছে। ফলে অ্যান্টিবায়োটিক সেবনে রোগ নিরাময় তো হচ্ছে না বরং রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হচ্ছে। একইসঙ্গে সমগ্র বিশ্বে রোগীদের স্বাস্থ্য খাতে বছরে প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলার অতিরিক্ত ব্যয় হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার আশঙ্কা ২০৫০ সাল নাগাদ এই ব্যয় ১০০ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে।
তিনি বলেন, অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল রেজিটেন্সের মতো বৈশ্বিক সমস্যা বিশ্ব নেতাদের সমন্বিত, সুপরিকল্পিত, বাস্তবসম্মত ও সময়োপযোগী উদ্যোগের মাধ্যমে এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব। অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল রেজিটেন্স থেকে মুক্তির লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ব নেতাদের সাথে উপস্থিতিতে যে ‘ওয়ান হেলথ সলিউশন’ প্রবর্তনের উদ্যোগ নিয়েছেন, তার সফল বাস্তবায়ন জরুরি। একই সাথে এই বিষয়ে গণসচেতনতা বৃদ্ধিও জরুরি। সেমিনারে মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শাহেদা আনোয়ার অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল স্টুওয়ার্ডশিপ কমিটির কাঠামো ও মাইক্রোবায়োলজির ভূমিকা নিয়ে আলোকপাত করেন। তিনি বলেন, পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোর হাসপাতালসমূহে অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল স্টুওয়ার্ডশিপ প্রোগ্রাম চালু হয়েছে। বিএসএমএমইউতেও এই প্রোগামটি অতিদ্রুত চালু করা প্রয়োজন। এটি সফলভাবে চালু করতে পারলে হাসপাতালে রোগী মৃত্যুর হার, রোগীর হাসপাতালে অবস্থানের সময়কাল কমানো সম্ভব হবে এবং অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে উঠার প্রবণতা কমানো সম্ভব হবে। এজন্য দরকার রোগের জীবাণু শনাক্ত এবং অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যক্ষমতা নির্ণয় করে সঠিক অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করা।
এজন্য তিনি মাইক্রোবায়োলজিস্ট, ক্লিনিক্যাল চিকিৎসবক, হাসপাতাল প্রশাসন, নার্সসহ সংশ্লিষ্টদের সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণের আহ্বান জানান। অ্যান্টিবায়োটিকের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত অবশ্যই করতে হবে। কারণ নিকট ভবিষতে বাজারে আর নতুন কোন অ্যান্টিবায়োটিক আসবে না।
ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল হাসান ‘রেশনাল ইউজ অব অ্যান্টিবায়োটিকস: ক্লিনিশিয়ান্স রোল ইন অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল স্টুওয়ার্ডশিপ’ শীর্ষক প্রবন্ধে অপ্রয়োজনে আন্টিবায়োটিক ব্যবহার না করার ওপর অতি গুরুত্ব আরোপ করেন।
তিনি বলেন, সঠিক ওষুধ, সঠিক মাত্রায় এবং নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ব্যবহার না করার কারণে অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিত কমে যাচ্ছে। তাই এর সঠিক ব্যবহার নিশ্চিতকল্পে যত দ্রুত সম্ভব নীতিমালার বাস্তবায়ন জরুরি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালাটি অনুসরণেরও পরামর্শ দেন। এছাড়াও পশুপালন ও কৃষি ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার নিমন্ত্রণের ওপর জোর দেন।
সেমিনারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ডা. একেএম মোশাররফ হোসেন, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. ছয়েফ উদ্দিন আহমদ, বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যান, শিক্ষক, কনসালটেন্ট, চিকিৎসক ও রেসিডেন্টরা উপস্থিত ছিলেন। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় সেন্ট্রাল সাব কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. বেলায়েত হোসেন সিদ্দিকী। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন মনোরোগবিদ্যা বিভাগরে সহকারী অধ্যাপক ডা. ফাতিমা জোহরা।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com