বরিশালে জেলা জাতীয় পার্টির (জাপা) আহবায়ক ও সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়াদের কাউন্সিলর অ্যাডভোকেট একেএম মরতুজা আবেদীনের সঙ্গে মহানগর শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক রইজ আহম্মেদ মান্নার পিস্তল নিয়ে হাতাহাতির ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল রবিবার (২ সেপ্টেম্বর) বেলা ১২টার দিকে বরিশাল নগরীর পোর্ট রোডে সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর কার্যালয়ের সামনে এই ঘটনা ঘটে।
এই ঘটনায় নিজ লাইসেন্সকৃত পিস্তলসহ কাউন্সিলর মরতুজা আবেদীনকে বরিশাল মেট্রোপলিটনের কোতয়ালী মডেল থানা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। এদিকে এই ঘটনায় দুটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে ভাইরাল হওয়ায় নগরজুড়ে নানান উড়ো খবর রটে যাচ্ছে। কাউন্সিলর একেএম মরতুজা আবেদীনের ধারণকৃত ৮ মিনিটের ভিডিওতে দেখা যায়, ভূমি অফিস থেকে মরতুজা আবেদীন বের হওয়ার সময় ভূমি অফিসের সামনে রইজ আহম্মেদ মান্না ও তার অনুসারীদের অবস্থান করতে দেখেন। তারপর দুজনের মধ্যে কিছু কথা হয়। এরপর মান্না মরতুজার উদ্দেশ্যে নানা কথা বলতে থাকেন। মান্নার স্ত্রীকে মারধর করা হয়েছে বলে মরতুজার প্রতি অভিযোগও করেন মানা। একপর্যায়ে মান্না উত্তেজিত হয়ে মরতুজাকে তুই সম্বোধন করে কথা বলা শুরু করলে কথা কাটাকাটি হয় এবং মান্না ও তার সহযোগীরা মরতুজা আবেদীনের ওপর হামলা চালায়। একপর্যায়ে মান্না একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার মধ্যে মরতুজা আবেদীনের কাছ থেকে পিস্তল ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে বেশ কিছু সময় ধস্তাধস্তি হয়। পরে মান্নার এক সহযোগী পিস্তলটি নিয়ে যায়। এদিকে ফেসবুকে ছড়ানো অপর একটি ৫৬ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা গেছে, একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার মধ্যে মান্না ও মুরতজার মধ্যে ধস্তাধস্তি হচ্ছে পিস্তল নিয়ে। তখন মান্না বলছিল, মরতুজা তাকে গুলি করতে চেয়েছে। আর মরতুজা পিস্তলটি তার লাইসেন্সকৃত বলে চিৎকার করে বলছিল। এর মধ্যে এক যুবক এসে পিস্তলটি নিয়ে যায়। এ ঘটনার সময়ে উপস্থিত ট্রাফিক ইন্সপেক্টর শফিক আহমেদ বলেন, ভূমি অফিস থেকে অস্ত্র হাতে মরতুজাসহ দুইজনে দৌড়ে এসে একটি হলুদ অটোর মধ্যে ঢুকে পড়ে। এ সময়ে কিছু লোকজন অস্ত্রসহ মরতুজাকে ধরে পুলিশকে খবর দেয়।
জেলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক ও ২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর একেএম মুরতজা আবেদীন বলেন, আমার ওপর হামলা হতে পারে সেটা আমি আন্দাজ করতে পেরেছিলাম। কেন না বাসা থেকে বের হওয়ার পর থেকেই আমাকে ফলো করছিলো ওরা। ভূমি অফিস থেকে বের হওয়ার পর পরই আমার ওপর হামলা চালায় মান্নার লোকজন। এ সময় আমার কাছে থাকা লাইসেন্সকৃত পিস্তল ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে মান্না।
বরিশাল মহানগর শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক রইজ আহম্মেদ মান্না জানান, আমি পারিবারিক জমি সংক্রান্ত কাজে সহকারী কমিশনার ভূমি অফিসে যাই। কাজ শেষে বেরিয়ে গেটে আসা মাত্র অফিস থেকে বেরিয়ে মরতুজা আবেদীন আমাকে গালিগালাজ করে। এর প্রতিবাদ করলে হঠাৎ পিস্তল বের করে গুলি করতে উদ্যত হয়। এই সময়ে আমার ডাক চিৎকারে স্থানীয় জনগণ এগিয়ে এসে তাকে পুলিশের হাতে সোপর্দ করে। বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মো. হামিদুল আলম বলেন, অস্ত্রটি আমাদের হেফাজতে রয়েছে। তাছাড়া কাউন্সিলর সাহেবও থানায় রয়েছেন। আমরা বিষয়টা দেখছি। আশে পাশের সিসিটিভি ফুটেজও পরীক্ষা করে দেখা হবে।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ২ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর মরতুজা আবেদীনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন রইজ আহমেদ মান্না। নির্বাচনের কয়েক দিন আগে উচ্চ আদালত থেকে মান্নার মনোনয়ন বাতিল হওয়ায় তার ভাই মুন্না নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং মরতুজা আবেদনীকে পরাজিত করে মুন্না বিজয়ী হন। কয়েক বছর ধরেই মরতুজা ও মান্নার মধ্যে সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিরোধ চলে আসছিল। এতে করে একের পর অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে থাকে ২ নম্বর ওয়ার্ডে। তারই ধরাবাহিকতায় রোববার ভূমি অফিসের সামনে ফের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে এ দু’জনের মধ্যে।