ছেলের সঙ্গে এসএসসি পাশ ভূমিহীন বিধবা লিপি আক্তার দর্জিগিরি করে সংসার চালাতেন এবং তিন সন্তানের পড়ার খরচ জোগাতেন। গুরুদাসপুরের নাজিরপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ছেলে লিয়াকত হোসেন বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে জিপিএ ৫ পেয়েছে। একই সঙ্গে সিংড়ার চককালিকাপুর টেকনিক্যাল বিএম কলেজ থেকে জিপিএ ৪.৫৪ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন মা লিপি আক্তার। মা ছেলের এসএসসি জয়ের ঘটনা বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। জানা যায়, স্বামী লোকমান হোসেনের সাথে ২০০২ সালে লিপির বিয়ে হয়। লোকমান ছিটকাপড় ফেরি করতেন। পাঁচ বছর আগে দুটো কিডনি অকেজো হয়ে তিনি মারা গেলে সংসারের হাল ধরেন লিপি। লিপি জানান স্বামী দশবছর অসুস্থ ছিলেন। শেষ সম্বল বসতভিটা বিক্রি করে তার চিকিৎসা করিয়েছেন। তার মৃত্যু হলে দর্জিগিরির পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে দর্জি প্রশিক্ষক হিসাবে কাজ করতেন। এভাবে বড় মেয়ে লিমা খাতুনকে রানীভবানী সরকারি কলেজে এবং ছোট মেয়ে লিজাকে নাজিরপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে পড়ার খরচ জোগান তিনি। ছেলেকে ভালো কলেজে পড়ানোর ইচ্ছা তার। কিন্তু অত সামর্থ নেই তার। এছাড়া আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে তারও কলেজে ভর্তি হওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। সিংড়ার চামারী ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামের বিধবা লিপি আক্তার তার এসএসসি পাশ সম্পর্কে বলেন, সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরের খুকনি বাজারে ছিল বাপের বাড়ি। সেখানেও দারিদ্রতার কারণে স্কুলে যাওয়া হয়নি তার। স্বামীর ইচ্ছায় কোনমতে বাংলা পড়া শিখেছেন। ছেলেকে পড়ালেখায় সহযোগিতা করতে গিয়ে তারও ইচ্ছা জাগে এসএসসি পাশ করার। ছেলের কাছ থেকেই পড়া শিখিয়ে নিতেন তিনি। লিপি সংগ্রামী মানুষ। এইচএসসিতে আরো ভালো রেজাল্ট করে চমক সৃষ্টি করতে চান তিনি। ভালো মানুষ হিসাবে এলাকায় তার জনপ্রিয়তা লক্ষ্য করা গেছে। তার এসএসসি জয়ে এলাকাবাসীকে উচ্ছাস করতে দেখা গেছে। চামারী ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান স্বপন বলেন, চেষ্টা করলে অসম্ভব কিছুই না। সুন্দর ব্যাবহারের কারণে লিপি আক্তার মহিলা ইউপি সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু তার যা আয় হয় তা দিয়ে তিন সন্তানের পড়ালেখার খরচ জোগানো তার জন্য কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।