সুকৌশলে বাস-মিনিবাস-গণপরিবহন বন্ধ করেও সরকার নয়া পল্টনের দিকে ছুটে আসা মানুষকে আটকাতে পারেনি বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। গতকাল বৃহস্পতিবার নয়া পল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, মানুষের ভোটাধিকার, বাক-ব্যক্তি স্বাধীনতাসহ বহুমাত্রিক গণতন্ত্র পুণপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নির্বাচনকালীন নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং অবৈধ সরকারের পদত্যাগের দাবিতে গতকাল পল্টনে স্মরণকালের বৃহত্তম সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এই শান্তিপূর্ণ সমাবেশকেও বাধাগ্রস্ত করতে সরকার তার স্বভাবসুলভ চ-নীতির কোনো ব্যতিক্রম করেনি। রাস্তায় রাস্তায় আওয়ামী সন্ত্রাসী ও পুলিশের বাধা, গ্রেফতার, পাড়ায়-মহল্লায় ককটেল বিস্ফোরণসহ সহিংস আক্রমণ কোনো কিছুরই কমতি ছিল না। নেতাকর্মীদের বাড়িতে অবরুদ্ধ করাসহ গাবতলী, আমিনবাজার, গাজীপুর-ধামরাই-টঙ্গী-কালিগঞ্জ সড়ক, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড এলাকা, মাওয়া-কেরানীগঞ্জ মহাসড়কে ঢাকার প্রবেশদ্বারে তল্লাশি চৌকি বসানো হয়। এসব এলাকা থেকে অসংখ্য যানবাহন আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত নেতাকর্মীরা ঢাকায় ঢোকার সময় গ্রেফতার করা হয়। এতে শুধু বিএনপি নেতাকর্মীই নয়, রোগীসহ সাধারণ মানুষও চরম হয়রানির শিকার হয়। এরপরও জনতার পল্টনমুখী প্রবল স্রোতকে প্রতিহত করতে পারেনি সরকার। বিএনপি নেতাকর্মীদের আক্রান্ত করা হলেও তাদের উদ্যম দমাতে পারেনি অবৈধ সরকারের চ্যালা-চামু-ারা। সুকৌশলে বাস-মিনিবাস-গণপরিবহন বন্ধ করেও পল্টনের দিকে ছুটে আসা মানুষকে আটকানো যায়নি।
শুধু তাই নয়, সমাবেশকে নানাভাবে বাধাগ্রস্ত করেই ক্ষান্ত হয়নি, এটির প্রচারে সরকার মারাত্মক হস্তক্ষেপ করেছে জানিয়ে বিএনপি মুখপাত্র বলেন, সমাবেশকে কেন্দ্র করে গোটা পল্টন এরিয়ায় ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়া হয়, মোবাইল নেটওয়ার্ক এর ফ্রিকোয়েন্সি ছিল না বললেই চলে। টেলিভিশনে সমাবেশের সংবাদ লাইভ প্রচার করতে নিষেধ করা হয়। এরপরেও উত্তাল জনসমূদ্রের মাধ্যমে এটি প্রমাণিত হলো, দেশের নোটিশবোর্ডে জনগণের পক্ষ থেকে ‘সতর্ক বার্তা’।
সরকারী শত বাধাবিপত্তি, আওয়ামী পা-াদের সন্ত্রাসী হামলা, পুলিশী গ্রেফতার ও ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে সমাবেশ সফল করায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে জনগণ, সর্বস্তরের নেতাকর্মী, সমর্থক এবং গণমাধ্যমের সাংবাদিকসহ সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।
তিনি বলেন, গণতন্ত্রের প্রতি জনগণের অঙ্গিকার কখনোই নিস্ফল হয়নি। নানা কালাকানুন প্রনয়ন করেও জনগণকে বন্দী করে রাখা যায় না। যদিও এখনো চলছে কালাকানুন প্রনয়নের খেলা। সর্বশেষ অত্যাবশকীয় পরিষেবা বিল পাশ করার অপচেষ্টার দ্বারা শ্রমিকদের ধর্মঘটের অধিকার হরণের চক্রান্ত চলছে।
রিজভী বলেন, ডেঙ্গু জ্বরে সারাদেশ কাঁপছে, প্রতিদিন লাশের সারি দীর্ঘায?িত হলেও এ বিষয়ে সরকারের কোনো মাথাব্যথা নেই। অথচ এই রোগ শতকরা এক শ’ ভাগ প্রতিরোধযোগ্য। সরকারের অবহেলা এবং উদাসীনতায় এটি এখন নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে। প্রায় সারাদেশেই ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে। এর মধ্যে একদিনে হাসপাতালে সর্বোচ্চ ডেঙ্গু রোগী ভর্তি ও সর্বোচ্চ মৃত্যুর সংখ্যা অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। মশক নিধনে সিটি কর্পোরেশনের বাজেট লুটে খাচ্ছে ক্ষমতাসীনরা। মাঝে মাঝে ড্রোন এবং ফগার মেশিন দিয়ে ফটোসেশন করা হচ্ছে। মূলত: মশক নিধনে কোনো ব্যবস্থাই নেয়া হয়নি। শুধু তাই নয়, ডেঙ্গু জ্বর হলে দ্রুত যে ব্যবস্থা নেয়া দরকার সেটিও নিতে পারেনি সরকার। শুধুমাত্র দুর্নীতির কারণে দেশের স্বাস্থ্যখাত ভেঙে পড়েছে। আসলে সরকার প্রতিদিন দেশের অসংখ্য মানুষের জানাযা দেখতেই ভালোবাসে।
এসময় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব গতকাল পল্টনের সমাবেশকে কেন্দ্র করে গ্রেফতারকৃত এবং আহত নেতাকর্মীদের নাম বলে শুনান।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস প্রমুখ।