শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ০৬:১৩ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
চিতলমারীতে জমি সংক্রান্ত বিরোধে প্রাণ নাশের হুমকি : থানায় জিডি গজারিয়ায় মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে চমক দেখালেন মীনা খাগড়াছড়িতে শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান আজিজ উদ্দিন বগুড়া ও জয়পুরহাটে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে যারা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন জামালপুর সদর উপজেলা পরিষদে বিজন কুমার চন্দরকে বিজয়ী ঘোষণা ডিমলায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন মেলান্দহে দুগ্ধ সমবায় প্রকল্পের সদস্যদের মাঝে ঋণের চেক বিতরণ গলাচিপায় জেলেদের মাঝে বকনা বাছুর বিতরণ তারাকান্দায় অগ্নিকা-ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে বিএনপির ত্রাণ নুরে আলম সিদ্দিকী শাহীন নাজিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত

অপরাহ্নের গল্প

মুহাম্মদ শামীম রেজা
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১৬ জুন, ২০২৩

আমি গাঁও গেরামের মানুষ। পরানের গহীনে যদ্দূর জাগা আছে হেনে খালি গেরাম আর গেরাম। শহুর আমার একদতম ভাল্লাগেনা। কিন্তু আমার কি পোড়া কফাল! আমার শহুরই থাহন লাগে। সারাদিন একলা ঘরে পইরা থাহি। ফুতের বউ হের মতো থাহে। হেই সহালে নাতিরে লইয়া ইসকুলে যায় ফিরে দুফুরে। আমার ফুত যায়গা অফিসে । এই সময়ডা আমি থাহি একলা ঘরে। সময় কাডে না। গেরামে থাকলে মুতির মা,শফিকের মার লগে গফসফ করন যাইতো। এইহানে তো কেউরে চিনিনা। কেউ ইচ্ছা কইরা আইয়েনা। এইতার লাইগ্যা শহুইরা মানুষ আমার অক্করে ভাল্লাগেনা। মানুষে-মানুষে যে মায়া মোহাব্বত থাহা দরহার হেরার মধ্যে এইতা নাইগা। এইডারে জীবন কয়নি? অই যে কইছলামনা আমি পোড়া কফাইল্লা! আমার আল্লার মাল দুইডা ফুত। দুইডাই শহুরে থাহে। গেরামে আপনজন বলতে কেউ নাই। এর লাইাগ্যা ঠেইক্যা অইয়া শহুরে থাহুন লাগে। কিতা আর করাম! শহুরে থাহি। মন-অ অয় জেলের ভিতরে থাহি নাইলে পক্ষির পিঞ্জিরার ভিতরে থাহি। কিতা অর করাম? নাতি কিবা ফুতাইন ছাড়া থাকতে ফারিনা আবার শহুইরা জীবনও ভাল্লাগেনা। দুই নৌকায় ফাও দিছি। কত কষ্ট কইরা ফুতাইন বড় করছি,মায়া লাগে। হেইসব দিনগুলার কতা মনে অইলে কইলজার ভিতরে ছ্যাত কইরা উডে।
আহারে জীবন! সংগ্রামের পর ছেংড়া বয়সে জামাই মেেরছ। আমি ফরছি অহুল সাগরে। জামাই যে সহায় সম্বল রাইখ্যা গেছে তা দিয়া চলুন যাইতো কিন্তু আওড়ের জমিন চাষ-বাষ কেডা কইরা দিবো? বড় ফুতের বয়স তহনো সাত কিবা আট। ছুডুডার বয়স চার/পাঁচ অইবো। ফুতেরার মুহে ভাত তুইল্যা দিতে গিয়া কতোদিন যে অনাহারে দিন কাটাইছি …! কার্তিক মাসে আওড়ের ফানি কমলে তাহাজ্জুতের নুমাজ ফইড়া গেছু তুলতে যাইতাম। রাতে যাইতাম যাতে মাইনসের চউক্ষে না ফড়ি। মাইনসে দেখলে জামাইর বাড়ির ইজ্জত যাইবো এই ভয়ও মনের ভিতরে আছিন। ফুতেরার খাওন জুড়ানোর লাইগ্যা বর্ষার ফানিতে বঁড়শি দিয়া মাছ ধরছি। হেই মাছ গেরামের মাইনষের কাছে বেইচ্যা চাইল নিছি। এক দিনের কথা আজও ভুৃলতারিনা। ঘরে খাওন নাই । বেইন্যা বেলা থাইকা আমি বঁড়শি লইয়া মাছ ধরার চেষ্টায় আছি। কিন্তু মাছ তো আর বঁড়শিত লাগেনা। এর মইধ্যে ছুডু ফুত কয়েক দফা ডাইক্যা গেছে Ñ ও মা আমার খিদা লাগছে। ফুতেরার মুহে খাওনা না দিতে ফাইরা আমার বুক ফাইট্টা কান্দন আইতাছে। মনে মনে ফুতেরার বাপরে কইতাছি- মনিরের বাপ আমারে একলা ফালাইয়া কই গিয়া ফলাইলা ? আমি তো পারতাছিনা। ছুডু ফুত আবার আইলো । একই কতা – ও মা আমার খিদা লাগছে। মেজাজ এইবা বিগরাইয়া গেলো । হাতে থাকা বঁড়শি দিয়া দিলাম জোরে বারি। কানতে কানতে ফুত আমার দৌড় দিল। দুপুর পর্যন্ত আর কাছে আইলোনা। কি কফাল! একটা চুনো ফুডি অ বঁড়শিত ঠুফুর দিতাছেনা। আল্লারে ডাকলাম – ও মাবুদ একটা মাছ ও কি দিবানা? আমার এতিম ফুত দুইডার মুহে কি খাওন দিতে ফারতামনা?
এই যহন ভাবতাছি আল্লার কি লিলা ঠিক তহনই এক সের ওজনের ছিতল মাছ বঁড়শিত গাইত্থা গেল! ডাঙ্গায় তুইল্যা দেহি ওমা এইডা তো দুই সেরের কম অইতোনা! খুশিতে মুনডা ভইরা ওঠলো। ফুতেরারে ডাকলাম ও ফুত দেখ আইয়া কতো বড় মাছ ওঠছে। কিন্তু দুই ফুতে কেউ আইলোনা।মাইর খাইয়া কই গেছে কেডা জানে?
আল্লার মনে অয় আরো পরীক্ষা নেওনের আছিন। এর কাছে যাই, হের কাছে যাই, কেউ তো আর মাছ নিতো রাজিনা। শফিকের মায় কয় বাজারতে মাছ লইয়া আইছে। বাজিবের মার কাছে গেলাম হেয় কয়-ভাউজ মাছ তো লাগতোনা। তোমার দেওরে রাইজ্যের মাছ ধইরা আনছে। আগামী চাইর পাছ দিন আর মাছের কাম লাগতোনা। আমার অবস্থা তখন কাহিল। মাথায় আসমান ভাইঙ্গা পড়ছে। মাথায় হাত দিয়া বইসা পড়লাম। জ্ঞান হারানোর দশা। এইভাবে আশেপাশের হনেকের কাছে গেলাম। সব জায়গায় নিরাশ অইয়া ফিরা আইতাছি। আর ভাবতাছি আমার ফুতেরার রিজিকেই আইজ খাওন নাই। মাবুদ সব তোমার ইচ্ছা। মুতির মার বাড়ির সামনে আইয়া কি মনে কইরা খাড়াইলাম। তার সাথে কিছ ুদিন ধইরা সম্পর্ক ভালা না । কতাবার্তা বেশ অয়না। চিন্তা করতাছি তার কাছে যামু কিনা। যুদি হেয় ফিরাইয়া দেয়? আমার যে আর উফায়ি নাই! আমার ফাও দুইডা চলতাছেনা। শেষে মান অভিমান সব ভুাইল্যা গেলাম। ডাকলাম- বুবু বাড়িত আছো নি? ঘর থাইক্যা কর্কশ রাও ভাইস্যা আইলো। – কি লো জিয়ার মা না কিতা? আমি কইলাম হ বুবু ইকটু বাইরে আইয়ো। আমার গলা শুকাইয়া আইতাছে । বুবু ও যদি ফিরাইয়া দেয় এই ভয়ে! খাড়াইয়া থাকতে পারতাছিনা শরীলডা টইল মারতাছে। আমি বইসা পড়লাম। বুবু কইলো কি অইছে তর ? উত্তর না দিয়ে বললাম- মাছ রাখবা বুবু? বুবু কিছু না কইয়া ভিতরে গেলো। মন খারাপ অইলো। হায়রে কফাল। বিফল মনে মাছটা হাতে নিলাম। বাড়ি ফিরা ছাড়া গতি নাই। জানিনা ফুতেরার সামনে কেমনে দাড়াঁমু।
ঠিক তহন-ই বুবু পেছন থাইকা ডাকলো। কই যাছ? মাছ দিয়া যা। অনুমান সের তিনেক চাইল লইয়া বুবু পেছনে খাড়াইয়া আছে। মুষড়ে যাওয়া আত্মা যেন দেহে ফিরা আইলো।
কইলাম বুবু মাছের ওজন তো এতোতা অইতোনা?
কেলা কইছে তরে অইতোনা ? চাউল লইয়া বাড়িত যা তাড়াতাড়ি। তর ছুডু ছেড়ারে ভাত খাওয়াই দিছি মুহের দিগে চাওন যায়না। এক্কেবারে হুগাই রইছে। ছেড়াও জরমু দিছছ একটা ! জোড় কইরাও খাওয়ান যায়না । খালি কয় মায় মারবো। হনেক কসরত কইরা খাওয়াইছি। কি লো আমি কি তর মাথায় বাড়ি দিছিনি? ঘরো চাইল নাই আমারে কইলে দিতামনা তরে? এত্বো গড়িমা কিয়ের তোর ? রাগ আর ক্ষোভে আরো হনেক কিছু কইলো বুবু। আমি আর কথা বাড়াইলাম না । আমার মনে অহন রাজ্যের খুশি। তিন দিন রইদ না উঠার পর রইদ উঠলে দুনিয়াডা যেমুন ফুরফুইরা লাগে আমারও অহন এমুন লাগতাছে। আল্লাহ যা করে ভালার লাইগ্যাই করে । শোকরিয়া।
নুন দিয়া অল্প চাইল ভাজলাম। ফুতেরা সহাল থাইক্যা কি”ছু খায় নাই। খিদা মনে অয় পেট জ্বলতাছে। এইডা খাইতে-খাইতে ভাত রান্না অইয়া যাইবো। জিয়া না অয় খাইছে। মনির কই? আৎকা মনে ফড়লো মন খারাপ অইলে ফুত আমার ইসকুল ঘরের কোনায় বইয়া থাহে। ইসকুল ঘরে গিয়া দেহি ফুত উপোত অইয়া নিঃশব্দে কানতাছে। কইলাম কিরে ফুত কান্দছ ক্যারে ? তরার বাফ নাই ,আমি তো আছি নাহি! ফুত আমার এইবা আওয়াজ কইরা কাইন্দা দিছে। Ñ মাগো আমারে কারো বাড়িত কামে দিয়া দেও। তাইলে আর তোমার আর জিয়ার না খাইয়া থাহন লাগতো না।
ফুতরে এই কতা কইছনা তুইন। লেহাফড়া তর করনই লাগবো। আমরার অভাব আর বেশি দিন থাকবো? বড়জোর টাইন্নাটুইন্না ছয় আর মাস। ক্ষেতে ধান লাগামু । ধান উঠলেই সব ঠিক অইয়া যাইবো।
এমন কতোশতো স্মৃতি আজকাল চউক্ষের সামনে আওয়া-যাওয়া করে! খালি ফুরনো দিনের কতা মনে ভিতরে আকুপাকু করে। আজকালকার বউদের আচারে মাঝেমধ্যে মইরা যাইতে মনে লয়। আহারে এইদিন দেখার জন্য কি মানুষ সন্তান লালন করে!দুইআমার নাম ফাহিম। ৭ম শ্রেণিতে পড়ি। বেগমজান আমার দাদী।বয়স আনুমানিক পচাঁত্তর। গত বছরদুয়েক হলো হঠাৎ করেই দাদী যেন বুড়ো হয়ে গেলেন। চোখে কম দেখেন। (অসমাপ্ত)




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com