দেশে প্রথমবারের মতো বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে সরকার। বিদ্যুৎ ঘাটতি হ্রাস ও বর্জ্যকে সম্পদে পরিণত করার চিন্তা থেকে এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আগামী ২০ জুলাই আমিনবাজার ল্যান্ডফিলে দেশের প্রথম বর্জ্য বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) এসব তথ্য জানান স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আমিনবাজার ল্যান্ডফিলের বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি গ্রহণ বিষয়ক এক সভায় সভাপতিত্বকালে এ কথা বলেন তিনি। সভার আরও উপস্থিত ছিলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মুহম্মদ ইবরাহিম এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ও স্থানীয় সরকার বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
দিনে ৪২ দশমিক ৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ: তাজুল ইসলাম জানান, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি), স্থানীয় সরকার বিভাগ ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড যৌথভাবে এ বিষয়ে কাজ করছে। ইনসিনারেশন ব্যবস্থা অনুসরণে বিদ্যুৎ উৎপাদনের মাধ্যমে বর্জ্য নিষ্পত্তির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যাতে পরিবেশ সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন থাকে। ঢাকার আমিনবাজার ল্যান্ডফিলে এই বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্লান্ট নির্মাণ করা হবে। প্রতিদিন ৩০০০ টন মিক্সড বর্জ্য থেকে ৪২ দশমিক ৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। স্পন্সর হিসেবে চায়না মেশিনারি ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন বিদ্যুৎ উৎপাদনের এ ইনসিনারেশন প্লান্টে যুক্ত থাকবে। এই প্রকল্প আগামী ২৪ মাসের মধ্যে বাস্তবায়িত হবে। উৎপাদিত বিদ্যুৎ বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড ২৫ বছর পর্যন্ত কিনে নেবে। মন্ত্রী জানান, এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০০ মিলিয়ন ইউএস ডলার।
তিনি আরও জানান, এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ডিএনসিসি ৩০ একর জায়গা দিয়েছে। সেখানে দৈনিক ৩ হাজার টন বর্জ্য সরবরাহ করা হবে। বর্জ্য সরবরাহ করতে হবে বিনামূল্যে। উৎপাদিত ৪২ দশমিক ৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পিডিবি চুক্তি মূল্য অনুযায়ী কিনে নেবে। এই বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে গিয়ে পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে না। উৎপাদনে ডিজেলের চাইতেও খরচ কম হবে। ২০২৫ সালের অক্টোবর থেকে উৎপাদনে যেতে পারবো বলে আশা রাখি। অন্যান্য সিটি করপোরেশনেও একই প্রক্রিয়া চলমান।
বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ বাংলাদেশের জন্য সম্পূর্ণ নতুন ধারণা ও অভিজ্ঞতা উল্লেখ করে তিনি জানান, টেকসই উন্নয়নের জন্য এ ধরনের প্রকল্পের কোনও বিকল্প নেই। এ প্রকল্পের মাধ্যমে যেমন আমাদের বর্জ্য নিষ্পত্তি হবে তেমনি বিদ্যুতের মতো অতি প্রয়োজনীয় শক্তিও আমরা উৎপাদন করতে পারবো যা আমাদের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদার কিছুটা সংকুলান হবে। এ সময় স্থানীয় সরকার মন্ত্রী জানান, ২০২৫ সালের অক্টোবর মাস থেকে এ প্রকল্প থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
৩ হাজার টাকা করে জরিমানা: ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম জানান, প্রতিদিন ৩ হাজার টন বর্জ্য ল্যান্ডফিলে পৌঁছে দিতে না পারলে উৎপাদকদের ৩ হাজার টাকা করে জরিমানা দেবে ডিএনসিসি। তেমনিভাবে তারা প্রতিদিন সাড়ে ৪২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে না পারলে ডিএনসিসি তাদের থেকে প্রতিদিন ৩ হাজার টাকা জরিমানা হিসেবে পাবে। বর্তমানে প্রতিদিন ডিএনসিসি এলাকায় সাড়ে ৩ হাজার টন বর্জ্য উৎপাদিত হয়।
বিদ্যুৎ পরিস্থিতি ভালো হবে: দাম কিছুটা বেশি হলেও ভর্তুকি দিয়ে বিদ্যুৎ বিভাগ তা কিনে নেবে বলে জানান বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। তিনি জানান, এই বিদ্যুৎ পরিবেশবান্ধব। এর দাম প্রতি ইউনিট ২১ টাকার বেশি পড়বে। নসরুল হামিদ বলেন, কিছুদিনের জন্য বিদ্যুৎ বিভ্রাট হলেও সেটা সামাল দেওয়া গেছে। সামনে আরও ভালো হবে পরিস্থিতি।
তিনি বলেন, পরিবেশবাদীরা অনেক কিছুই বলে। কয়লার মাধ্যমে উৎপাদন তো বন্ধই আছে। এখন উনারা কী বলবে? পরিবেশবাদীদের উচিত আমাকে ধন্যবাদ দেওয়া। কয়লার উৎপাদন বন্ধ রেখে দেখছি কী হয়। তারা বলতো কয়লার মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করলে সুন্দরবনসহ অনেক কিছু ধ্বংস হয়ে যাবে।