আমাদের জাতীয় সম্পদগুলোর মধ্যে গাছ অন্যতম। বৃক্ষ রোপণ করে যেমনি ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন করা যায়, তেমনি এতে পরিবেশের ভারসাম্যও বজায় থাকে। সবুজ বন-বনানী সুন্দর করে মানুষের মন। শান্তিময় গাছগাছালির হাওয়া ফুরফুরে মেজাজ তৈরি করে। মানবজীবনের সর্বক্ষেত্রে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে গাছের অবদান। গাছ সৌন্দর্যের প্রতীকও বটে। সুন্দর পরিবেশ কিংবা সুন্দর বিশ্ব গাছ ছাড়া কল্পনাও করা যায় না।
পবিত্র কুরআন মাজিদ ও হাদিসে নববীতে বৃক্ষরোপণকে নানাভাবে উৎসাহিত করা হয়েছে। গাছ সম্পর্কে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন- ‘এবং তৃণলতা ও বৃক্ষাদি সিজদারত আছে।’ (সূরা আর-রাহমান-৬) অন্য আয়াতে কারিমায় ইরশাদ হয়েছে- ‘তোমরা যে বীজ বপন করো সে সম্পর্কে চিন্তা করেছ কি? তোমরা কি একে অঙ্কুরিত করো, না আমি অঙ্কুরিত করি?’ (সূরা ওয়াকিয়া : ৬৪-৬৫) ‘তিনিই আকাশ থেকে বারি বর্ষণ করেন। এতে তোমাদের জন্য রয়েছে পানীয় এবং তা থেকে জন্মায় উদ্ভিদ, যাতে তোমরা পশুচারণ করে থাকো।’ (সূরা আন-নাহাল-১০)
বৃক্ষরোপণের গুরুত্ব বর্ণনা করে মহানবী হজরত মুহাম্মাদ সা: ইরশাদ করেন, ‘কোনো মুসলমান যদি বৃক্ষ রোপণ করে কিংবা কোনো ফসল আবাদ করে, এরপর তা থেকে কোনো পাখি, মানুষ বা চতুষ্পদ জন্তু কিছু ভক্ষণ করে তবে তা তার জন্য সাদকাহ হিসেবে গণ্য হবে।’ (বুখারি ও মুসলিম) রাসূলুল্লাহ সা: আরো ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি বৈধভাবে সীমা লঙ্ঘন ব্যতীত কোনো ঘর তৈরি করে অথবা বৈধভাবে সীমা লঙ্ঘন ব্যতীত একটি চারা রোপণ করে, যতদিন জগৎ তা দিয়ে উপকৃত হবে, ততদিন তার আমলনামায় আল্লাহর পক্ষ থেকে সাওয়াব অব্যাহত থাকবে।’
বৃক্ষরোপণের নির্দেশ প্রদান করে মহানবী হজরত মুহাম্মাদ সা: ইরশাদ করেন, ‘তুমি যদি কিয়ামতের আগমন সম্পর্কে নিশ্চিত হও, সে সময় যদি তোমার হাতে একটি গাছের চারা থাকে যা রোপণ করা যায়, তবে তা তুমি রোপণ করো।’ (বুখারি ও মুসনাদে আহমাদ)
প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মাদ সা: নিজে বৃক্ষপ্রেমিক ছিলেন এবং তিনি বৃক্ষ শোভাম-িত পরিবেশ ভালোবাসতেন। সাহাবি হজরত জাবের রা: বর্ণনা করেন- একদা নবী কারিম সা: উম্মে মাবাদ নামক এক ব্যক্তির বাগানে প্রবেশ করেন। তখন তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে উম্মে মাবাদ! এ গাছটি কে রোপণ করেছে?’ (কোনো মুসলমান না কাফির) উত্তরে সে জানাল- মুসলমান। তিনি বললেন, ‘কোনো মুসলমান যদি কোনো গাছ রোপণ করে, আর তা থেকে মানুষ কিংবা চতুষ্পদ জন্তু অথবা পাখি ভক্ষণ করে, তবে তা কিয়ামতের দিন পর্যন্ত তার জন্য সাদকায়ে জারিয়াহ হয়ে থাকবে।’ (মুসলিম ও তিরমিজি)
এ হাদিসের আলোকে আমরা বুঝতে পারি, বৃক্ষরোপণ নিছক সাওয়াবের কাজ নয়; বরং তা সাদকায়ে জারিয়াহর অন্তর্ভুক্ত। তাই আমাদের পারলৌকিক স য়ের জন্য বৃক্ষ রোপণ করা এবং এর পরিচর্যা করা প্রয়োজন। আল্লাহর রাসূল সা: নিজেও বৃক্ষ রোপণ করেছেন। সাহাবি হজরত সালমান ফারসি রা:-এর মালিক যখন তার মুক্তির জন্য ৩০০টি খেজুর চারা রোপণের শর্তারোপ করল, তখন নবী কারিম সা: শর্তপূরণে নিজ হাতে ৩০০টি চারা রোপণ করেন। (মুসনাদে আহমাদ) রাসূলে কারিম সা: একবার দু’টি কবরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, হঠাৎ তাঁর বাহন থেমে গেল। রাসূল সা: বললেন, ‘এ দুই কবরে আজাব হচ্ছে। এদের একজন চোগলখোরি করত, অপরজন প্রস্রাব করে পবিত্রতা অর্জনে অবহেলা করত।’ অতঃপর রাসূল সা: বাহন থেকে নেমে কবরবাসী দু’ব্যক্তির মাগফিরাতের জন্য দোয়া করলেন এবং কবরদ্বয়ের পাশে দু’টি গাছের ডাল রোপণ করলেন। (বুখারি, মুসলিম ও আবু দাউদ)
এখন বর্ষাকাল। গাছ লাগানোর উপযুক্ত সময়। তাই এ সময়ে বাড়ির পাশের ফাঁকা জায়গায়, পুকুরপাড়ে, খাল বা নদীর ধারে, রাস্তার পাশে, বাঁধ বা রেললাইনের পাশে, স্কুল-কলেজ-মাদরাসায়, অফিস-আদালত, ঈদগাহ, কবরস্থানের খালি জায়গায় বৃক্ষ রোপণ করে আমরা সবাই ইহকালীন ও পরকালীন উপকার লাভ করতে পারি। লেখক : আলেম, প্রাবন্ধিক ও কলেজ শিক্ষক (উৎম: নয়াদিগন্ত অনলাইন)