রংপুরের গঙ্গাচড়ার তৈরি টুপি এখন মধ্যপ্রাচ্যে ওমানে যাচ্ছে। আর টুপি তৈরি করে বাড়তি টাকা উপার্জন করছে স্থানীয় প্রায় দেড় হাজার নারী। অবহেলিত এলাকা হিসেবে পরিচিত একটি উপজেলার নাম গঙ্গাচড়া। এখানে কর্মসংস্থানের বড় কোনো সুযোগ নেই। তিস্তানদীর ভাঙন আর অভাব মানুষকে কাহিল করে ফেলছে। দিনদিন অভাবী পরিবারের সংখ্যা বাড়ছে। এসব চিন্তা মাথায় রেখে গঙ্গাচড়ার এক যুবক তারিকুল ইসলাম তারেক হস্তশিল্পের মাধ্যমে নারীদের টুপি তৈরির কাজ দিয়েছে। বাড়তি আয়ের সুযোগ করে দিয়েছে। তারিক জানান, প্রাথমিক অবস্থায় ২০০৪ সাল থেকে স্বল্প পরিসরে শুরু করা হয় টুপি তৈরির কাজ। আর এখন উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ১ হাজার ৫০০ নারী টুপি তৈরির কাজ করছে। সাংসারিক কাজ সেরে বাড়তি সময়ে যে কোনো নারী বাড়তি আয় করতে পারেন। চেংমারী, মান্দ্রাইন, কুরিয়ার মোড়, ভূটকা, ধামুর, বোল্লারপাড়, মৌলভীবাজার ও খামার এলাকায় বর্তমানে কাজ করছে এসব নারীরা। তবে প্রতি বছর কাজের পরিধি বাড়ছে বলে তিনি জানান। এসব এলাকায় পরিদর্শনকালে দেখা যায়, নারীরা সংসারের কাজ সেরে বাইরে হাঁটতে হাঁটতে কিংবা একত্রে বসে টুপি সেলাই করে। নানা রংয়ের টুপি নানা ডিজাইনে কারুকাজ করছেন তারা। গঙ্গাচড়া সদর ইউনিয়নের একটি গ্রামের নাম চেংমারী মান্দ্রাইন। সেখান দিপালী রানী, কাজলী রাণী, লাভলী রাণী ও প্রভাতী রাণী, আমিনা বেগমসহ অনেকে পড়ন্ত বিকালে বসে টুপিতে সুই-সুতা দিয়ে ডিজাইন করছেন। এ সময় তারা জানান, একটি টুপি তৈরি করতে ১০ থেকে ১৫ দিন সময় লাগে। এ জন্য মজুরি দেয় ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা। বাড়ির কাজ সেরেও প্রতি মাসে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা আয় করেন। টুপির ডিজাইন ও সুই-সুতা সরবরাহ করে কর্তৃপক্ষ। এর আগে নারীদের দুই/এক দিনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। আর প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজটি করে তারেকের স্ত্রী তাসলিমা বেগম লাভলী। উপজেলার চেংমারী মান্দ্রাইন এলাকার যুবক তারিকুল ইসলাম তারেক এ সময় বলেন, ১২ বছর প্রশিকা নামের এনজিওতে চাকরি করার সময় বিষয়টি তার মাথায় আসে। প্রাথমিক অবস্থায় কাউনিয়া উপজেলাতে শুরু করা হয়। গত ২০০৪ সাল থেকে গঙ্গাচড়ার বিভিন্ন এলাকায় কাজ শুরু করা হয়েছে। করোনার কারণে কিছুটা থমকে গেছে ব্যবসা। দেড় বছর থেকে আবার নতুন করে শুরু করা হয়েছে। করোনার আগে প্রায় ৫ হাজার নারী টুপি সেলাই করত। বর্তমানে দেড় হাজার নারী এ কাজে সম্পৃক্ত। প্রতি মাসে প্রায় প্রায় ৫০০ টুপি ওমানে পাঠানো হয়। অভাবি এলাকা হিসেবে গঙ্গাচড়ায় অর্থনীতিতে এর প্রভাব পড়বে বলে তিনি আশা করেন।