প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা সংসদ সদস্যদের (এমপি) এলাকার কল্যাণে তাদের জীবন উৎসর্গ করতে বলেছেন। তিনি বলেন, ‘মানুষের সেবা করা সবচেয়ে বড় গুণ এবং এর চেয়ে বড় কিছু নেই। রাজনৈতিক নেতাদের উচিত নিজেদের জনগণের সেবায় নিয়োজিত করা।’ সংসদে নাটোর-৪ থেকে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মো. আবদুল কুদ্দুস ও নেত্রকোনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য রেবেকা মমিনের মৃত্যুতে শোক প্রস্তাবে গত রোববার এ কথা বলেন সংসদ নেতা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, রেবেকা মমিন ও মো. আবদুল কুদ্দুস সবসময় দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজ করেছেন।
তিনি বলেন, ‘আমি নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের প্রতি মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও চেতনা অনুসরণ করে জনগণের দোরগোড়ায় দেশের স্বাধীনতা অর্জনের সুফল পৌঁছে দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। এটাই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য।’ শোক প্রস্তাব দিয়ে সংসদের অধিবেশন শুরু হওয়া খুবই মর্মান্তিক- উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি ভেবেছিলাম এবার ব্যতিক্রম হতে পারে। কিন্তু তা হয়নি।’
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই সংসদের ২৮ জন সদস্য মারা গেছেন যাদের মধ্যে ২৬ জনই আওয়ামী লীগের। আবদুল কুদ্দুস সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতি করতেন। খুবই সাহসী ছিলেন। নাটোর ছিল সন্ত্রাসের জায়গা। সেখানে তিনি কয়েকবার নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি মানুষের কাছে খুবই জনপ্রিয় ছিলেন।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, রেবেকা মমিনকে তিনি ছাত্রজীবন থেকেই চিনতেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণের কল্যাণের জন্য রাজনীতি করছে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে জনগণের কল্যাণে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের উন্নয়নের ধারা তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছেছে। সংসদ সদস্যরা অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে তাদের দায়িত্ব পালন করায় এটি সম্ভব হয়েছে।’ বাংলাদেশের সামগ্রিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য তাঁর সরকারের প্রচেষ্টার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছি। বাংলাদেশকে আরও উন্নত করতে হবে।’
বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাবেক ধর্মমন্ত্রী ও সাবেক এমপি অধ্যক্ষ মতিউর রহমান, সাবেক এমপি অধ্যাপক পান্না কায়সার, সাবেক এমপি মোহাম্মদ উল্লার মৃত্যুতে সংসদ শোক প্রকাশ করে।
সংসদ বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) সুলতান মাহমুদ, মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক সিরাজুল আলম খান, একুশে পুরস্কার বিজয়ী কবি মোহাম্মদ রফিক, সমাজ কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী মো. আশরাফ আলী খান খসরুর স্ত্রী কামরুন্নেসা আশরাফ দিনা, কাজী নাবিল আহমেদ এমপির পিতা প্রকাশক ও অধুনালুপ্ত দৈনিক আজকের কাগজের সম্পাদক কাজী শাহেদ আহমেদ, কানিজ ফাতেমা আহমেদ এমপির পিতা কামাল উদ্দিন আহমেদ খান এবং স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত কৃষিবিদ ও কাজী পেয়ারার উদ্ভাবক কাজী এম বদরুদ্দোজার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে।
সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, ওয়াশিকা আয়েশা খান, আইসিটি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাজ্জাদুর রহমান, শফিকুল ইসলাম শিমুল, সমাজ কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু, আবদুল আজিজ, মশিউর রহমান রাঙ্গা প্রমুখ শোক প্রস্তাবের ওপর বক্তব্য রাখেন। অধিবেশনের শুরুতে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সংসদে শোকপ্রস্তাব উত্থাপন করেন, যা সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়। এক মিনিট নীরবতা পালন এবং বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন ময়মনসিংহ-৭ আসনের সংসদ সদস্য হাফেজ রুহুল আমিন মাদানী। পরে বর্তমান সংসদের সংসদ সদস্যদের মৃত্যুর কারণে প্রথা অনুযায়ী সংসদের বৈঠক মুলতবি করা হয়।