মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে ‘উন্মুক্ত কুরআন শিক্ষা কোর্স’ এর শিক্ষার্থীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়েছে। বায়তুল আমান জামে মসজিদ ও বায়তুল আমান দারুল উলুম হাফিজিয়া মাদরাসা পরিচালনা কমিটির আয়োজনে গতকাল বেলা ২টায় শ্রীমঙ্গল শহরের কালিঘাট রোডস্থ বায়তুল আমান জামে মসজিদে ‘উন্মুক্ত কুরআন শিক্ষা কোর্সের প্রথম সাময়িক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে শিক্ষার্থীদের মাঝে পুরস্কার তুলে দেন শ্রীমঙ্গল পৌরসভার মেয়র মোঃ মহসিন মিয়া (মধু)। বায়তুল আমান দারুল উলুম হাফিজিয়া মাদরাসা ও মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি শাহিন আহমেদ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দৈনিক সমকাল পত্রিকার শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি শামিম আক্তার হোসেন মিন্টু, শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবের কোষাধ্যক্ষ, শ্রীমঙ্গল আইডিয়াল স্কুলের প্রধান শিক্ষক লেখক কলামিস্ট মোঃ এহসানুল হক, আশিদ্রোন জামিউল উলুম মাদরাসার মুহতামিম ও বাইতুল আমান জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব মাওলানা আব্দুল মালিক বাহুবলী, মসজিদ কমিটির সহসভাপতি হানিফ চৌধুরী, মাওলানা আয়েত আলী, হাফেজ বুরহান মোল্লা, আব্দুশ শহীদ, জসিম মাঝি, মনির বাশারসহ কমিটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ এবং মাদরাসা ও উন্মুক্ত প্রশিক্ষণ কোর্সের শিক্ষকমন্ডলী। প্রধান অতিথির বক্তব্যে শ্রীমঙ্গল পৌরসভার মেয়র মোঃ মহসিন মিয়া মধু বলেন, আমি বাইতুল আমান মসজিদের সাথে শুরু থেকে সম্পৃক্ত ছিলাম এবং এখন পর্যন্ত আছি। এই মসজিদ কমিটির অবকাঠামোগত উন্নয়নে আমি আগের মতোই ভূমিকা রাখছি। তিনি এই মাদরাসাকে যেকোনো একটি স্বীকৃত শিক্ষা বোর্ডের অধীনে নেয়ার প্রস্তাব দেন। কারণ হিসেবে বলেন, এই মাদরাসায় যারা পড়বে তা শুধু ইমামতি আর দাওয়াত খাবে না। তারা আলেম হাফেজ হওয়ার পাশাপাশি দেশের সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন সেক্টরে চাকরি করবে। উন্মুক্ত কুরআন শিক্ষা কোর্সের ভূয়সি প্রশংসা করে মেয়র মহসিন মিয়া বলেন, এটা অনেক মহতি উদ্যোগ। একজন মুসলমান হিসেবে সবার উচিত সহিহশুদ্ধভাবে কুরআন শেখা। কমিটি কর্তৃক এই উদ্যোগে যারা জড়িত, বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের তিনি ধন্যবাদ জানান। এই বয়সে এসেও কুরআন শেখার প্রতি তাদের আগ্রহ দেখে মেয়র বলেন, শুধু প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্থান অর্জনকারী নয়, সকল বয়স্ক শিক্ষার্থীদের পুরস্কার দেওয়া হোক। মসজিদে কথা হলো কোর্সে অংশ নেয়া শিক্ষার্থী বেলাল আহমদ এর সাথে। কোর্সে ভর্তি হয়ে পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পুরস্কারের অনুভূতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, আলহামদুলিল্লাহ, আমি আগে শুদ্ধভাবে আরবি পড়তে পারতাম না। যতটুকু জনতাম এ কোর্সে ভর্তি হয়ে বুঝতে পেরেছি সবই ভুল ছিল। এখানে ভর্তি হওয়ার পর সহিশুদ্ধভাবে আরবি শিখতে পেরেছি, অনেক দোয়া, তাসবিহ, মাসয়ালা মাসায়িল শেখারও সুযোগ হচ্ছে। আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি। এসময় তার সাথে ৬ বছরের এক শিশুকে দেখতে পেয়ে জানতে চাইলাম কে সে? তিনি জানালেন তার একমাত্র পুত্র। তিনি যে মসজিদে উন্মুক্ত কুরআন কোর্সে ভর্তি হয়েছেন এই মাদরাসায় তার ছেলে নূরানী দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। পৌর মেয়রের কাছ থেকে পুরস্কার গ্রহণের সময় তিনি তার ছেলেকে সাথে নিয়েই পুরস্কার গ্রহণ করেছেন, এমন চিত্রই অনুষ্ঠানে দেখা গেছে। তিনি বলেন, আমি একজন ব্যবসায়ী। শৈশবে সহিহ শুদ্ধভাবে কুরআন না শিখে ভুল করেছিলাম। তাই এই বয়নে এসে পবিত্র কুরআন শেখার কোর্সে ভর্তি হয়ে কুরআন ও জরুরি মাসয়ালা শিখছি। মাদরাসা ও মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি শাহিন আহমেদ জানান, চলতি বছরে মে মাস থেকে উন্মুক্ত কুরআন শিক্ষা কোর্স চালু করা হয়। এতে ১১ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়ে সপ্তাহে ৬ দিন মসজিদে রাতে (বাদ এশা) ঘন্টাব্যাপী ক্লাসে অংশ নিয়েছেন। গত আগস্ট মাসে উন্মুক্ত কুরআন শিক্ষা কোর্সের শিক্ষার্থীদের প্রথম সাময়িক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। কুরআন শরিফ, আমপারা, কায়েদাসহ জরুরি মাসয়ায়ালা-মাসায়িল বিষয়ে বিভিন্ন বিষয়ে পরীক্ষা নেওয়া হয়। পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অর্জনকারীদের কমিটির পক্ষ থেকে পুরস্কৃত করা হয়। তিনি আরও বলেন, বায়তুল আমান দারুল উলুম হাফিজিয়া মাদরাসা ও জামে মসজিদ কমিটির পক্ষ থেকে সব বয়সি মানুষদের জন্য দুই বছরব্যাপী ‘উন্মুক্ত কুরআন শিক্ষা’ কোর্সটি ২০২৩ সালের মে মাস থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়েছিল। কোর্সটির অগ্রগতি এবং শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার মান যাচাই করার লক্ষ্যে পরীক্ষা নেওয়া হয়। এ কোর্সটিতে ৬জন হাফেজ এবং আলেম শিক্ষক প্রশিক্ষণার্থীদের বিশুদ্ধভাবে কুরআন শেখানোর পাশাপাশি জরুরতে দ্বীন তথা প্রয়োজনীয় বিভিন্ন মাসয়ালা মাসাইল, দোয়া, দরুদ, তাসবিহ এবং হাদিসও শেখানোর চেষ্টা করছেন। পর্যায়ক্রমে কোর্সে দ্বীনের আবশ্যকীয় সকল বিষয়েই পাঠদান করানো হবে। বিশুদ্ধভাবে কুরআন ও প্রয়োজনীয় মাসয়ালা মাসায়িল না জানা বয়স্ক মানুষের জন্য ‘উন্মুক্ত কুরআন শিক্ষা ও জরুরতে দ্বীন কোর্স চালু করায় নানা শ্রেণি পেশার মানুষের প্রশংসায় ভাসছেন বাইতুল আমান জামে মসজিদ ও মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সকল নেতৃবৃন্দ।