সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০:০৯ পূর্বাহ্ন

৪১ বছর পরও বাড়েনি ফায়ার কর্মীর সংখ্যা

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শনিবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে অগ্নিকাণ্ড, বিস্ফোরণ বেড়ে চলছে। চলতি বছরে গেল কয়েক মাসে রাজধানীতে বড় বড় অগ্নিকাণ্ডের ও বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে অনেক হতাহত ও প্রাণহানি ঘটেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শত শত কোটি টাকার মালামাল।
অগ্নিকা- বা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটলে সর্বপ্রথম ছুটে যেতে হয় ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের। আগুন নেভাতে গিয়ে বিভিন্ন সময় অগ্নিদগ্ধ হয়ে সংস্থাটির সদস্যদেরও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এত কিছুর পরও এখনও নানা সীমাবদ্ধতা রয়ে গেছে সংস্থাটির। তার মধ্যে পর্যাপ্ত ফায়ার ফাইটারের অভাব, নেই নিজস্ব ম্যাজিস্ট্রেট; এ ছাড়া কাজ করতে গিয়ে হতে হয় নানা বাধার সম্মুখীন অন্যতম।
ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, সারা দেশে ১৯৮১ সালের কাঠামোতে এখনও চলছে ফায়ার সার্ভিসের প্রতিটি স্টেশন। সামগ্রিকভাবে স্টেশনের উন্নতি হলেও বাড়েনি ফায়ার ফাইটারদের সংখ্যা। রাজধানীতে ১২ হাজার মানুষের জন্য একজন ফায়ার ফাইটার রয়েছেন। আর সারা দেশে ১১ হাজার ৭০০ জনের জন্য রয়েছেন একজন ফায়ার ফাইটার। তা ছাড়া ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে অভিযানের জন্য নেই নিজস্ব ম্যাজিস্ট্রেট। ফলে সীমাবদ্ধতার মাঝেই চলতে হচ্ছে তাদের।
সংস্থাটি জানায়, বর্তমানে ফায়ার সার্ভিসের দেশব্যাপী ৪৯৫টি স্টেশন চালু রয়েছে। আর ৪৩টি চালুর অপেক্ষায় আছে, যা আগামী অক্টোবরের মধ্যে চালু হবে। পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে আগামী দুই বছরের স্টেশনের সংখ্যা দাঁড়াবে ৭৩৫টি। ফায়ার সার্ভিস নীতিমালার মধ্যে থেকে সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরে ম্যাজিস্ট্রেট চাওয়া হয়েছে। বর্তমানে আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (মিডিয়া) শাজাহান শিকদার বলেন, আমরা যখন কোনও অপারেশনে যাই, আমাদের প্রথম বাধা হয়ে দাঁড়ায় যানজট। সংকেত পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বের হলেও, সর্বপ্রথম আমাদের যানজটের মুখোমুখি হতে হয়। তবে যাত্রার আগেই ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগকে অবগত করি। তারা রাস্তা ক্লিয়ার রাখলেও সাধারণ চালকরা সেটা মানেন না। যে যেভাবে পারে গাড়ি ঢুকিয়ে আমাদের টপকাতে চায়। ফলে আমাদের যানজট ঠেলে দীর্ঘ সময় পর ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে হয়।
তিনি আরও বলেন, পানির সোর্স নিয়ে আমরা সব সময় বলে আসছি। রাজধানীতে কোনও ভবনে আগুন লাগলে ভবনমালিকও জানেন না তাদের ভবনের আশপাশে কোথায় পানির সোর্স রয়েছে। ঘটনাস্থলে গিয়ে আমাদের নিজদের পানির সোর্স খুঁজে বের করতে হয়। আবার খুঁজতে গিয়েও বাধাগ্রস্তও হতে হয়। ভবনের নিরাপত্তাকর্মীরা রাজি হয় না ভবনের ভেতরে ঢোকাতে। তারা একধরনের ভয়ে থাকে। সেখানেও আমাদের দেরি হয়ে যায়।
তিনি বলেন, এ ছাড়া জরুরি অবস্থায় ভবন থেকে নিরাপদে বের হওয়ার রাস্তা বা পথ তালা দিয়ে বন্ধ রাখা হয়। এমন অনেক ভবনে দেখেছি। উদাহরণস্বরূপ বনানীর এফআর টাওয়ার। সেখানে আমাদের কাজে প্রতিবন্ধকতা হয়েছে এমন বাধা। সাধারণ মানুষও এসব বিষয়ে সচেতন না। কাজ করতে গিয়ে আরও বিভিন্ন রকম অসুবিধায় পড়তে হয় আমাদের টিমকে।
বর্তমানে সরকার ফায়ার সার্ভিসকে সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে। তবে একটি বিষয় এখনও পরিবর্তন হয়নি। সারা দেশে ১৯৮১ সালের কাঠামোতে চলছে ফায়ার সার্ভিসের প্রতিটি স্টেশন। সামগ্রিকভাবে স্টেশনের উন্নতি হলেও বাড়েনি ফায়ার ফাইটারের সংখ্যা। এ দীর্ঘ সময়ে তো দেশে জনগণ বেড়েছে। সে হিসাবে সারা দেশে স্টেশনগুলোয় ফায়ার ফাইটারদের সংখ্যা বাড়েনি। ৪১ বছর আগে সারা দেশের স্টেশনগুলোয় যত পদ ছিল, ঠিক এখনও ততটি পদই আছে বলে জানান শাজাহান শিকদার।
এ প্রসঙ্গে সংস্থাটির মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাইন উদ্দিন বলেন, আমাদের পাগলাঘণ্টা বাজার ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে গাড়িতে উঠতে হয়। এটা আমাদের রেসপন্স টাইম। সময়ের মধ্যে ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে হয়। এখন হাতে যদি খাবার থাকে, তা রেখেই চলে যেতে হবে। কারণ, আমাদের আগুন নেভাতে হবে, জানমাল রক্ষা করতে হবে।
ফায়ার সার্ভিসের জনবল বিষয়ে জানতে চাইলে ফায়ার ডিজি বলেন, রাজধানীতে ১২ হাজার মানুষের জন্য একজন ফায়ার কর্মী আছেন। আর সারা দেশে ১১ হাজার ৭০০ জনের জন্য একজন করে ফায়ার কর্মী রয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রে ৯০০ জনে একজন করে ফায়ার কর্মী রয়েছেন। তবে কত মানুষের জন্য কতজন ফায়ার কর্মী থাকবেন, সেটা নিয়ে আন্তর্জাতিক কোনো হিসাব নেই। আমরা তো ২০৪১ সালে উন্নত দেশে যেতে চাচ্ছি। তাহলে ৯০০ জনে না হোক, এক হাজার জনে একজন ফায়ার কর্মী দরকার।
আমাদের নিজস্ব কোনো ম্যাজিস্ট্রেট নেই। কিন্তু এটা আমাদের প্রয়োজন উল্লেখ করে ডিজি বলেন, আমরা মাঝেমধ্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়ে অভিযান চালাচ্ছি। তবে সেটা খুবই কম। তাই আমাদের ফায়ার সার্ভিসের নিজস্ব ম্যাজিস্ট্রেট থাকা প্রয়োজন। ফায়ার সার্ভিসের নীতিমালার মধ্যে থেকে আমরা সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরে ম্যাজিস্ট্রেট চেয়েছি। বর্তমানে আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগে আছে। আমরা ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা চাচ্ছি না। তবে ম্যাজিস্ট্রেট থাকা প্রয়োজন।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাইন উদ্দিন বলেন, ভবন বা দোকান তৈরি করতে দেশের প্রচলিত আইন আছে। একটি ভবন নির্মাণে অনুমোদন নিতে হয়। নির্মাণ শেষে অকুপেন্সি সার্টিফিকেট নিতে হয় রাজউক থেকে। এর আগে ফায়ার সার্ভিস থেকে একটা সার্টিফিকেট নিতে হয়। সেটা যদি না নেয়, তাহলে রাজউক থেকে অকুপেন্সি সার্টিফিকেট দেওয়ার কথা না। যেটা কিছুদিন আগে রাজউক বাধ্যতামূলক করেছে। যদি ফায়ার সার্টিফিকেট নেয়, তাহলে আপনার সব প্রস্তুত। আর সব যদি প্রস্তুতই হয়, তাহলে তো ফায়ারের গোয়েন্দার প্রয়োজন নেই। তার মানে, ভবনটি যেভাবে হওয়ার কথা, হয়েছে। এরপর দুর্ঘটনা তো দুর্ঘটনাই।
রাজউকের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর ৯০ হাজার ভবন নির্মাণ হচ্ছে। এর মধ্যে ১০ থেকে ১৪ হাজার ভবনের অনুমোদন দেন তারা। তাহলে বাকি ৭০ হাজার কোথায়, প্রশ্ন রেখে মাইন উদ্দিন বলেন, এই মুহূর্তে ফায়ার সার্ভিসের জনবল ১৪ হাজার ৪৪৮ জন। গোয়েন্দা শাখা চালু করতে লাগবে ৩০ হাজার জনবল। সম্প্রতি বেশ বড় বড় আগুন ও বিস্ফোরণের পর ফায়ার সার্ভিস বিভিন্ন মার্কেটে গিয়েছে। ব্যবসায়ী ভবন মালিকদের সতর্ক করেছে। কিন্তু পরে কিছুই হয়নি।
এর কারণ কী, জানতে চাইলে মহাপরিচালক বলেন, আমরা তো আইনের বাইরে যেতে পারছি না। হয়তো প্রয়োজন আছে, কিন্তু রাষ্ট্র যতটুকু প্রয়োজন মনে করেছে, ততটুকু। ভবন বা স্থাপনা নিয়ে সতর্ক করা আমার কাজ। আইন এতটুকুই অনুমোদন দিয়েছে। এর পরের কাজ মার্কেটের যে মালিক (সিটি করপোরেশন বা ব্যক্তিমালিকানা) সেই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের। ঈদের আগে আমি বিভিন্ন সংস্থাকে নিয়ে রাজধানীর প্রতিটা মার্কেটে গিয়েছি। আমার যতটুকু করার শতভাগ করেছি। পুরান ঢাকার চুড়িহাট্টার কেমিক্যাল গোডাউনে বিস্ফোরণের পর ফায়ার সার্ভিস ও সিটি করপোরেশনের কেউই নতুন করে লাইসেন্স বা নবায়ন করছে না। তাতে ব্যবসা বন্ধ হয়েছে নাকি কমেছে?
এমন প্রশ্ন রেখে ফায়ার সার্ভিসের ডিজি বলেন, আমরা কিন্তু একটি ভবনের আগুনের নিরাপত্তাকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করি, স্ট্রাকচারালকে ঘোষণা করি না। যেমন ভবনের একটি জায়গায় ফায়ার এক্সটিংগুইসার থাকার কথা, সেটা নেই। এটা আমরা দেখি। বাকিটা আমাদের দেখার দায়িত্ব না।-বাংলাট্রিবিউন




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com