মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৩৮ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
ভোলার বিভিন্ন চরাঞ্চল অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত লালমোহনে ডা. আজাহার উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের সভাপতিকে সংবর্ধনা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহিদ ও আহতদের স্মরণে স্মরণসভা সিংড়ায় পরিবেশ রক্ষার্থে ৫৩৬টি ডাস্টবিন বিতরণ কাজী আজিম উদ্দিন কলেজে শিক্ষার্থীদের সাথে ছাত্রদলের ৩১ দফা নিয়ে মতবিনিময় সভা পটুয়াখালীতে শিক্ষক দম্পতি হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদঘাটনের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন টুঙ্গিপাড়ায় ভিক্ষুক ও হতদরিদ্রদের আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করলো সমাজসেবা অফিস জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের আওতায় এনে সহায়ক কর্মচারী অন্তর্ভুক্ত ও বিচার বিভাগের আলাদা সচিবালয় গঠনের নিমিত্তে দাবি পেশ দাউদকান্দিতে সড়কের মাটি ধসে পড়ল খালে, দুর্ঘটনার আশংকা সীতাকুন্ডে বিতর্কিত মাদ্রাসা পরিচালকের করা মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে মানববন্ধন

ইসলামে কনে দেখা

মুফতি পিয়ার মাহমুদ
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১৩ জুন, ২০২৩

বিয়েশাদির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হলো পাত্র-পাত্রী নির্বাচন। দাম্পত্যজীবনের পরিধি যেমন অত্যন্ত ব্যাপক ও বিস্তৃত এর সমস্যাও তেমন খুব বিস্তৃত, জটিল ও স্পর্শকাতর। এ জন্য বিয়ের আগেই পাত্র-পাত্রী দেখে সব দিক গভীরভাবে তলিয়ে দেখা জরুরি। যেন পরবর্তী সময়ে এ-সংক্রান্ত কোনো সমস্য দাম্পত্যজীবনকে দুর্বিষহ করে না তোলে। এ জন্য ইসলাম এর প্রতি যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েছে। আবু হুরায়রা রা:-এর বর্ণনায় এসেছে- এক ব্যক্তি মহানবী সা:-এর কাছে এসে বলল, আমি একজন আনসারি রমণীকে বিয়ে করতে চাচ্ছি। এ কথা শুনে মহানবী সা: বললেন, ‘মেয়েটিকে দেখে নাও। কেননা, আনসারিদের চোখে আবার সমস্যা থাকে।’ (মুসলিম-১৪২৪)
অন্য এক হাদিসে সাহাবি হজরত জাবির রা: বর্ণনা করেন- রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেছেন, ‘তোমাদের কেউ যদি কোনো নারীকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়, তার জন্য যদি বিয়ের প্রতি উদ্বুদ্ধকারী অঙ্গগুলো দেখার সুযোগ হয়, তাহলে সে যেন সে অঙ্গগুলো দেখে নেয়।’ (আবু দাউদ-১/২৮৪, হাদিস-২০৮২) অন্য বর্ণনায় আছে, হজরত মুগিরা বিন শোবা রা: বলেন, ‘আমি এক নারীকে বিয়ের প্রস্তাব দিলাম। এটি শুনে রাসূলুল্লাহ সা: আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি কি তাকে দেখেছ?’ আমি বললাম না, দেখিনি। তখন তিনি নির্দেশ দিলেন যে, ‘তুমি তাকে দেখে নাও। তোমার এই দর্শন তোমাদের মধ্যে দাম্পত্যজীবনে প্রণয়-ভালোবাসা গভীর হওয়ার বড় সহায়ক হবে।’ (তিরমিজি-১/২০৭, হাদিস-১০৮৭ )
উপরোক্ত হাদিসগুলোর ভাষ্য এক ও অভিন্ন। সেটি হচ্ছে, বিয়ের আগে বরের কনেকে দেখা নেয়া। তো মেয়ে দেখার শরিয়তসম্মত নিয়ম হলো- দ্বীনদারিকে প্রাধান্য দিয়ে আনুষঙ্গিক সব বিষয় প্রথমে দেখে নেবে। মনঃপুত হলে বিয়ের ইরাদা নিয়ে যথাসম্ভব গোপনীয়তা রক্ষা করে মেয়ের মুখ ও উভয় হাত দেখে নেবে। বর ছাড়া অন্য কোনো পুরুষের জন্য কনে দেখা শরিয়তে নিষিদ্ধ। চাই সে বরের পিতা বা অন্য ঘনিষ্ঠ আত্মীয় হোক না কেন। তাদের কেউ বরের পক্ষ হয়ে কনে দেখলে কবিরা গুনাহ হবে। সুতরাং আমাদের দেশে বাবা, ভাই, বন্ধু-বান্ধব মিলে ঘটা করে মেয়ে দেখার যে প্রচলন চালু আছে তা শরিয়াতের দৃষ্টিতে নাজায়েজ ও হারাম। পুরুষ সদস্য বাদ দিয়ে শুধু নারী সদস্য নিয়েও ঘটা করে মেয়ে দেখা শরিয়তসম্মত নয়। কেননা এভাবে ঘটা করে কনে দেখার পর যদি কোনো কারণবশত বিয়ে না হয় তাহলে এটি ওই মেয়ে পক্ষের জন্য রীতিমতো বিপদ হয়ে দাঁড়ায়। পরবর্তী সময়ে অন্যরা মেয়ের ব্যাপারে নানা রকম সন্দেহের মধ্যে পড়ে। ফলে এই মেয়ের বিয়ে দেয়া কঠিন কাজ হয়ে দাঁড়ায়। আর কোনো মানুষকে এভাবে বিপদে ফেলা ইসলাম সম্পূর্ণরূপে নিষেধ করেছে। (বুখারি-২/৭৬৮; মুসলিম-১/৪৫৬; আবু দাউদ-১/২৮৪; তিরমিজি-১/২০৭; ফাতওয়া মাহমুদিয়া-৩/২১২)।
কনে দেখার ক্ষেত্রে কেবল কনের হাত ও মুখই দেখা যেতে পারে। অবশ্য কাপড়ের উপর দিয়ে যদি শরীরের সামগ্রিক অবয়ব দেখে নেয়া হয়, তাহলে কোনো অসুবিধা নেই। কেবল বিয়ে করার উদ্দেশ্যে কনে দেখতে পারবে। এ ছাড়া নয়। আর যদি মেয়েরা কনে দেখে তাহলে প্রয়োজনে শরিয়তের সাধারণ রীতি অনুযায়ী নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত স্থানটুকু বাদ দিয়ে অবশিষ্ট পূর্ণ শরীর দেখতে পারবে। (টীকা : আবু দাউদ-২/২৮৪) এ জন্যই কোনো অঙ্গ সম্পর্কে সন্দেহ দেখা দিলে নির্ভরযোগ্য কোনো নারীর মাধ্যমে তা যাচাই করে নিতে পারবে।
পাত্রী দেখার জন্য পাত্রীর অভিভাবকদের পূর্বানুমতি জরুরি নয়। কোনোরূপ ঘোষণা ছাড়া কনে কিংবা কনের অভিভাবকদের অলক্ষ্যে যদি দেখে নেয় তাতেও অসুবিধা নেই; বরং বিভিন্ন রেওয়াত ও নীতিমালার আলোকে মনে হয় অঘোষিত ও গোপনীয়তভাবে দেখাটাই অধিক সঙ্গত। যেমন সাহাবি জাবের রা:-এর বর্ণনায় এসেছে- ‘আমি একটি মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়ার পর তাকে লুকিয়ে দেখে নিই।’ (আবু দাউদ-১/২৮৪, হাদিস-২০৮২) এটি হলো কনে দেখার ইসলামের সোনালি দর্শন, যা অত্যন্ত ভারসাম্যপূর্ণ। এতে না আছে বাড়াবাড়ি, না আছে ছাড়াছাড়ি। এই দর্শন ও নীতিমালা মেনে কনে দেখলে মেয়েপক্ষও আপৎমুক্ত থাকল আবার ছেলেপক্ষেরও কনে দেখার ঝক্কি-ঝামেলা পোহাতে হলো না। পক্ষান্তরে পশ্চিমা সভ্যতা এ ক্ষেত্রে করেছে মাত্রাতিরিক্ত বাড়াবাড়ি। তুলেছে এক নষ্ট স্লোগান। এ ব্যাপারে তাদের বক্তব্য হলো- বিয়ের আগেই ছেলে-মেয়ে এক ছাদের নিচে এক সাথে দীর্ঘ সময় কাটাতে হবে। একে অপরের সাথে হৃদ্যতাপূর্ণ ও ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। এভাবে সহাবস্থান ও ঘনিষ্ঠতার ভেতর দিয়ে একে অপরকে জানবে-বুঝবে। এরপর নেবে বিয়ের সিদ্ধান্ত। এতে ফল যা হওয়ার তাই হয়েছে। ইসলাম পশ্চিমা নষ্ট সভ্যতার এই নির্লজ্জ ও জঘন্য চিন্তাকে নিষিদ্ধ করেছে কঠোরভাবে এবং বলেছে- এটি জঘন্যতম অপরাধ। (সূরা নূর-২; বুখারি-২/১০০৬-১০০৯; মুসলিম-২/৬৫; তিরমিজি-১/২৬৪-২৬৫)
পক্ষান্তরে উপমহাদেশীয় কালচার অনেকটা এমন- কনে দেখবে ছেলের অভিভাবকরা। ছেলে কনেকে দেখলে দোষের মনে করা হয়। এই চিন্তাও ভুল। কারণ কনে দেখা সংক্রান্ত হাদিসগুলোতে বরকেই কনে দেখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সেখানে অভিভাবকদের সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। তা ছাড়া বর কনেকে না দেখে শুধু অভিভাবরা দেখে বিয়ে সম্পাদন করলে বরের কনেকে পছন্দ না-ও হতে পারে। এ নিয়ে পরবর্তী সময়ে দাম্পত্যজীবনে সৃষ্টি হয় অশান্তি, যার নজির আমাদের সমাজে নেহাত কমও নয়। তাই বর কনেকে দেখা নেয়াটাই অধিক সঙ্গত ও নিরাপদ। লেখক : ইমাম ও খতিব, মসজিদুল আমান, গাঙ্গিনারপাড়, ময়মনসিংহ




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com