কালের আবর্তে ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ড থানার ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প। বহুমুখী সমস্যা আর পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে আজ সংকটের মুখে মৃৎ কুঠির শিল্প। সীতাকুণ্ড থানার মহাদেবপুর, কুমারপাড়া, বড় দারোগারহাট, বহরপুর, মহালঙ্গা, বাড়বকুণ্ড ও বাঁশবাড়ীয়ায় একসময় প্রায় ৩শ পরিবার মৃৎ কুঠির শিল্পের সাথে জড়িত থাকলেও বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রা, শিল্পের উন্নয়ন ও নতুন নতুন সামগ্রীর প্রসারে দেশের অন্যান্য থানার ন্যায় সীতাকুণ্ডেও প্রায় বিলুপ্তির পথে ঐতিহ্যবাহী মৃৎ কুঠির শিল্প। সরেজমিনে দেখা যায় পূর্বপুরুষদের পেশায় আঁকড়ে থাকা পাল পাড়ার সোহাগী রানী, গীতা রানী ও মনোরঞ্জন পাল সহ অনেকেই মাটির সামগ্রী তৈরি ও রোদে শুকাতে ব্যস্ত সময় পার করছে। বর্তমান বাজারে আগের মত মাটির তৈরি জিনিসপত্রের চাহিদা না থাকলেও থেমে নেই তাদের জীবন ও সংসার। ক্রেতারা মাটির জিনিজপত্রে আগ্রহ হারিয়ে ফেলায় এ পেশায় যারা জড়িত এবং জীবন-জীবিকার একমাত্র অবলম্বন মুৎশিল্প তাদের সংসার পরিচালনা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। মৃৎ কুঠির শিল্প ব্যবসায়ী নারায়ন নাথ জানান, সীতাকুণ্ডে ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী পন্য তৈরি না হওয়ায় কুমিল্লার পদুয়া বাজার ও ফেনীর ছাগলনাইয়া থেকে নিয়মিত মৃৎ কুঠির শিল্প সামগ্রী সীতাকুণ্ড বাজারে আমদানী করতে হয়। সীতাকুণ্ড থানা সংলগ্ন পাল বাড়ীর খোকন পাল জানান, পারিবারিক ভাবে প্রায় ৬০ বছর যাবৎ আমরা মৃৎ কুঠির শিল্পের সাথে জড়িত। সুনিপুন হাতে মাটি দিয়ে তৈরি হাঁড়ি-পাতিল, কলসি, থালা-বাটি, সরা-বাসন, বিক্রি করেই
তাদের সংসার চলছে। সীতাকুণ্ড পৌরসদর ব্যবসায়ী ও দোকান মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ ওমর ফারুক সোহেল জানান, মৃৎশিল্প আমাদের ঐতিহ্য তাছাড়া মৃৎশিল্পের সাথে এখনো ঘুরছে উপজেলার প্রায় ২শ পরিবারের ভাগ্যের চাকা। সেই মৃৎশিল্পের এখন দুর্দিন চলছে। এক সময় নিজেদের পছন্দ মত তৈরি জিনিস পেতে বাজারে ক্রেতাদের ভিড় করতে দেখেছি। বর্তমানে মেলামাইন প্লাষ্টিক কিংবা অন্যান্য শিল্প সামগ্রী স্বল্পমূল্যে বাজারজাত হওয়ায় মৃৎশিল্পের তৈরি জিনিসপত্রের চাহিদা দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে।