জাতিসংঘ খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)-র সদর দফতরে তিন দিনব্যাপী ইউএন ফুড সিস্টেম সামিট বা খাদ্য ব্যবস্থাপনা শীর্ষ সম্মেলন +২ স্টকটেকিং মোমেন্ট (ইউএনএফএসএস+২) গতকাল সোমবার বিকেলে শুরু হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার বিকেলে এখানে এসে পৌঁছান। তিনি এফএও সদর দফতরে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন এবং বিশেষ অতিথি বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখবেন। রোমে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) সদর দফতরে ২৪-২৬ জুলাই ইউএন ফুড সিস্টেম সামিট বা খাদ্য ব্যবস্থাপনা শীর্ষ সম্মেলন +২ স্টকটেকিং মোমেন্ট (ইউএনএফএসএস+২) এ ২০ টিরও বেশি রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানসহ ১৬০ টিরও বেশি দেশ থেকে প্রায় দু’হাজার প্রতিনিধি অংশ নিচ্ছেন।
রোম-ভিত্তিক জাতিসংঘ সংস্থাগুলোর (এফএও, আইএফএডি, ডব্লিওএফপি) সহযোগিতায় জাতিসংঘ সচিবালয়ের উদ্যোগে ইতালিতে আয়োজিত এই শীর্ষ সম্মেলন আনুষ্ঠানিকভাবে স্থানীয় সময় ১৪:৩০টায় উদ্বোধন করা হবে। উদ্বোধন করবেন জাতিসংঘ মহাসচিব এন্তোনিও গুতেরেস এবং ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি।
এছাড়া, উদ্বোধনী আয়োজনে এফএও-এর মহাপরিচালক, কু ডংইউ এবং ইথিওপিয়া, বাংলাদেশ, সামোয়া এবং নেপালের প্রধানমন্ত্রীসহ বেশ কিছু দেশের সরকার প্রধানগণও অংশ নেবেন।
তিন দিন ধরে উচ্চ-পর্যায়ের এ বৈঠকের লক্ষ্য হল ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম খাদ্য ব্যবস্থাপনা শীর্ষ সম্মেলনের পদক্ষেপের প্রতিশ্রুতিগুলোর অগ্রগতি পর্যালোচনা করতে দেশগুলোর জন্য একটি অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি করা এবং স্থায়ী বাধা ও সাফল্য চিহ্নিত এবং অগ্রাধিকার প্রতিষ্ঠা করা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ রোমে ব্যস্ত দিন কাটাবেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর প্রধানমন্ত্রী ‘ফুড সিস্টেম অ্যান্ড ক্লাইমেট অ্যাকশন’ শীর্ষক পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে অংশ নেবেন। একই দিন সন্ধ্যায় তিনি এফএও সদর দপ্তরে বাংলাদেশ-বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কক্ষের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেও যোগ দেবেন। সম্মেলনের ফাঁকে তিনি নেপালের প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দাহালের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন।
এছাড়া, ইতালির কৃষিমন্ত্রী ফ্রান্সেস্কো ললোব্রিগিদা, এফএও মহাপরিচালক কু ডংইউ, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির নির্বাহী পরিচালক সিন্ডি হেনসলে ম্যাককেইন, ইন্টারন্যাশনাল ফান্ড অব এগ্রিকালচারাল ডেভেলপমেন্ট (আইএফএডি)-র প্রেসিডেন্ট আলভারো লারিও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।
এফএও-এর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইউএনএফএসএস+২ স্টকটেকিং সম্মেলনটি হবে রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি এবং বৈশ্বিক, জাতীয় এবং উপ-জাতীয় পর্যায়ে বাস্তবায়নের পথ আরও জোরদার করার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপলক্ষ।
এফএও’র মহাপরিচালক বলেছেন, ‘আমরা যে ঐতিহাসিক কার্যভারের মুখোমুখি হচ্ছি তা স্পষ্ট: কাউকে পেছনে না রেখে একটি উন্নত জীবনের জন্যে উন্নত উৎপাদন, ভাল পুষ্টি, একটি ভাল পরিবেশের জন্য একটি সামগ্রিক, সমন্বিত এবং বিজ্ঞান ভিত্তিক পদ্ধতিতে কৃষিখাদ্য ব্যবস্থাকে আরও দক্ষ, আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক, আরও স্থিতিস্থাপক এবং আরও টেকসই করা করা।
এই উদ্যোগ দেশগুলোর জন্য তাদের কৃষিখাদ্য ব্যবস্থাকে রূপান্তরিত করতে মুখোমুখি হওয়া কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার জন্য প্রয়োজনীয় কাজের রূপরেখা দেওয়ার একটি সুযোগ। এর মধ্যে রয়েছে দ্বন্দ্ব ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের পাশাপাশি অর্থ ও অন্যান্য সম্পদ লাভ করা।
শীর্ষ সম্মেলনটি এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন বিশ্বে একের পর এক জলবায়ু জনিত দুর্যোগ, মহামারি ও সংঘর্ষের কারণে ৭৮ কোটি ৩০ লাখ মানুষ ক্ষুধার সম্মুখীন হচ্ছে, যা ২০১৯ সাল থেকে ১২ কোটি ২০ লাখ বেশি। স্টেট অব ফুড সিকিউরিটি এন্ড নিউট্রেশান বিষয়ে সর্বশেষ ওয়ার্ল্ড রিপোর্টে এ কথা বলা হয়েছে।
এছাড়া বিশ^জুড়েই স্বাস্থ্যকর খাদ্য লাভের সক্ষমতা কমেছে। বিশ্বজুড়ে ২০২১ সালে ৩.১ বিলিয়ন কিংবা ৪১ শতাংশ লোক স্বাস্থ্যকর খাবার পেতে সক্ষম হয়নি।
এফএও এর প্রধান অর্থনীতিবিদ ম্যাক্সিমো টোরেরো সম্প্রতি এক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে সতর্ক করে বলেছেন, “ভবিষ্যতেও এ অবস্থা চলতে থাকলে বিশে^ ২০৩০ সালের মধ্যে ৬০কোটি লোক দীর্ঘস্থায়ীভাবে অপুষ্টিতে ভুগবে, যা জিরো হাঙ্গার লক্ষ্য থেকে অনেক দূরে।”