শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ০১:৪৫ অপরাহ্ন

জামিনে থাকার পরও গ্রেফতার: পুলিশকে আর মাফ করবেন না হাইকোর্ট

সাদেক মাহমুদ পাভেল:
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২০ জুন, ২০২৩

উচ্চ আদালত থেকে জামিনে থাকার পরও কলেজছাত্র মো. আশরাফুল হাওলাদারকে গ্রেফতারের ঘটনায় পটুয়াখালী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুজ্জামান ও সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মিজানুর রহমানের নিঃশর্তে ক্ষমা চেয়ে করা আবেদন গ্রহণ করেননি হাইকোর্ট।
এ সময় আদালত পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, একের পর এক উচ্চ আদালতের আদেশ অমান্য করবেন। আর আমরা মাফ করে দেবো, এটা হতে পারে না। সংবিধান ও আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গত রোববার (১৮ জুন) হাইকোর্টের বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত বে এ কথা বলেন।
আদালতে দুই পুলিশ সদস্যের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট শাহবাজ হোসেন, অ্যাডভোকেট শারমিনা হক। রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন বাপ্পী, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আনিসুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। এর আগে উচ্চ আদালত থেকে জামিনে থাকার পরও কলেজছাত্রকে গ্রেফতারের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে উপস্থিত হন তারা। এর পর শুনানির শুরুতে দুই পুলিশ কর্মকর্তা আদালতে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন। এ সময় হাইকোর্ট বলেন, আর কত উচ্চ আদালতের আদেশ অমান্য করবেন। আদেশ মানবেন না, আবার এসে মাফ চাইবেন, এটা তো হতে পারে না। শুধু মাফ করার জন্য হাইকোর্ট বসে নেই। সবাইকে মাফ করা হাইকোর্টের কাজ না। শত শত বছর এ কোর্ট থাকবে। আদালতের মর্যাদা আমাদের রক্ষা করতে হবে।
হাইকোর্ট বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের রক্ত ও দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে দেশ স্বাধীন হয়েছে। এসব কাজের জন্য না। সংবিধানের ১০৮ অনুচ্ছেদ অনুসারে এবং আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দুই পুলিশ কর্মকর্তার আইনজীবী ব্যারিস্টার তাজরুল ইসলাম আদালতে বলেন, কলেজছাত্র মো. আশরাফুল হাওলাদারের হাইকোর্ট থেকে জামিন পাওয়ার বিষয়টি পুলিশ জানতেন না। আসামিরা জামিননামা দেখাননি। ল’ইয়ার্স সার্টিফিকেটও দেখানো হয়নি। এ বিষয়টি আদালতে নজরে আনা আইনজীবী আলী আহসান মোল্লা বলেন, উচ্চ আদালত থেকে জামিন পাওয়ার কথা আসামিরা পুলিশ কর্মকর্তাদের বলেছেন। জামিন সংক্রান্ত ল’ইয়ার্স সার্টিফিকেট দেখালে সেটা ছিঁড়ে ফেলে পুলিশ।
আদালত বলেন, আমরা সববিষয় দেখবো। পুলিশ-আসামিদের কথোপকথনের রেকর্ড তলব করছি। এরপর আদালত এ মামলার পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ২৩ জুলাই দিন ধার্য করেন। ওইদিন দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে হাজির হতে হবে। এর আগে উচ্চ আদালত থেকে জামিনে থাকার পরও কলেজছাত্র মো. আশরাফুল হাওলাদারকে গ্রেফতারের ঘটনায় পটুয়াখালী সদর থানার ওসি মো. মনিরুজ্জামান ও এএসআই মিজানুর রহমানকে তলব করেছিলেন হাইকোর্ট। ১৮ জুন সশরীরে আদালতে হাজির হয়ে তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে বলা হয়। একই সঙ্গে জামিনে থাকা সত্ত্বেও উদ্দেশ্যমূলক গ্রেফতার করে বাংলাদেশের ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করায় বিবাদীদের বিরুদ্ধে কেন আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন আদালত। হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এ আদেশ দিয়েছিলেন।
আদালত আদেশে বলেছেন, মো. আশরাফুল হাওলাদারকে গ্রেফতারে পুলিশ সদস্যের আচরণ বা প্রক্রিয়া আইন পরিপন্থি। একই সঙ্গে তা আমাদের সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনারও পরিপন্থি। এটা আইনের মীমাংসিত প্রস্তাব যে, প্রাসঙ্গিক আইন অনুসরণ না করে নাগরিক অধিকারকে বাধাগ্রস্ত করা যাবে না।
একজন পুলিশ অফিসারকে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করার আগে প্রথমে তাকে আইনি বিষয় নিয়ে ভাবতে হয়। এখানে আসামি ফৌজদারি বিভিন্ন মামলায় উচ্চ আদালত থেকে আগাম জামিনে রয়েছেন। আইনজীবী উচ্চ আদালতের জামিনের বিষয়ে আসামিকে সার্টিফিকেট দিয়েছেন। মামলায় মনে হচ্ছে এএসআই মিজানুর রহমান আমাদের সর্বোচ্চ আদালতের গাইডলাইন এবং আইনকে অবহেলা করেছেন। যার ফলে ফৌজদারি বিচারব্যবস্থার কার্যকারিতা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। আমরা মনে করি, পটুয়াখালী সদর থানার ওসি মো. মনিরুজ্জামান ও এএসআই মিজানুর রহমান এ বিষয়ে কারণ ব্যাখ্যা করবেন।
গত ২০ মে একটি জাতীয় দৈনিকে ‘জামিন নেওয়া শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদন ২১ মে আদালতের নজরে আনেন আইনজীবী আলী আহসান মোল্লা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, পটুয়াখালী সদর থানা পুলিশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালত থেকে জামিন নেওয়া কলেজ শিক্ষার্থী মো. আশরাফুল হাওলাদারকে আটক করে আদালতের পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার দিন রাতে আসামির বাড়ি থেকে আটকের পর শুক্রবার সকালে আদালতে পাঠানো হয়। এ সময় পুলিশকে হাইকোর্টের জামিনের কপি দেখালে তা আমলে নেয়নি বলে দাবি আসামির পরিবারের।
পরিবারের অভিযোগ, আটকের পর পুলিশ মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করে। তা দিতে না পারায় পুলিশি ক্ষমতার বলে তাকে আদালতে পাঠানো হয়। যদিও হাইকোর্টের জামিননামা দেখে শুক্রবার দুপুরে আসামিকে ছেড়ে দিয়েছেন পটুয়াখালী চিফ জুডিসিয়াল আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট মো. জামাল হোসেন। আশরাফুল হাওলাদার পটুয়াখালী সদর উপজেলার মরিচবুনিয়া ইউনিয়নের বাজার ঘোনা গ্রামের আব্দুল লতিফ হাওলাদারে ছেলে। এ ঘটনায় ক্ষোভ জানিয়েছেন জেলা আইনজীবী সমিতি।
আশরাফুলের চাচা রাজা মিয়া বলেন, সদর থানা পুলিশের এএসআই মিজানুর রহমান তাকে আটক করেন। আশরাফুলের পরিবার ওই রাতে সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী আলী আহসান মোল্লার স্বাক্ষরিত প্রত্যয়নপত্র ও জামিননামার অনলাইন কপি দেখায় পুলিশকে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com