বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের (এফডিসি) দুর্দশার কথা বলতে গিয়ে চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি কাজী হায়াৎ বলেছেন, এফডিসিতে গেলে আমাদের কান্না আসে। এফডিসিতে কোনো শুটিং নেই, লোক নেই। কয়েকটা কুকুর এবং সমিতির কয়েকজন লোক আছে। গত বৃহস্পতিবার (৬ জুলাই) সচিবালয়ে তথ্য মন্ত্রণালয় সভাকক্ষে ‘চলচ্চিত্র শিল্পের উত্থানে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রীকে সম্মিলিত চলচ্চিত্র পরিষদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। এফডিসির দুর্দশার কথা উল্লেখ করে কাজী হায়াৎ বলেন, এফডিসির এমডি মহোদয়কে বারবার বলেছি আপনারা ভাড়া কমিয়ে দেন। ভাড়া যদি কমাতে না চান, তাহলে নির্মাতাদের অন্তত একটা স্লাব করে দেন। যদি কেউ সব কাজ এফডিসিতে করেন, তাহলে ৪০ শতাংশ ব্যাক পাবেন। আর ৫ লাখ টাকার কাজ করলে ৩০ শতাংশ ব্যাক পাবেন। এমন স্লাব করে দিলে এফডিসি আবার সরগরম হবে। এফডিসির কর্মকর্তাদের দুঃখ-দুর্দশার কথা শুনতে হবে না। এফডিসির কর্মকর্তারা আমাকে প্রায় বলেন বেতন পান না।
তথ্যমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনার কল্যাণে এফডিসিতে নতুন নতুন ক্যামেরা, লেন্স এসেছে। যেসব লেন্স, ক্যামেরা বাইরে নেই। এত সুন্দর যন্ত্রপাতি থাকতে কেউ ব্যবহার করতে পারছে না, শুধু তাদের কারণে। আপনি এফডিসি এমডির সঙ্গে নির্মাতা-কলাকুশলীদের নিয়ে বসে একটা রেট নির্ধারণ করে দেন। তাহলে এফডিসি সচল হবে। তখন আমাদের সঙ্গে যারা কাজ করছেন, তাদের দুঃখ-দুর্দশার কথা শুনতে হবে না।
কাজী হায়াৎ বলেন, আবার চলচ্চিত্র ঘুরে দাঁড়িয়েছে। যারা আমরা এখানে আছি, আমরা সিনেমার মানুষ। অধিকাংশ বেকার ছিল, অধিকাংশ এখনো বেকার। আপনি (তথ্যমন্ত্রী) অনুদান দিয়ে, অনুদানের সংখ্যা বাড়ি, আমাদের শিল্পীদের ব্যস্ত রেখেছেন। আমি মনে করি শিল্পীদের দুর্দিনে আপনি সহযোগিতা করেছেন।
তথ্যমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ২০টি ছবি যদি আপনি অনুদান দেন। তার মধ্যে ভাগ করে দেন। ১০টি মূলধারার বাণিজ্যিক সিনেমা, ৫টি নতুন ডিরেক্টর, ৫টি বিকল্প ধারায় ছবি। এভাবে ভাগ করে দিলে সিনেমা মুক্তির সময় কষ্ট হবে না।
এ সময় তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, তথ্য ও সম্প্রচার সচিব মো হুমায়ুন কবীর খোন্দকার, চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি ইলিয়াস কাঞ্চন, পরিচালক সমিতির মহাসচিব শাহিন সুমন, সাংস্কৃতিক সচিব শাহিন কবির টুটুল, চলচ্চিত্রগ্রাহক সংস্থার সভাপতি আব্দুল লতিফ বাচ্চু, চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির উপদেষ্টা সুদীপ্ত কুমার দাস, সদস্য ইউনুস রুবেল, সম্মিলিত চলচ্চিত্র পরিষদের সদস্য সচিব শাহ আলম কিরণ, এডিটরস গিল্ড সভাপতি আবু মুসা দেবু, চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাস, প্রযোজক অপূর্ব রানা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
চলচ্চিত্র পরিষদ নেতারা তাদের বক্তব্যে বলেন, ‘ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আটটি এবং ঈদুল আজহার সময় পাঁচটি মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র সারাদেশে দর্শকদের মধ্যে সাড়া জাগিয়েছে। বন্ধ হয়ে যাওয়া অনেক সিনেমা হল খুলেছে। সরকার সিনেমা হল নির্মাণ ও সংস্কারে এক হাজার কোটি টাকার সহজ ঋণ তহবিল দিয়েছে, বাণিজ্যিক সিনেমায় অনুদান দিচ্ছে। এ সবই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা এবং তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদের নিরলস প্রচেষ্টার ফসল।
সুদীপ্ত দাস সহজ ঋণে দেশব্যাপী সিনেমা হল গড়ে তুলতে অব্যাহত প্রচেষ্টার অঙ্গীকার করেন। ইলিয়াস কাঞ্চন ভালো কনটেন্ট নির্মাণের ও শাহিন সুমন বাণিজ্যিক সিনেমায় অনুদান বৃদ্ধির আহ্বান জানান। আবু মুসা দেবু তথ্য কমপ্লেক্সগুলোতে সিনেমা হলো রাখার অনুরোধ জানান।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ভালো কাজের প্রশংসা হলে অনুপ্রেরণা পাওয়া যায়। আমাদের দেশে ভালো কাজের প্রশংসা তেমন হয় না, কোনো ভুল হলে সেটি নিয়েই মাতামাতি হয়।
তিনি বলেন, বুধবার প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছি, সিনেমা হলের সংখ্যা ১০০ নিচে নেমেছিল, এখন বেড়ে এক পর্দার সিনেমা হল আর সিনেপ্লেক্স মিলে প্রায় ২০০ হল চলছে। শুনে তিনি অত্যন্ত খুশি হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী চলচ্চিত্রের বড় সুহৃদ।
চলচ্চিত্র শিল্পের এ ঘুরে দাঁড়ানোর পেছনে শুধু সরকারের সহযোগিতাই কাজ করেছে তা নয়, চলচ্চিত্র জগতের সবার ঐকান্তিক প্রচেষ্টা এবং নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও এ শিল্পের সঙ্গে থাকা, শিল্পকে ধরে রাখা, সিনেমা বানানো এবং লোকসান দিয়েও হল বন্ধ করে না দেওয়া এগুলো নিশ্চিতভাবে কাজ করেছে-যোগ করেন তথ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমাদের পরিচালক, শিল্পী-কলাকুশলীরা বিশ্বমানের, অনেক আন্তর্জাতিক উৎসবে তারা পুরস্কৃত হয়েছেন। আমাদের লক্ষ্য দেশের চলচ্চিত্র শিল্পকে বিশ্বাঙ্গণে নিয়ে যাওয়া।