গণতন্ত্র মঞ্চের নেতৃবৃন্দ বলেছেন, ‘অবৈধ ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার কোনো নীলনকশা এবার আর কাজে আসবে না। গণআন্দোলন, গণঅভ্যুত্থানে অচিরেই এই দখলদার সরকারকে মানুষ বিদায় দেবে।’ এ সময় তারা আরো বলেন, ‘বিরোধী দলহীন তামাশার উপনির্বাচনেও আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাস আর কারচুপি করে জিততে হয়।’ গতকাল মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) বিকেলে রাজধানীর মিরপুর-১২ থেকে গণতন্ত্র মঞ্চের পদযাত্রা-পূর্ব সমাবেশে নেতারা এসব কথা বলেন। এক দফার যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে এ পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। সরকারের পদত্যাগ, অন্তর্র্বতী সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সংবিধান সংস্কারের মাধ্যমে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের এক দফা দাবিতে ঢাকাসহ দেশব্যাপী পদযাত্রার ডাক দেয়া হয়েছিল। পদযাত্রা-পূর্ব সমাবেশে মঞ্চের জাতীয় নেতৃবৃন্দ বলেন, মানুষের ভোটের অধিকার নিয়ে এই সরকারকে ছিনিমিনি খেলতে দেয়া হবে না। নির্বাচনের নামে অবৈধ ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার কোনো নীলনকশাও এবার আর কাজে আসবে না। আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দেশের মানুষ অচিরেই এই সরকারকে বিদায় দেবে। নেতৃবৃন্দ নিজেদের অধিকার আর মুক্তি অর্জনে দেশের মানুষকে রাজপথ দখলে নেয়ার উদাত্ত আহ্বান জানান। গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত পদযাত্রা-পূর্ব সমাবেশে বক্তব্য রাখেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সাংগঠনিক সম্পাদক ইমরান ইমন। সমাবেশ পরিচালনা করেন জেএসডি’র সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন।
সমাবেশ শেষে গণতন্ত্র মঞ্চের পদযাত্রা শুরু হয়ে যানজটের কারণে ১০ নম্বর গোল চত্বরে এসে শেষ হয়।
পদযাত্রায় আরো অংশ নেন মঞ্চের কেন্দ্রীয় নেতা নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ্ কায়সার, ভাসানী অনুসারী পরিষদের সদস্য সচিব হাবিবুর রহমান রিজু, ওয়ার্কার্স পার্টির রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য আকবর খান, গণসংহতি আন্দোলনের সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য বাচ্চু ভূইয়া, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের নেতা দিদারুল ভূইয়া প্রমুখ। সমাবেশে আ স ম আবদুর রব বলেন, ‘এই ভোটচোর দুর্নীতিবাজ ফ্যাসিবাদী সরকারকে দেশের মানুষ আর বরদাস্ত করতে পারছে না। এদের দখলদারিত্ব থেকে দেশ ও জনগণকে উদ্ধার করতে গণআন্দোলনকে গণঅভ্যুত্থানে পরিণত করতে হবে।’ মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘গণআন্দোলনের চাপে এই সরকার এখন বেসামাল। এরা এখন বিদায়ের দিন গুনছে। এই সরকারকে বিদায় দিয়ে আমরা ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করব, কল্যাণকামী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’
সাইফুল হক বলেন, ‘বিরোধী দলহীন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনেও আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক পরাজয় ঘটেছে। হিরো আলমের বিরুদ্ধেও আওয়ামী লীগ কারচুপি ও সন্ত্রাসের আশ্রয় নিতে হয়েছে। আওয়ামী লীগের অধীনে জাতীয় নির্বাচন কেমন হবে গতকাল ঢাকার উপ-নির্বাচনেও তা প্রমাণ হয়েছে।’
জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘এই সরকারের অধীনে যে কোনো জাতীয় নির্বাচন হবে না ঢাকা-১৭-এর উপনির্বাচনে তা আর একবার প্রমাণ হয়েছে। হিরো আলমকে তারা প্রতিপক্ষ বানিয়েছে। এসবের মধ্য দিয়ে সরকারই নিজেদের রাজনৈতিক মৃত্যু ডেকে আনছে।’ রফিকুল ইসলাম বাবলু বলেন, ‘এই সরকারের দখলদারি শাসনে গোটা দেশ ও জনগণকে জিম্মি করে ফেলেছে। দেশের মানুষ এখন এদেরকে বিদায় দিতে প্রস্তুত। চলমান আন্দোলনকে গণঅভ্যুত্থানের পথে নিয়ে যেতে তিনি দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।’
গণতন্ত্র মঞ্চের কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের আহ্বানে দেশের বিভাগীয় শহরসহ জেলাস্তরেও পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ পদযাত্রার কর্মসূচি: আজ (১৯ জুলাই) বেলা ১১টায় ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে গণতন্ত্র মঞ্চের পদযাত্রা শুরু হবে। পুরানা পল্টন, মতিঝিল, ফকিরাপুল হয়ে পদযাত্রা কমলাপুরে গিয়ে শেষ হবে।