কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে উত্তরের বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করলেও এখন কমতে শুরু করেছে। পানি কমতে শুরু করায় নদীপাড় এলাকায় ভাঙন আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে অনেক জায়গায় শুরু হয়েছে ভাঙন। তলিয়ে গেছে ফসল, ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। হুমকির মুখে পড়েছে বিভিন্ন অবকাঠামো। ভাঙন আতঙ্কে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন নদীপাড়ের বাসিন্দারা। ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, রোববার (১৬ জুলাই) বিকেল ৩টায় তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ৪৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। এর আগে শুক্রবার (১৪ জুলাই) বিকেলে বিপৎসীমার ৪০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয় তিস্তা নদীর পানি। ফলে খুলে দেওয়া হয় ব্যারাজের সবকটি জলকপাট।
পানি বাড়ায় তিস্তা নদীর অববাহিকা রংপুরের গঙ্গাচড়া, লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ, হাতীবান্ধা, আদিতমারী, পাটগ্রাম, নীলফামারীর ডিমলাসহ কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধার বিভিন্ন উপজেলার অন্তত ৫০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তিস্তার ভাঙন হুমকিতে পড়েছে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার লহ্মীটারী ইউনিয়নের শংকরদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। নদীভাঙন কাছে চলে আসায় বিদ্যালয়ের মালামালসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ। অস্থায়ী জায়গায় শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিচ্ছেন শিক্ষকরা। বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ইলিয়াছ হোসেন বলেন, ‘তিস্তা নদী ভাঙতে ভাঙতে স্কুলের কাছে চলে এসেছে। তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, শিক্ষা অফিসারের অনুমতি নিয়ে বিদ্যালয়ের মালপত্র সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু করেছি। অন্যত্র অস্থায়ীভাবে ঘর তুলে আমরা ছয়জন শিক্ষক পাঠদান কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। ভাঙনের কারণে অনেক পরিবার অন্যত্র চলে যাওয়ায় স্কুলে শিক্ষার্থীও কমে গেছে।’ লালমনিরহাটের পাঁচ উপজেলায় পানি নেমে যাওয়ার পর দেখা দিয়েছে ভাঙন। হুমকির মুখে পড়েছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কমিউনিটি ক্লিনিক, পাকা ঘরবাড়ি, গাছপালা ও আবাদি জমি। তলিয়ে গেছে ফসল। ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। জেলার পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম-আঙ্গোরপোতা এলাকায় বন্যার পানি প্রবেশ করে রাস্তাঘাট ও ফসলি জমি নষ্ট হয়েছে। দহগ্রামের একমাত্র গুচ্ছগ্রামের রাস্তাটি বন্যার পানিতে তিন জায়গায় ভেঙে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন মানুষ। আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা এলাকার বালুর স্পার বাঁধটি ভেঙে গিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করায় রাস্তাঘাট ভেঙে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তাপাড়ের বাসিন্দা ইয়াসিন আলী বলেন, ‘গতবছর নদীভাঙনের কবলে পড়ে রাস্তার ওপরে একটি ঘর তুলে কোনোরকম বসবাস করছি। এবার আবার নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে।’ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাতীবান্ধা উপজেলার চরসিন্দুর্না এলাকায় ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের একটি কমিউনিটি ক্লিনিক ও সিন্ধুর্না সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি হুমকির মুখে পড়েছে। যেকোনো সময় বিলীন হতে পারে তিস্তার গর্ভে। পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, গত দুদিনে তিস্তার পানি দহগ্রামে প্রবেশ করে কয়েকটি রাস্তা ভেঙে গেছে। কৃষকের প্রায় ১০ হাজার একর জমিতে বালি পড়ে ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। রাস্তাঘাট ভেঙে যাওযায় পরিবারগুলো অনেক কষ্টে চলাচল করছে। হাতীবান্ধা উপজেলার সিন্দুর্না ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আরিফুল ইসলাম আরিফ বলেন, বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কয়েক জায়গায় ভাঙন দেখা দিয়েছে।
কুড়িগ্রামে ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েন নদীপাড়ের কয়েক হাজার পরিবার। তবে রোববার থেকে পানি কমতে শুরু হলেও দেখা দিয়েছে ভাঙন আতঙ্ক। ব্রহ্মপুত্র নদসহ তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার ও গঙ্গাধর নদীর ৩২ কিলোমিটারের ৩৮টি পয়েন্ট ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, ৩২ কিলোমিটারের মধ্যে পাঁচ কিলোমিটার এলাকার ২০টি পয়েন্টে ভাঙনরোধে কাজ চলমান। ভাঙন মোকাবিলায় জরুরি ভিত্তিতে কাজের প্রস্তুতি রয়েছে। রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মাহবুবর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, উত্তরের বিভিন্ন নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। নদী তীরবর্তী এলাকায় বড় ধরনের কোনো ভাঙন দেখা দেয়নি। যেটুকু ভাঙন দেখা দিয়েছে তা মেরামতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।-জাগোনিউজ২৪.কম