বৃহস্পতিবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৩৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
গলাচিপা জাতীয় ইদুঁর নিধন অভিযান র‌্যালি সহ উদ্বোধন জামালপুর জেলা জনস্বাস্থ্য ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের স্বাস্থ্য স্যানিটেশন উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় ৩৫০ কোটি টাকার কাজ দৃশ্যমান লোহাগাড়ায় সেনাবাহিনীর অভিযানে ইয়াবাসহ ব্যবসায়ী বাইট্টা কাশেম আটক কেরানীগঞ্জে চাঁদা না দেওয়ায় কৃষি জমিতে হামলায় ১০ লক্ষ টাকার ক্ষতিসাধন, সংবাদ সম্মেলন হোসেনপুরের যৌতুক লোভী স্বামীর নির্যাতনে অতিষ্ঠ কলেজ ছাত্রী দীপার ভবিষ্যত অনিশ্চিত: ন্যায় বিচার দাবি সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন সাতক্ষীরায় ছেলে ও তার স্ত্রীর হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েও মামলা করতে চাননা অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক বাবা কেরানীগঞ্জে রতঘরিয়া ইউনিয়নে কর্মীসভা শহীদ আবু সাঈদ, মুগ্ধ ও শাহরিয়ারের নামে পাঠাগার ফলজ বনজ-বাগানের সাথী ফসল হলুদ চাষের মডেল কৃষানী নাসরিন

প্লাটিলেটের ‘অপ্রয়োজনীয়’ চাহিদা অস্বাভাবিক কেন

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৩

রুমানা গত চার দিন ধরে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। ডেঙ্গু শনাক্ত হওয়ায় এবং রক্তে প্লাটিলেটের পরিমাণ ৮০ হাজারের নিচে নেমে আসায় চিকিৎসক তাকে প্লাটিলেট নেওয়ার পরামর্শ দেন। রুমানার স্বামী প্লাটিলেটের খোঁজে ব্লাড ব্যাংকে যোগাযোগ করেন। তবে কয়েক জায়গায় যোগাযোগের পর অনেক চেষ্টায় এক ব্যাগ প্লাটিলেট জোগাড় করতে সক্ষম হন। ব্লাড ব্যাংক থেকে তাকে জানানো হয়— ডেঙ্গু রোগী বেড়ে যাওয়ার কারণে প্লাটিলেটের চাহিদা বেড়ে গেছে বহুগুণে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন,ভয় থেকে চিকিৎসায় অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার বেড়েছে। ৮০-৯০ শতাংশ ক্ষেত্রেই প্লাটিলেটের অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার হচ্ছে।’
দেশে ডেঙ্গু রোগী বাড়ছে হু হু করে। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত (২৫ জুলাই) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩৫ হাজার ২৭০ জন। এদের মধ্যে শুধু ঢাকায় রোগীর সংখ্যা ২১ হাজার ১৮৭ জন। আর এ বছর দেশে ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ১৮৫ জনের। তাদের মধ্যে ১৪৮ জনই ঢাকায় অবস্থান করছিলেন। দেখা গেছে, ডেঙ্গুতে মৃত্যুবরণকারীদের বেশিরভাগই নারী। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মতে, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর অন্যতম কারণ দেরিতে হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া। কারণ, বেশিরভাগ রোগী মারা যাচ্ছেন হাসপাতালে ভর্তির অল্প কিছু দিনের মধ্যেই।
চিকিৎসকদের মতে, শুধু ডেঙ্গু নয়, রক্তে ইনফেকশন থাকলে, কিংবা জ্বর হলে প্লাটিলেটের পরিমাণ কিছু হলেও কমে। ডেঙ্গু হলেই চিকিৎসার জন্য প্লাটিলেট লাগবে— এমন ধারণাকে ভ্রান্ত বলছেন তারা। কারণ, সবার প্লাটিলেটের প্রয়োজন হয় না। তবে আশঙ্কাজনক-হারে ডেঙ্গু রোগী বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে প্লাটিলেটের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় অনেকে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। কেউ কেউ মনে করেন, চিকিৎসকরা নিজেদের নিরাপদ জায়গায় রাখতেই অনেক ক্ষেত্রে প্লাটিলেট দিতে বলেন। বৈশ্বিক গাইডলাইনে রক্তে প্লাটিলেটের পরিমাণ ১০ হাজার হলে প্লাটিলেট দেওয়ার কথা চিন্তা করা যায়, এমনটি বলা হয়েছে।
রাজধানীর বিভিন্ন ব্লাড ব্যাংকের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে প্লাটিলেটের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে কয়েক গুণ। প্রতি দিন গড়ে ২০০ থেকে ২৫০ মানুষ প্লাটিলেটের খোঁজ করেন বলে জানান তারা। অন্যান্য সময় এই চাহিদা থাকে ৪০ থেকে ৫০ ব্যাগ। রাজধানীর গ্রিন রোডে অবস্থিত একটি ব্লাড ব্যাংক ও ট্রান্সফিউশন সেন্টারের কর্মকর্তা মিজান বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, যেভাবে প্লাটিলেটের ডিমান্ড পাওয়া যাচ্ছে, তাতে আমরা বেশ শঙ্কিত। এ রকম চাহিদা অন্য কোনও সময় পাওয়া যায় না। চিকিৎসকের পরামর্শপত্রে প্লাটিলেট কাউন্ট দেখা যাচ্ছে— ৭০ হাজার ৮০ হাজার এরকম। তারপরও নেওয়া হচ্ছে। আমরা তো মানা করতে পারি না। কারণ, চিকিৎসক ভালো বোঝেন যে, রোগীকে প্লাটিলেট দেওয়া যাবে কিনা।
প্লাটিলেটের বর্তমান চাহিদাকে অস্বাভাবিক বলে মনে করেন ব্লাড ট্রান্সফিউশন বিশেষজ্ঞ এবং শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক ডা. আশরাফুল হক। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের এখানে যে পরিমাণ চাহিদা আসে, তা স্বাভাবিকের চেয়ে দুই-তিন গুণ বেশি। এখানে ডিমান্ড থাকে মূলত ক্যানসার রোগীদের জন্য। আমরা বিভিন্ন সময়ে রিকুইজিশনে দেখার চেষ্টা করি যে, কী কারণে দেওয়া হচ্ছে। রোগী দেখা যাচ্ছে ডেঙ্গুর, প্লাটিলেট কাউন্ট আছে ৮০-৯০ হাজার।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভয় থেকে চিকিৎসায় প্লাটিলেট ব্যবহার বেড়েছে বলে মনে হচ্ছে। চিকিৎসকরা হয়তো ভয় পাচ্ছেন— রোগীর পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার, তাই আগে-ভাগে দিয়ে দিচ্ছেন। ভয় থেকে চিকিৎসার কারণে অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার বেড়েছে। ৮০-৯০ শতাংশ ক্ষেত্রেই প্লাটিলেটের অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার হচ্ছে।’
প্লাটিলেট কাদের প্রয়োজন হয়, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গুতে প্লাটিলেট কমে যাবে— এটা খুবই স্বাভাবিক একটি বিষয়। ডেঙ্গুর কারণে আমাদের শরীরে প্লাটিলেটের স্বাভাবিক উৎপাদন প্রক্রিয়া কমে যায়। আবার উৎপাদন ঠিক থাকলেও অনেক সময় উৎপাদনের চেয়ে ভেঙে যাওয়ার পরিমাণও বেশি হয়। আমাদের শরীরে যদি কোনও ইনফেকশন কিংবা জ্বর থাকে, ডেঙ্গু না হলেও প্লাটিলেট কমে যায়। যাদের ক্ষেত্রে প্লাটিলেট একেবারেই কম এবং রক্তপাত হচ্ছে, তখনই আসলে রোগীর প্লাটিলেটের প্রয়োজন হয়।’
ডা. আশরাফুল হক বলেন, ‘অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, প্লাটিলেট কাউন্ট ৮০ হাজার, কিন্তু রক্তপাত হচ্ছে। আবার কাউন্ট দেখা যায় ৫ হাজার, কিন্তু রোগী ঠিক আছে। এটি যে শুধু প্লাটিলেট কম সেজন্য হচ্ছে না, রক্ত জমাট বাঁধার প্রক্রিয়ায় প্লাটিলেটের সঙ্গে অনেক কিছু জড়িত। সেই কারণেও রক্তপাত হয়। এ জন্য বৈশ্বিক গাইডলাইনে বলা হয়েছে— ১০ হাজার কাউন্ট হলে প্লাটিলেট দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু রোগীর শারীরিক অবস্থার ওপর বিষয়টি নির্ভর করে।’ অপ্রয়োজনীয় প্লাটিলেট ব্যবহারের কারণে রোগীর চিকিৎসা দীর্ঘায়িত হতে পারে বলেও জানান তিনি। ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসায় প্লাটিলেটের অস্বাভাবিক ব্যবহারের মাধ্যমে রোগীকে পুঁজি করে ব্যবসা না করার আহ্বান জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম। তিনি জানান, ডেঙ্গু চিকিৎসার জন্য তৈরি করা প্রটোকলে পরিষ্কার বলা আছে— কখন প্লাটিলেট দেওয়া প্রয়োজন, কখন না।’-বাংলাট্রিবিউন




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com