ঢালিউডে ঝড় তোলা সিনেমা ‘হাওয়া’। গত বছর মুক্তি পাওয়া এই সিনেমা বিপুল দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছিল। এমনকি দেশের বাইরে, কলকাতায়ও ছবিটি ঘিরে উন্মাদনা দেখা গিয়েছিল। অধিকাংশ দর্শক-সমালোচকের কাছ থেকে এসেছিল প্রশংসার বাণী। কিন্তু কলকাতার কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী, নির্মাতা-অভিনেতা অঞ্জন দত্ত দিলেন হতাশার প্রতিক্রিয়া। তিনি জানালেন, ‘হাওয়া’ তার প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি।
গত ৭ জুলাই ভারতীয় ওটিটি প্ল্যাটফর্ম ‘সনি লিভ’-এ মুক্তি পেয়েছে ‘হাওয়া’। সেই সুবাদে ছবিটি দেখেছেন অঞ্জন দত্ত। এরপর নিজের সোশ্যাল হ্যান্ডেলে লিখেছেন লম্বা রিভিউ। অঞ্জনের ভাষ্য, “অবশেষে ‘হাওয়া’ দেখলাম। বড় বাজেট এবং প্রাণবন্ত কনসেপ্ট থাকা সত্ত্বেও মেজবাউর রহমান সুমন পরিচালিত ছবিটি আমার প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। যেটা হতে পারতো পুরুষ আধিপত্যের জগতকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাওয়ার আধুনিক এবং সিনেমাটিক উপস্থাপনা, সেটা সামান্য একটা প্রতিশোধের নাটকে পরিণত হয়েছে!”
অঞ্জন দত্তের মতে, ‘হাওয়ার’ গল্পটি অনেকটা সমরেশ বসুর গল্প ‘উরাতীয়া’র ইস্যুতে আবর্তিত হয়েছে। তবে সেটা খেই হারিয়েছে ক্লাইম্যাক্সে। ‘রঞ্জনা’ খ্যাত গায়ক ও নির্মাতা বললেন, “ছবিতে একেবারে বাস্তবসম্মতভাবে তিনি (সুমন) পুরুষদের লোভ ও শক্তির দুর্দান্ত একটি জগত তৈরি করেছেন। আমি অপেক্ষায় ছিলাম, একজন নারীর আগমন ঘটবে এবং সে এই দুঃখী, নিঃসঙ্গ জগতকে ধ্বংস করবে। তিনি (নারী) যথাসময়ে হাজির হয়েছেন। কিন্তু তিনি অর্থাৎ গুলতি (নাজিফা তুষি) সবচেয়ে যতœহীনভাবে গড়া চরিত্র, তার সাদামাটা অভিনয় এবং পেছনের গল্প; যেটা বাকি সিনেমার সঙ্গে যায় না। গল্পের শক্তিকে নষ্ট না করেই তিনি রূপক হয়ে থাকতে পারতেন। তাকে সাপে রূপান্তর করা একটা উদ্ভট উপসংহার, যেটা প্রায়শ কোরিয়ান সিনেমায় দেখা যায়; এবং এটা অসাধারণ একটি কনসেপ্টকে ধ্বংস করে দিয়েছে।”
ইতিবাচক দিক নিয়ে প্রশংসাও করেছেন অঞ্জন দত্ত। বলেছেন, “দুর্দান্ত চিত্রায়ন। ‘হাওয়া’ এমন একটি সিনেমা, যেটা পুরুষদের মধ্যকার জটিলতা সুন্দর তবে ভয়ংকর এক সমুদ্রের মাঝে একটি নৌকার শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশ ধারণ করেছে। ভিএফএক্স যা-ই হোক না কেন, প্রতিটা দৃশ্য দারুণ চিন্তাশীলতার প্রমাণ দেয়।”
নাজিফা তুষি ছাড়া ছবির প্রত্যেক পুরুষ অভিনেতার কাজে মুগ্ধ হয়েছেন অঞ্জন। অকপটে বললেন, ‘প্রত্যেক পুরুষ চরিত্রের শিল্পী দুর্দান্ত অভিনয় করেছেন। সূক্ষ্ম অথচ দুর্দান্ত খলনায়কের ভূমিকাটি আশ্চর্যজনকভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন চ ল চৌধুরী। এই পর্যন্ত এটা তার সবচেয়ে প্রশংসনীয় কাজ; অন্তত আমার দেখা মতে। আমি তার বেশ কিছু কাজ দেখেছি। হ্যাটস অফ চ ল। সোহেল ম-ল, শরিফুল রাজ, সুমন আনোয়ার, নাসিরউদ্দিন খান, রিজভি রিজু, মাহমুদ আলম ও বাবলু বোস সবার নাম নেওয়া প্রয়োজন। প্রত্যেকে অসাধারণ! ব্রিলিয়ান্ট! তারা গল্পের প্রবাহ ধরে রেখেছেন।’
ছবির আরও একটি দিক অঞ্জন দত্তের কাছে অপ্রয়োজনীয় মনে হয়েছে, তা হলো দৈর্ঘ্য। তার মতে, ‘হাওয়া’র দৈর্ঘ্য আরও কমানো যেতো। তবে দীর্ঘ হলেও অন্যদেরকে ছবিটি দেখার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।