দেশে অনলাইন জুয়া যেভাবে বিস্তার লাভ করছে, তাতে করে খুব শিগিগরই এটা মহামারির আকার ধারণ করবে। এ নিয়ে ক্ষেত্রবিশেষে প্রশাসনকে নড়েচড়ে বসতে দেখা যায় বটে, কিন্তু অনলাইন জুয়া নামক মহামারি নির্মূলে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে বলে মনে হয় না। পরিবারকে ব্যক্তি ও সমাজজীবনে সবচেয়ে শক্তিশালী ও আদর্শ সংগঠন বলে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে পরিবারও যেন উদাসীন! বেশির ভাগ অভিভাবক সন্তানের জুয়া খেলা নিয়ে তেমন একটা চিন্তিত নন। এটা সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য খারাপ খবর বইকি। অনলাইন জুয়ার রমরমা খেলা শুরু হয় মূলত করোনা মহামারির সময় থেকে। পূর্বে এটা শহর পর্যায়ে থাকলেও ক্রমশ মফস্বল এমনকি দুর্গম গ্রামেও ছড়িয়ে পড়ছে এই ব্যাধি! গ্রামাঞ্চলে কিশোর থেকে শুরু করে পঞ্চাশোর্ধ্ব অনেকেই অনলাইন জুয়ায় আসক্ত। অনলাইন জুয়ায় আসক্তির কারণে অনেক কিশোর পড়াশোনা পর্যন্ত বাদ দিয়ে দিচ্ছেÍকী সাংঘাতিক কথা!
বাংলাদেশের একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে দেখা গেছে, অনলাইন জুয়ার আসরে প্রথম পর্যায়ে কেউ কেউ লাভবান হলেও পরবর্তী সময়ে লোভে পড়ে সর্বস্ব খুইয়েছে। বিরোধে জড়িয়ে অনলাইন জুয়াড়িদের হত্যাকা-ের শিকারে পরিণত হওয়ার খবরও শোনা যায় মাঝেমধ্যে। অথচ চাইলেই এই ‘মরণনেশা’ থেকে সমাজকে রক্ষা করা যায়।
সম্প্রতি স্নাতক ডিগ্রিধারী এক চাকরিপ্রার্থী তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘আমার এলাকার যুবকেরা মোটামুটি সবাই অনলাইনে জুয়ার ডলার বেচাকেনা বা ঐ ধরনের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তারা মাসে একটা বড় অঙ্কের টাকা ইনকামও করেন। এমতাবস্থায়, আমার মতো যারা দু-একজন পড়াশোনা করছে, তাদের সঙ্গে বাড়ির লোকজন ভালো আচরণ করছে না! ডাইরেক্টলি বা ইন্ডাইরেক্টলি মানসিক চাপ দিচ্ছে! যদিও বোঝানোর চেষ্টা করেছি, ওটা অবৈধ কাজ, যখন-তখন পুলিশি মামলা হতে পারে, তবু তারা বুঝতে চায় না। বলে, মামলা হলে ওরা দিব্যি ঘুরে বেড়ায় কীভাবে?’ এক্ষেত্রে প্রশ্ন হলো, এই যুবক যদি পরিবারের চাপে অনলাইন জুয়ায় আসক্ত হয়ে পড়ে বা জুয়ার ভবিষ্যৎ ফলস্বরূপ কোনো বড় ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ে, তখন বাস্তবতাটা কেমন হবে? অর্থাৎ, জুয়া নামক এই আত্মঘাতী মহামারিতে জড়িয়ে পড়ার পেছনে শুধু ব্যক্তির ইচ্ছা-অনিচ্ছাই দায়ী নয়, চারপাশের লোকজনের ভূমিকাও এক্ষেত্রে বিশেষভাবে বিচার্য। অনলাইন জুয়াকে ‘সূক্ষ্ম ফাঁদ’ও বলা যায়। এই ফাদে যে একবার আটকা পড়ে, স্বাভাবিক জীবনযাপন তার জন্য কঠিন হয়ে পড়ে ক্রমাগতভাবে। এক ‘ভিন্ন জগতে’ আটকে যায় জুয়াড়ি। সুতরাং, সমাজ ও দেশ থেকে অনলাইন জুয়ার কালো থাবা দূর করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন তীব্র সামাজিক আন্দোলন। এবং এক্ষেত্রে সংঘবদ্ধ হতে হবে সবাইকে। জুয়ার নেতিবাচকতা সবার সামনে তুলে ধরতে হবে। কীভাবে স্মার্টফোন ইতিবাচকভাবে ব্যবহার করা যায়, এটা শিক্ষার্থীসহ সবাইকে বোঝাতে হবে। পরিবারে যারা অভিভাবক আছেন, তাদের নীতিগতভাবে শক্ত অবস্থানে থাকতে হবে।
অনলাইন জুয়ার নেতিবাচকতা সম্পর্কে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সেমিনারের আয়োজন করা গেলে ভালো ফল পাওয়া যাবে। বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে সংশ্লিষ্টদের। বিভিন্ন বিদেশি জুয়ার অ্যাপ্লিকেশন অনলাইন থেকে সরিয়ে ফেলতে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কিংবা বিভাগকে উদ্যোগী হতে হবে। মনে রাখতে হবে, অনলাইন জুয়া নামক বিষবৃক্ষকে সমূলে উৎপাটন করতে না পারলে শাখা-প্রশাখা গজিয়ে স্থায়ী রূপ লাভ করবে এই নীরব ঘাতক। সুতরাং, আগেভাবেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত।
লেখক : শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়