বুধবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৩৮ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
১৫তম জাতীয় সিনিয়র ক্লাব ভারোত্তোলন প্রতিযোগিতায় শাম্মী সুলতানার তিনটি অনন্য রেকর্ড জনপ্রশাসন সংস্কারে নাগরিকরা মতামত দিতে পারবেন যেভাবে প্রফেসর তরুণ কান্তি বড়–য়ার রেক্টর পদে যোগদান উপলক্ষে শিক্ষকদের সাথে মতবিনিময় সভা হাসিনার মতো ’৭১ সালে শেখ মুজিবও পালিয়ে ছিলেন: মির্জা ফখরুল মার্কিন নির্বাচনে লড়ছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ৬ প্রার্থী আগামী ২৬ নভেম্বর শুরু হচ্ছে পাঁচ দিনব্যাপী বহুমুখী পাটপণ্য মেলা বজ্রপাতে মাঠেই মারা গেলেন ফুটবলার মার্কিন নির্বাচন : কার জয়ে বাংলাদেশের সাথে সম্পর্কে কী প্রভাব পড়বে? ৮ গোপন আটককেন্দ্রের সন্ধান আরও ২৯ সাংবাদিকের অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল

‘পার্টটাইম’ চাকরির ফাঁদে হাজারো তরুণ-তরুণী

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় সোমবার, ১০ জুলাই, ২০২৩

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক, টিকটক এবং হোয়াটসঅ্যাপে প্রতিনিয়ত ভাসছে ‘পার্টটাইম’ চাকরির বিজ্ঞাপন। যা বেকার তরুণ-তরুণীদের আকৃষ্ট করছে সহজে। ঘরে বসে দুই-চার ঘণ্টা কাজ করে ১০-২০ হাজার টাকা আয়ের অফার দিয়ে এসব বিজ্ঞাপন ছাড়ছে অনেকে। এমন অফারে যারাই আকৃষ্ট হচ্ছেন তারাই ফাঁসছেন। চাকরির বিষয়ে যোগাযোগ করলে নানা অজুহাতে নেওয়া হচ্ছে টাকা। পার্টটাইম চাকরির বিজ্ঞাপনে কেউ কেউ আমাজন-১ থেকে ১১ পর্যন্ত এবং গুগোলের নামও ব্যবহার করছে। কেউ কেউ টাকা দিয়ে ফেরত পাওয়ার অপেক্ষায় আছেন। মাসের পর মাস চলছে এমন প্রতারণা।
বরিশালের রতন কাজী, ছাকিল ফেরদৌস, মো. শাহিন ও যশোরের অপুসহ একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন, বিজ্ঞাপন দেখে রেজিস্ট্রেশন করার পর একটি নম্বর আসে। এরপর বিকাশের মাধ্যমে টাকা দেওয়া হলে সেখান থেকে একটি পণ্যের ছবি দেওয়া হয়। কিছুক্ষণ পর মেসেজ দিয়ে জানানো হয়, ওই পণ্য বিক্রি হয়ে গেছে। এ জন্য লাভের অংশ দেওয়া হয়। তবে লাভের সেই টাকা তোলা যাবে না। যা কিছু হচ্ছে সবই ছবি এবং মেসেজে সীমাবদ্ধ থাকছে। এরপর ছয়টি ধাপ পার হওয়ার জন্য ছয়টি প্যাকেজ দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে তিন-চারটি প্যাকেজ ছোট অংকের টাকা থাকলেও ৫ ও ৬ নম্বর প্যাকেজ থাকে বড় অংকের।
সেখান থেকে পণ্য কিনতে এক থেকে দেড় লাখ টাকা বিকাশে পাঠানোর জন্য বলা হয়। এমনকি ওই টাকা না থাকলে বিভিন্ন মাধ্যমে জোগাড় করার পরামর্শ দেওয়া হয়। বলা হয়, ওই টাকা পরিশোধ করলেই আগে দেওয়া টাকার দ্বিগুণ পাবেন। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব টাকা পরিশোধের মেসেজ দেওয়া হয়। তখন সদ্য পার্টটাইম চাকরিতে যোগদান করা ব্যক্তি পড়ে যান বিপদে। কারণ এরপর তিনি যে টাকা দেবেন, তা পাওয়ার নিশ্চয়তা নেই। ওই টাকা পরিশোধের পর আবারও প্যাকেজ দেওয়া হবে। সেক্ষেত্রে আরও টাকা আটকে যাবে। এ কারণে শেষ পর্যন্ত কেউ যেতে পারছেন না। এভাবে ছয়টি প্যাকেজ পূরণ না করে অনেকে বেকার জীবনে ফিরে যান। মাঝে চলে যায় কয়েক মাস ও কয়েক হাজার টাকা। আবার অনেকে বন্ধু ও আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে টাকা ধার এনে প্যাকেজ সম্পন্ন করার পর তাদের অ্যাকাউন্টে দেখানো হয়েছে লগ্নিকৃত টাকাসহ লভ্যাংশ। কিন্তু সেই টাকা তারা উত্তোলন করতে পারেননি। তাদের আবারও প্যাকেজ দিয়ে পণ্য কিনতে টাকা দিতে বলা হয়েছে।
এই ফাঁদে পড়েছেন বরিশাল নগরীর বাসিন্দা আরিফ আহমেদ। তিনি বলেন, ‘বিজ্ঞাপনে দিনে ১০-২০ হাজার টাকা আয় দেখে ২০০ টাকা রিচার্জ করে আমাজনে অ্যাকাউন্ট খুলি। টাকা বিকাশের মাধ্যমে এই মোবাইল নম্বরে (০১৯৭৫০৮৫৭৫১) পাঠাই। কিছুক্ষণের মধ্যে ২৬০ টাকা মূল্যের একটি পণ্য এলো। অ্যাকাউন্টে ২০০ টাকার স্থানে ওপেন করা মাত্রই ২৬০ টাকা হয়েছে। পণ্যটি কেনার সঙ্গে সঙ্গে তা সংরক্ষণ হলো। আবার এক-দুই মিনিটের মধ্যে তা বিক্রি হয়ে অ্যাকাউন্টে ৩৯০ টাকা যুক্ত হলো। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতেই ছয়টি পণ্যের প্যাকেজ অফার এলো। প্যাকেজ অফারের প্রতিটি পূর্ণ না করলে কোনও টাকাই পাওয়া যাবে না। প্রথমটি এক হাজার, দ্বিতীয়টি সাড়ে সাত হাজার, তৃতীয়টি সাড়ে ১০ হাজার, চতুর্থটি ২৮ হাজারের ওপরে। প্রথম তিনটির জন্য তিনবারে ভিন্ন ভিন্ন বিকাশ নম্বরে (০১৯৭৫৪৫৭৮৮১, ০১৯৮৩৩৯১৬২৯, ০১৯৪০২২৭২৮৭) টাকা পাঠাই। চতুর্থটি আর সম্ভব হয়নি। কারণ আমাজন অ্যাকাউন্টে ব্যালেন্স আছে ১৩ হাজার টাকার কিছু বেশি। ওই টাকা না দেওয়া পর্যন্ত প্যাকেজ গেম থেকে বের হওয়ার কোনও উপায় নেই। একমাত্র উপায় ছেড়ে দিয়ে বের হয়ে যাওয়া। কিংবা যেভাবেই হোক টাকা জোগাড় করে শর্ত পূরণ করা।’
আরিফ আহমেদ আরও বলেন, ‘১৩ হাজার টাকা অ্যাকাউন্টে রেখে ছাড়তে হলো এই প্যাকেজ খেলা। এরপর হয়তো প মটির জন্য ৫০ হাজার এবং ষষ্ঠটি এক লাখ ছাড়িয়ে যেতো। এভাবে আমাজনের অনলাইন পার্টটাইম জব অফারে আটকে গেছে আমার মতো হাজারো তরুণ-তরুণীর লাখ লাখ টাকা।’
বরিশালের অর্থনীতি সমিতির সভাপতি কাজী মিজানুর রহমান বলেন, ‘গড়ে একজনের যদি প্রতিদিন সর্বনি¤œ পাঁচ হাজার টাকা আটকে দেয়, তাহলে এক লাখ তরুণ-তরুণীর কী পরিমাণ টাকা তারা নিয়ে যাচ্ছে, তা অকল্পনীয়। বিষয়টি নিয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, ভোক্তা অধিকার ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বিশেষজ্ঞদের ভাবা উচিত। আমরা রাজনৈতিকভাবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কঠোর প্রয়োগ দেখতে পেলেও সাইবার ক্রাইমের ক্ষেত্রে তা জোরালো নয়।’
নগরীর বাসিন্দা ভুক্তভোগী রতন কাজী বলেন, ‘বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন এজেন্সি সম্পর্কে জানার জন্য সরকারের দফতর রয়েছে। এভাবে ভার্চুয়ালি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাদি জানার জন্য সরকার থেকে নিয়ন্ত্রণ সেল চালু করা উচিত। যাতে সেখান থেকে সব ধরনের তথ্য জেনে এরপর সঠিক হলে সেখানে যুক্ত হওয়া, না হলে ওসব প্ল্যাটফর্ম বন্ধ করে দেওয়া উচিত সংশ্লিষ্টদের।’ এমন প্রতারণার বিষয়ে জানতে চাইলে বরিশালের পুলিশ কমিশনার সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি সম্পর্কে এই প্রথম জানলাম। এসব তথ্য আমাদের কাছে সরবরাহ করার অনুরোধ জানাচ্ছি। আমরা এসব তথ্য পেলে সাইবার অপরাধ বিভাগে বিষয়টি তুলে ধরে প্রতিকারের ব্যবস্থা নেবো।’
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর বরিশালের উপপরিচালক অপূর্ব অধিকারী বলেন, ‘যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তাদের সঠিক নাম-ঠিকানা ভুক্তভোগীরা সরবরাহ করতে পারলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ‘সাইবার জগত নিরাপদ রাখার জন্য ডিজিটাল লিটারেসি, সাইবার সিকিউরিটি এবং সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্টের জন্য চারটা স্তরে কাজ করতে হবে। ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান এবং পরিবার পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করা সবচেয়ে প্রথম এবং প্রধান কাজ।’ প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘প্রযুক্তিগত উন্নয়ন করে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ও মেশিন লার্নিংকে ব্যবহার করে বাংলাদেশের সাইবার ক্রিমিনালদের আমরা ট্র্যাকডাউন করতে পারি। তাদের আইনের আওতায় আনতে পারি। এই প্রক্রিয়া চলমান।’ কিন্তু যুদ্ধটা কী দিয়ে করবেন এমন প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সাইবার যোদ্ধাদের দিয়েই যুদ্ধ চালাতে সক্ষম হবো। সে জন্য তাদের সুপ্রশিক্ষিত করে তোলারও পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এ জন্য প্রতিটি বিভাগীয় ও জেলা শহরে আইটি সেন্টার স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছি আমরা।’-বাংলাট্রিবিউন




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com