রাজনৈতিক কর্মসূচি এবং ছুটির দিনের প্রভাব পড়েছে চলতি বছরের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশের পরের সেই চিরাচরিত উৎসবে। ছুটির দিন হওয়ায় এবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাসের চিত্র তেমন চোখে পড়েনি, মিষ্টির দোকানেও ক্রেতা কম। ফলে বিক্রি কম হওয়ায় হতাশ মিষ্টির দোকানিরা।
গতকাল শুক্রবার (২৮ জুলাই) বিকেল তিনটায় সরেজমিনে রাজধানীর শংকর মোড়ে ভাগ্যকুল মিষ্টান্ন ভা-ারে প্রায় ১০ মিনিট অপেক্ষা করে দেখা মিললো মাত্র একজন ক্রেতার। এক কেজি মিষ্টি কেনেন ওই ক্রেতা।
মিষ্টির দোকানের ব্যবস্থাপক শংকর সরকার বলেন, আগের মতো পরিস্থিতি থাকলে এ সময় দোকানের সামনে লাইন পড়ে যেতো। আজ কোনো ক্রেতা নেই, বসে আছি।
তিনি বলেন, বড় দুই দলের সমাবেশের কারণে রাস্তাঘাট ফাঁকা। গোলমালের আশঙ্কায় অনেকেই ঘর থেকে বের হননি। এরমধ্যে দুপুরে বৃষ্টি হলো। অন্যদিকে ছুটির দিনে ফল প্রকাশ হওয়ার কারণে অফিসগুলোতে অবিভাবকদের মিষ্টিমুখ করানোর প্রচলন চলছে না। সব মিলিয়ে এ বছর বিক্রি খুব খারাপ। সাধারণত এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের দিন রাজধানী ঢাকার মিষ্টির দোকানগুলোতে প্রচুর বিক্রি হয়। ফল প্রকাশের পর থেকেই ভালো ফল করা শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকেরা মিষ্টির দোকানে আসেন প্রিয়জনকে সুখবর দিয়ে মিষ্টিমুখ করানোর জন্য। বিশেষ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর আশপাশের মিষ্টির দোকানগুলোতে এমন দিনে উপচে পড়া ভিড় থাকে। তবে এবার বিক্রি ভালো নয় বলে জানান বিক্রেতারা।
দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের সমাবেশ এলাকার আশপাশের মিষ্টির দোকানগুলোতে ভিড় আরও কম। পল্টনের মুসলিম সুইটসের ম্যানেজার তারিকুল ইসলাম বলেন, রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে বেচাবিক্রি নেই। কর্মসূচি শেষে বিক্রি হতে পারে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, এমন বিশেষ দিনগুলোতে মিষ্টি প্রস্তুতকারীদের আগাম প্রস্তুতি থাকে। প্রতিদিনের তুলনায় দুই থেকে চারগুণ পর্যন্ত হরেক রকমের মিষ্টি তৈরি করে রেখেছেন তারা। এ পরিস্থিতিতে লোকসানের আশঙ্কা বিক্রেতাদের।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার খ্যাতনামা মিষ্টির দোকানগুলোতে দেখা যায়, ক্রেতা নেই বললেই চলে। বেইলি রোডের আশপাশে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সিদ্ধেশ্বরী গার্লস স্কুলসহ বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। প্রতিবছর এদিন এখানকার মিষ্টির দোকানগুলোতে প্রচুর ভিড় থাকে। তবে আজ দুপুর পর্যন্ত এসব দোকানে বাড়তি বেচাকেনা হয়নি। পরীক্ষার্থী বা তাদের অভিভাবকরাও স্কুলগুলোতে তেমন আসেননি।
তারিকুল ইসলাম নামের এক দোকানি বলেন, খুব দরকার ছাড়া লোকজন আজ ঘর থেকে তেমন বের হয়নি। আর আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে মিষ্টি পাঠানোর পরিস্থিতিও নেই। এসব কারণে এবার এসএসসি পরীক্ষার ফলকে কেন্দ্র করে কোনো বিক্রি নেই।
মিষ্টি ব্যবসায়ীরা জানান, রাজধানীতে তাদের সংগঠনভুক্ত মিষ্টির দোকান রয়েছে প্রায় সাড়ে ৫শ। এ ছাড়া অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য নয়, এমন অনেক দোকান আছে। আবার অনেক বেকারিতে মিষ্টি বিক্রি হচ্ছে। সব মিলিয়ে দোকানের সংখ্যা এক হাজার মতো হবে। এসএসসি, এইচএসসিÍ এই দুই বড় পাবলিক পরীক্ষার ফল প্রকাশের দিন ছাড়াও পহেলা বৈশাখ, পহেলা ফাল্গুনে মিষ্টির দোকানগুলোতে বিক্রি বাড়ে কয়েকগুণ। তবে এখন নানা কারণে বিশেষ দিনগুলোতে আগের মতো বিক্রি নেই। বড়ই মন্দা চলছে মিষ্টির ব্যবসায়।