রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫, ১১:১৭ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আজ ৮৯তম জন্মবার্ষিকী নগরকান্দায় দু’গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষ, ওসি, সাংবাদিকসহ আহত- ৩০ কালীগঞ্জে নানা সংকটে গ্রাম আদালত সুফল পেতে প্রয়োজন কার্যকরী উদ্যোগ কটিয়াদীতে তারুণ্যের উৎসব উদযাপন, ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল ম্যাচ মুন্সীগঞ্জে লুন্ঠিত মালামালসহ ৭ ডাকাত গ্রেফতার লক্ষ্মীপুর ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজে বর্ণিল পিঠা উৎসব ছয় মাসেও উদ্ধার হয়নি নিখোঁজ অন্তঃস্বত্তা গৃহবধূ স্বপ্না হিলির রেললাইনের ধারে খেজুর রস নামাতে ব্যস্ত গাছিরা মোহাম্মদিয়া ইসলামী যুব সংঘের উদ্যোগে তাফসীরুল কোরআন মাহফিল সম্পন্ন গাইবান্ধায় ছোটবোন ও পরিবারের নিরাপত্তা চেয়ে নির্যাতিত গৃহবধূর সংবাদ সম্মেলন

মূল্যস্ফীতি: আফগানিস্তান-শ্রীলঙ্কায় কমলেও বাড়ছে বাংলাদেশে

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৮ আগস্ট, ২০২৩

যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানে নিত্যপণ্যের দামের কথা শুনলেই একসময় আঁতকে উঠতে হতো। সেই আফগানিস্তানে গতমাসে মূল্যস্ফীতি ছিল ঋণাত্মক ২ দশমিক ৮। দেউলিয়া হয়ে পড়া শ্রীলঙ্কায় মূল্যস্ফীতি এখন ৬ শতাংশের মধ্যে। শুধু দক্ষিণ এশিয়াই নয়, বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারলেও বাংলাদেশ এখনো ব্যর্থ। অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাই শেষে মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ। অথচ চলতি অর্থবছরের সরকারের মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ৬ শতাংশের মধ্যে। গত রোববার (৬ আগস্ট) বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদনে মূল্যস্ফীতির এসব তথ্য উঠে এসেছে। হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, বছরের প্রথম মাসে মূল্যস্ফীতির হার ৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ। আগের মাসেও প্রায় একই হার ছিল, ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ। দ্রব্যমূল্যের কেনাকাটায় জুলাই মাসে শহরের মানুষের চেয়ে গ্রামের মানুষের কষ্ট হয়েছে বেশি। শহরের চেয়ে গ্রামে মূল্যস্ফীতি কিছুটা বেশি।
জুলাইয়ে ৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ সার্বিক মূল্যস্ফীতির অর্থ হলো ২০২২ সালের জুলাইয়ে দেশের মানুষ যে পণ্য বা সেবা ১০০ টাকায় পেয়েছিলেন, চলতি বছরের জুলাইয়ে তা কিনতে ১০৯ টাকা ৬৯ পয়সা খরচ করতে হয়েছে। বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনতে সক্ষম হলেও বাংলাদেশে কোনোভাবেই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ঠেকানো সম্ভব হচ্ছে না। সরকার, ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সব মহলেরই মূল্যস্ফীতি বেশি হওয়ার ব্যাখ্যা থাকে ‘রাশিয়া-ইউক্রেন’ যুদ্ধ। যদিও বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ তাদের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছে। এ প্রসঙ্গে পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ মানেই ১০ শতাংশের কাছাকাছি। এটাকে কমছে বলা যাবে না, এটি প্রায় অপরিবর্তিতই রয়েছে। তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি তো বাড়বেই, কারণ সরকার এটি কমানোর জন্য কার্যকর কোনো পদক্ষেপ হাতে নেয়নি। ট্রেড ইকোনোমিকসের তথ্যমতে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের চেয়ে এ মুহূর্তে বেশি মূল্যস্ফীতি রয়েছে পাশের দেশ মিয়ানমার ও পাকিস্তানে। আফগানিস্তানে জুন শেষে মূল্যস্ফীতি মাইনাস ২ দশমিক ৮ শতাংশ, ২০২২ সালে দেউলিয়া হয়ে পড়া শ্রীলঙ্কায় ৬ দশমিক ৩ শতাংশ। অথচ শ্রীলঙ্কায় আগের মাসেও মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১২ শতাংশের ওপরে। মাসের ব্যবধানে প্রায় অর্ধেক কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার আলোচিত এ দেশটি।
অর্থনীতিতে কাবু হয়ে থাকা মধ্য আফ্রিকায় মে মাসে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৮ শতাংশের বেশি। কিন্তু জুন মাসে তাদের মূল্যস্ফীতির হার ৫ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। অন্য দেশে মূল্যস্ফীতি কমলেও বাংলাদেশে কমছে না। এর কারণ হিসেবে ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, অন্য দেশগুলো সবাই সতর্ক হয়েছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে। এখন বাংলাদেশে যদি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে হয় তাহলে সুদের হার আরও অনেক বাড়াতে হবে। সুদের হার না বাড়ালে মূল্যস্ফীতি কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না।
সরকারি হিসাবে দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি সামান্য কমেছে। তবে, খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। বিবিএস মূল্যস্ফীতির হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ। খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ। আগের মাস অর্থাৎ গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের শেষ মাস জুনে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ। আর খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ। এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, জুলাই মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি সামান্য কমলেও খাদ্য মূল্যস্ফীতি কিছুটা বেড়েছে। আর ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ খাদ্য মূল্যস্ফীতির অর্থ হলো ২০২২ সালের জুলাই মাসে দেশের মানুষ যে খাদ্য ১০০ টাকায় পেয়েছিলেন, চলতি বছরের জুলাইয়ে তা কিনতে ১০৯ টাকা ৭৩ পয়সা খরচ করতে হয়েছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে দেশে দেশে মূল হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয় সুদের হারকে। বিশ্বের প্রায় সব দেশই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য নীতি সুদহার বাড়িয়ে দেয়। এটি করে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপসহ আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোও তাদের দ্রব্যমূল্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে গত জুনের মুদ্রানীতিতে সুদের হার কিছুটা বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়া হলেও তা অনেকটা নিয়ন্ত্রিত। সুদহারের সীমা প্রত্যাহার করা হলেও পরোক্ষভাবে তা নিয়ন্ত্রণ করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
গতবছরের মার্চে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশে যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতির পারদ প্রায় ৯ শতাংশে উঠেছিল; যা ছিল ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। বর্তমানে দেশটির মূল্যস্ফীতি মূল্যস্ফীতি ৫ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়; চীন, ভারত, কানাডা, ব্রাজিলসহ ছোট-বড় সব দেশেই স্পর্শকাতর এ সূচকটি সহনীয় পর্যায়ে চলে এসেছে। কিন্তু বাংলাদেশে এখনো ১০ শতাংশের কাছাকাছি অবস্থান করছে। কমার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামে ঊর্ধ্বগতি এবং ডলারের মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতির হারে নিয়ন্ত্রণ আসছে না। বরং তা বেড়ে যাচ্ছে। এ দুই কারণেই সাম্প্রতিক সময়ে মূল্যস্ফীতিতে বাড়তি চাপের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে মূল্যস্ফীতির হার ৮ শতাংশের ঘর থেকে বেড়ে ১০ শতাংশের কাছাকাছি চলে এসেছে।
চাপ বাড়ার নেপথ্যে আরও রয়েছে বৈশ্বিক অস্থিরতায় পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হওয়া, বিশ্ববাজারে পণ্যমূল্য লাগামহীন বৃদ্ধি এবং দেশের বাজারে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি। ফলে আমদানি করা পণ্যের দাম বেড়েছে। এর প্রভাবে অন্যসব পণ্যেরও দাম বেড়েছে। এসব মিলে চাপ বেড়েছে মূল্যস্ফীতিতে। সরকারি হিসাবে সদ্যবিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরের শেষ মাস জুনে পয়েন্ট টু পয়েন্টভিত্তিতে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ। এ মুহূর্তে বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের বেশি নিয়ে শুরু হয়েছে অর্থবছর। যা বাজেটের লক্ষ্যের চেয়ে ৩ দশমিক ৪২ শতাংশীয় পয়েন্ট বেশি। ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে গড় মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৬ শতাংশে আটকে রাখার লক্ষ্য ধরেছিল সরকার। কিন্তু বছর শেষে তা গড়ে ৯ শতাংশের কাছাকাছি ছিল।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com