আগামী ২৯ জুন উদযাপিত হবে ঈদুল আজহা। প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন ও আনন্দ ভাগাভাগি করতে আরও আগে থেকেই রাজধানী ছাড়তে শুরু করেছে মানুষ। গত ২২ জুন থেকে সারা দেশে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটি হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বন্ধ হয়েছে শিক্ষা-সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানও।
ফলে গত শুক্রবার (২৩ জুন) থেকে ঘরমুখী হচ্ছে লোকজন। আজ শনিবার (২৪ জুন) সকাল থেকে যাত্রীদের অতিরিক্ত ভিড় বাড়ছে কমলাপুর রেলস্টেশনে। এ ছাড়া বাস টার্মিনাল ও লঞ্চ টার্মিনালেও ভিড় দেখা গেছে।
গতকাল শনিবার দুপুরে কমলাপুর রেলস্টেশনে দেখা গেছে, কিছুটা বিলম্বে ট্রেন ছাড়ায় প্ল্যাটফর্মে বসে সময় কাটাতে দেখা গেছে ঘরে ফেরার অপেক্ষায় থাকা যাত্রীদের। গত ঈদুল ফিতরে স্বস্তি নিয়ে বাড়িতে যাওয়া ও আসার মতো এবারও তারা স্তস্তি নিয়ে ফিরতে চান।
পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আজ দুপুরের দিকে কমলাপুর রেলস্টেশনে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন ব্যবসায়ী রাকিবুল হাসান। সড়কে যানজটের কথা মাথায় রেখে আজিমপুরের বাসা থেকে হাতে সময় নিয়ে বের হয়েছিলেন তিনি। তবু জ্যাম ঠেলেই স্টেশনে পৌঁছাতে হয়েছে তাকে।
রাকিবুল হাসান বলেন, নোয়াখালী যাবো উপকূল ট্রেনে করে। ৩টা ২০ মিনিটে ট্রেন ছাড়ার কথা। সঙ্গে আমার স্ত্রী ও বাচ্চারা আছে। গত ঈদে কিছুটা স্বস্তিতে বাড়ি যেতে পেরেছিলাম। এবারও আশা করি তেমন কোনও ঝামেলা হবে না। তারপরও যদি যথাসময়ে ট্রেন ছেড়ে দেয়, তাহলে আমাদের জন্য ভালো হয়। বাচ্চাদের তেমন কষ্ট হবে না। আর ট্রেন ছাড়তে দেরি হলে অসুবিধায় পড়বো।
একই ট্রেনের আরেক যাত্রী সাব্বির আহমেদ বলেন, ঈদের সময় ভিড় হবে, এমনটাই জেনেই আসছি। এ সময় ট্রেন যে দেরি করে ছাড়ে, এটিও নতুন কিছু না। কষ্ট হলে হোক; ঈদের সময় আমাদের বাড়ি যেতে হবে। বাসে গেলে খরচ বেশি, সময়ও লাগে বেশি। এ ছাড়া এখন গরুর বাজার কোথাও কখন জ্যাম লেগে যায় বলা যায় না। অনলাইনে টিটিট পাইনি। তাই কষ্ট হলেও ট্রেনেই দাঁড়িয়ে যাবো।
এ প্রসঙ্গে কমলাপু রেলওয়ে স্টেশনের ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার বলেন, আমরা ২৫ শতাংশ স্ট্যান্ডিং টিকিট কাউন্টার থেকে দিচ্ছি। অনলাইনে যারা টিকিট কেটেছেন, তাদের স্টেশনে প্রবেশে যেন কোনও অসুবিধা না হয়, সে জন্য এবার অন্য পাশে ১ থেকে ৬ নম্বর কাউন্টার থেকে এই টিকিটগুলো দিচ্ছি। স্ট্যান্ডিং টিকিটের চাপ কিছুটা কমই দেখা যাচ্ছে। বিকাল হলে সেটা বাড়বে।
এদিকে ভোর থেকেই নৌযাত্রীদের সরব উপস্থিতি রাজধানীর প্রধান নদীবন্দর সদরঘাটে। ঘাটে অতিরিক্ত ভিড় না থাকলেও কানায় কানায় পূর্ণ প্রতিটি লঞ্চ। বিকাল থেকে ঘাটে যাত্রীর চাপ আরও বাড়তে পারে। সব মিলিয়ে চিরচেনা রূপে ফিরেছে সদরঘাটও। ঈদুল ফিতরের মতো ঈদুল আজহায়ও সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে স্বস্তিতে বাড়ি ফিরছেন দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ।
এ ছাড়া রাজধানীর কল্যাণপুর, সায়েদাবাদ ও গাবতলী ও মহাখালী বাস টার্মিনালে দেখা যায়, টিকিটসহ যাত্রীরা দীর্ঘ সময় বসে রয়েছেন। অধিকাংশই অগ্রিম টিকিট কেটেছেন। সঠিক সময়ে বাস না আসায় ভোগান্তিতে পড়েছেন তারা। সায়েদাবাদ হিমালয় কাউন্টারের মাস্টার জুলহাস মিয়া জানান, প্রতিবছরই ঈদের এক সপ্তাহ আগে থেকে যাত্রীদের চাপ থাকে। শেষ দিকে এটা কয়েক গুণ বাড়ে। বৃহস্পতিবারের (২২ জুন) চেয়ে গতকাল শুক্রবার ও আজ শনিবার যাত্রীদের চাপ বেশি দেখা যাচ্ছে। সামনে এই ভিড়টা আরও বাড়বে। আমরা সম্পূর্ণ সিট পূরণ করে গাড়ি ছাড়ছি। এখন পর্যন্ত কোনও ধরনের ভোগান্তি নেই বলে তিনি উল্লেখ করেন।