দিল্লিতে তিন দিনের সফর শেষে গত বুধবার (২৩ আগস্ট) সন্ধ্যায় ঢাকায় ফিরেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের এমপি। এই সফরে কার কার সাথে বৈঠক এবং কী বিষয়ে আলোচনা হয়েছে- এ নিয়ে গণমাধ্যমকে বিস্তারিত বলতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন তিনি।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মেই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন জাতীয় পার্টির এই শীর্ষ নেতা। এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জি এম কাদের বলেন, আমি ভারত সরকারের আমন্ত্রণে সেখানে গিয়েছিলাম। সেখানে বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সাথে খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। সেই আলোচনা কার সাথে হয়েছে বা কী বিষয়ে হয়েছে এ প্রসাথে বিস্তারিত বলতে পারবো না। কারণ আলাপগুলো ওইভাবেই হয়েছে। উনারা যদি কিছু প্রকাশ করতে চান করবেন, আমার পক্ষ থেকে উনাদের পারমিশন (অনুমতি) ছাড়া কিছু বলতে পারবো না। তবে দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে সফরে বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে খুব একটা আলোচনা হয়নি উল্লেখ করে জাপা চেয়ারম্যান বলেন, তবে উনারা একটা ভালো নির্বাচন দেখতে চান। এটা সময়মতো যেন হয়। নির্বাচনের আগে-পরে কোনো ধরনের সহিংসতা বা সাধারণ মানুষের জীবনধারায় অনিশ্চিত কিছু না হয়। এটা হলে উনারা খুশি হবেন। কারণ বাংলাদেশে ভারতের বিভিন্ন ধরনের বিনিয়োগ রয়েছে।
জি এম কাদের আরো বলেন, উনারা আশা প্রকাশ করেন যে, বাংলাদেশের সাথে সুসম্পর্ক থাকলে, বাংলাদেশ স্থিতিশীল থাকলে, সুন্দর নির্বাচনের মাধ্যমে পরবর্তী সরকার যদি গঠিত হয়, তাহলে তাদের পক্ষে এসব কাজ করা সহজ হবে। উনারা প্রত্যাশা করেন, যেন সবাই মিলে ওই ধরনের একটা পরিবেশ সৃষ্টি করেন, যাতে সুন্দর নির্বাচন হয়। নির্বাচনে যেন সহিংসতা, অরাজকতার পরিস্থিতি না হয়। জাপা সম্পর্কে ভারতের ভালো ধারণা আছে উল্লেখ করে এ সময় জি এম কাদের বলেন, আমার কাছে ভালো লেগেছে যে জাতীয় পার্টি সম্পর্কে উনাদের ধারণা ভালো। পার্টিকে একটা সম্ভাবনাময় দল মনে করেন তারা। উনাদের আস্থা আছে যে জাতীয় পার্টির সাথে তাদের সম্পর্ক সৌহার্দ্যপূর্ণ ছিল যা সবসময় থাকবে। নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মতানৈক্যের বিষয়ে ভারতের ভূমিকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ভারত বলেছে- এটা তোমাদের নিজস্ব ব্যাপার। তোমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সুরাহা করো। তারা বলেছেন, যেহেতু আপনাদের গ্রহণযোগ্যতা আছে সবার কাছে। আপনারা মোটামুটি সবার সাথে আলোচনা করে যদি সবাইকে একসাথে করে একটা সুন্দর নির্বাচন করতে পারেন তাহলে আমরা খুশি হবো।
আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা অনেকবার বলেছি। এই সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় এখনো আসেনি। কী করবো, কারো অধীনে যাবো কিনা- সেটা আরো কিছুদিন দেখেশুনে বলতে পারবো। তবে নির্বাচন বর্জন করবো এটা কোনো দিন বলিনি। ভোটে আসবো কি আসবো না এটা নেতাকর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে যা হবে সেই ব্যবস্থা আমরা নেবো। তবে আমরা চাই নির্বাচন যেন ভালো হয়। নির্বাচন নিয়ে ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের টানাপড়েন বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এটা তো আমি বলতে পারবো না। ভারতীয়রা, আমেরিকানরা বলতে পারবো। আমি আউটসাইডার হিসেবে উনাদের কী আলোচনা হয়েছে সেটা আমার পক্ষে জানা সম্ভব না। চেয়ারম্যান পদ নিয়ে ‘ভুয়া বিজ্ঞপ্তি’ প্রসঙ্গে জাপা চেয়ারম্যান বলেন, বেগম রওশন এরশাদ আমার ভাবি। আমার বড় ভাইয়ের স্ত্রী। বড় ভাইকে বাবার মতো মনে করতাম আমরা। সেই হিসেবে বয়সে যাই হোক ভাবিকে আমরা মায়ের মতো দেখেছি। তার সাথে আমার কোনো সময় দ্বন্দ্ব ছিল না। এখনো নেই। কিছু মানুষ উনার অসুস্থতার সুযোগ নিয়ে বিভিন্নভাবে কাগজপত্র সই করিয়ে নিচ্ছে, উনাকে দিয়ে বক্তব্য দেয়ানো হচ্ছে। আমার জানামতে এগুলো উনি নিজের ইচ্ছায় বা জেনেশুনে করছেন না। এটা করার উদ্দেশ্য হলো জাতীয় পার্টিকে দুর্বল করা।