বৃহস্পতিবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৪৮ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
গলাচিপা জাতীয় ইদুঁর নিধন অভিযান র‌্যালি সহ উদ্বোধন জামালপুর জেলা জনস্বাস্থ্য ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের স্বাস্থ্য স্যানিটেশন উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় ৩৫০ কোটি টাকার কাজ দৃশ্যমান লোহাগাড়ায় সেনাবাহিনীর অভিযানে ইয়াবাসহ ব্যবসায়ী বাইট্টা কাশেম আটক কেরানীগঞ্জে চাঁদা না দেওয়ায় কৃষি জমিতে হামলায় ১০ লক্ষ টাকার ক্ষতিসাধন, সংবাদ সম্মেলন হোসেনপুরের যৌতুক লোভী স্বামীর নির্যাতনে অতিষ্ঠ কলেজ ছাত্রী দীপার ভবিষ্যত অনিশ্চিত: ন্যায় বিচার দাবি সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন সাতক্ষীরায় ছেলে ও তার স্ত্রীর হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েও মামলা করতে চাননা অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক বাবা কেরানীগঞ্জে রতঘরিয়া ইউনিয়নে কর্মীসভা শহীদ আবু সাঈদ, মুগ্ধ ও শাহরিয়ারের নামে পাঠাগার ফলজ বনজ-বাগানের সাথী ফসল হলুদ চাষের মডেল কৃষানী নাসরিন

আশুরার তাৎপর্য ও করণীয়

মুফতি রফিকুল ইসলাম আল মাদানী
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২৮ জুলাই, ২০২৩

হিজরি সনের প্রথম মাস মহররম। মহররম শব্দের অর্থ মর্যাদাপূর্ণ। অনেক ইতিহাস-ঐতিহ্য ও রহস্যময় তাৎপর্য নিহিত আছে এ মাস ঘিরে। এসব কারণেই এ মাসটি মর্যাদাপূর্ণ। তাই এ মাসের নামকরণ হয়েছে মহররম বা মর্যাদাপূর্ণ মাস। এ মাসের ১০ তারিখে আমাদের মধ্যে প্রতিবছর ঘুরে আসে মুসলিম বিশ্বের তাৎপর্যপূর্ণ সেই আশুরার দিন। এ দিনের সর্বাপেক্ষা আলোড়িত ও আলোচিত বিষয় হলো কারবালার ইতিহাস। মূলত এ দিনের তাৎপর্য, ইতিহাস ও ঐতিহ্য আরো প্রাচীন। কারবালার মর্মান্তিক ঘটনা এ দিনের একটি বিরল ও মর্মান্তিক ঘটনা। এ দিনে যা যা ঘটেছে এর দাস্তান অনেক লম্বা এবং অনেক আগের। আশুরার ইতিহাসে সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য ও স্মরণীয় ঘটনার শীর্ষে স্থান পায় মুসা (আ.)-এর একটি ঘটনা। এই দিনে তিনি অত্যাচারী শাসক ফিরাউনের কবল থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন।
মহাপরাক্রমশালী প্রভু আল্লাহপাক সেদিন চিরকালের জন্য নীল নদে ডুবিয়ে শিক্ষা দিয়েছিলেন ভ্রান্ত খোদা দাবিদার ফিরাউন ও তার বিশাল বাহিনীকে। এ ঘটনার বিবরণে ইমাম বুখারি (রহ.) সাহাবি হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণনা করেন, ‘মহানবী (সা.) হিজরত করে মদিনায় পৌঁছে মদিনার ইহুদিদের আশুরার দিনে রোজা পালন করতে দেখেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাদের জিজ্ঞেস করেন, এই দিনে কী ঘটেছে যে তোমরা এতে রোজা পালন করো? তারা বলে, এই দিনটি অনেক বড় দিন, এই দিনে আল্লাহ তাআলা মুসা (আ.) ও তাঁর সঙ্গীদের ফিরাউন থেকে মুক্ত করেছিলেন এবং ফিরাউন ও তার বাহিনীকে ডুবিয়ে মেরেছিলেন। এর কৃতজ্ঞতাস্বরূপ মুসা রোজা রাখতেন, তাই আমরাও আশুরার রোজা পালন করে থাকি। ইহুদিদের জবাব শুনে রাসুলে করিম (সা.) বলেন, মুসা (আ.)-এর কৃতজ্ঞতার অনুসরণে আমরা তাদের চেয়ে বেশি যতœশীল হওয়ার অধিকারী। অতঃপর তিনি নিজেও আশুরার রোজা রাখেন এবং মুসলমানদের তা পালন করতে নির্দেশ প্রদান করেন।’ (বুখারি, হাদিস : ৩৩৯৭, মুসলিম, হাদিস : ১১৩৯)
আশুরার রোজার ফজিলত: রাসুলুল্লাহ (সা.) এই রোজা নিজে পালন করেছেন এবং উম্মতকে রাখার প্রতি নির্দেশ করেছেন, তাই তাঁর অনুসরণ করা আমাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া অসংখ্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) আশুরার রোজার ফজিলত বর্ণনা করেছেন। কয়েকটি নিম্নে উপস্থান করা হলো:আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘রমজান মাসের রোজার পর সর্বোত্তম রোজা মহররম মাসে আশুরার রোজা।’ (সুনানে কুবরা, হাদিস : ৮৪২১০) আবু কাতাদা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে আশুরার রোজার ফজিলত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, এই রোজা বিগত বছরের গুনাহ মুছে দেয়। (মুসলিম, হাদিস : ১১৬২)
আশুরার রোজা কয়টি ও কখন: মুসলিম শরিফে ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) যখন আশুরার দিনে রোজা রাখেন এবং অন্যদেরও রোজা রাখার নির্দেশ প্রদান করেন, তখন সাহাবিরা অবাক হয়ে বলেন, হে আল্লাহর রাসুল, বিধর্মীরা তো এই দিনটিকে বড় দিন মনে করে। এই দিনে তারাও রোজা পালন করে। আমরা যদি এই দিনে রোজা রাখি তাহলে তো এদের সঙ্গে সামঞ্জস্য হবে। তাদের প্রশ্নের জবাবে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন (তারা যেহেতু এদিন একটি রোজা পালন করে), আগত বছর ১০ তারিখের সঙ্গে ৯ তারিখ মিলিয়ে দুই দিন রোজা পালন করব, ইনশাআল্লাহ। (মুসলিম, হাদিস : ১১৩৪) অন্য বর্ণনায় রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমরা আশুরার দিনে রোজা রাখো, তবে এ ক্ষেত্রে ইহুদিদের সঙ্গে মিল না হওয়ার জন্য ১০ তারিখের আগের দিন অথবা পরের দিন আরো একটি রোজা রেখে নিয়ো।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ২১৫৪) উপরোক্ত হাদিসগুলোর আলোকে প্রমাণিত হয় যে আশুরার রোজা হবে দুটিÍমহররমের ১০ তারিখ একটি, আর ৯ তারিখ অথবা ১১ তারিখ আরো একটি।
আশুরার দিন অন্য আমল: আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি আশুরার দিনে আপন পরিবার-পরিজনের মধ্যে পর্যাপ্ত খানাপিনার ব্যবস্থা করবে, আল্লাহপাক তার জন্য সারা বছর পর্যাপ্ত রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন।’ (তাবরানি, হাদিস : ৯৩০৩) বেশ কয়েকজন সাহাবি থেকে এ হাদিস বর্ণিত। হাদিসটির ব্যাপারে ইমামদের মধ্যে কিছু মতপার্থক্য আছে। ইমাম সুয়ুতিসহ অনেক বড় ইমামের মতানুসারে হাদিসটি গ্রহণযোগ্য ও আমলযোগ্য। (জামেউস সাগির : ১০১৯) অতএব, কোনো মুসলমান যদি উপরোক্ত হাদিসের ওপর আমল করার উদ্দেশ্যে আশুরার দিন তাদের খানাপিনায় উন্নত ব্যবস্থা করতে আগ্রহ করে, তাহলে তার অনুমতি আছে। তবে কোনো ক্ষেত্রেই অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করাকে ইসলাম সমর্থন করে না। লেখক : কলামিস্ট ও গবেষক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বসুন্ধরা, ঢাকা




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com