বাংলাদেশ গ্রাম পুলিশ বাহিনী কর্মচারী ইউনিয়ন কক্সবাজার জেলা শাখার নবনির্বাচিত কমিটির অভিষেক ও শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে। ঈদগাঁও পাবলিক লাইব্রেরী মিলনায়তনে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে নবনির্বাচিত কমিটিকে শপথ বাক্য পাঠ করান ঈদগাহ রশিদ আহমদ কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোঃ জসীম উদ্দীন। সংগঠনের নবনির্বাচিত কমিটির সভাপতি, ঈদগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের দফাদার নূর মোহাম্মদের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন ঈদগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ছৈয়দ আলম, ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্বপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নুরুল আলম, ঈদগাঁও থানার অফিসার ইনচার্জের প্রতিনিধি এসআই মোঃ জুয়েল সরকার, ঈদগাহ জাহানারা ইসলাম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও অত্র সংগঠনের উপদেষ্টা গিয়াস উদ্দিন, ঈদগাঁও প্রেস ক্লাব সভাপতি ও অত্র সংগঠনের উপদেষ্টা মোঃ রেজাউল করিম, কক্সবাজার জেলা পোল্ট্রি শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি আবু তৈয়ব চৌধুরী, কক্সবাজার সদরের পিএমখালী ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার জামাল উদ্দিন প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্য দেন নবনির্বাচিত গ্রাম পুলিশ কর্মচারী ইউনিয়নের জেলা শাখার কার্য্যকরী সভাপতি মোঃ এরশাদ (চৌফলদন্ডী)। সংগঠনের জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক হেলাল উদ্দিন দফাদারের (চিরিঙ্গা) সঞ্চালনায় অভিষেকে উপস্থিত ছিলেন ঈদগাঁও থানার এএসআই আব্দুর রহিম ও এএসআই অন্তু বড়ুয়া। নবনির্বাচিত কমিটির পক্ষে বক্তব্য রাখেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমিনুল হক দফাদার (টেকনাফ), সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক রশিদ মিয়া দফাদার (উখিয়া), দপ্তর সম্পাদক মিজানুর রহমান দফাদার (জালালাবাদ), প্রচার সম্পাদক মুফিজুর রহমান গ্রামপুলিশ (চিরিঙ্গা), সমাজকল্যাণ সম্পাদক আবুল হাসেম দফাদার (মাতার বাড়ি), কার্যকরী সদস্য লুৎফুর রহমান গ্রামপুলিশ (বড় মহেশখালী)। শুরুতে পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত করেন সংগঠনের কার্য্যকরী সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন দফাদার (কোনাখালী)। ইসলামী সংগীত পরিবেশন করে কার্য্যকরী সভাপতির পুত্র মোহাম্মাদুর রহমান ইহাদ। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথি, ও নবনির্বাচিত কমিটির শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে ফুল দিয়ে বরণ করা হয় এবং ব্যাজ পড়ানো হয়। সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন মোঃ এরশাদ গ্রাম পুলিশ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় সহায়তা করে আশেক মোস্তফা রিয়াজ। গত ৯ আগস্ট কক্সবাজারে সম্মেলনের মাধ্যমে সর্বসম্মতিক্রমে এ কমিটি গঠন করা হয়। ২০ আগস্ট কেন্দ্রীয় কমিটি কক্সবাজার জেলা কমিটিকে অনুমোদন দেন। তিন বছর মেয়াদের জন্য প্রদত্ত অনুমোদন কপিতে স্বাক্ষর করেন কেন্দ্রীয় সভাপতি বাবু ভবেন্দ্র নাথ বিশ্বাস ও কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন সর্দার। এছাড়া ৩ সদস্য বিশিষ্ট উপদেষ্টা কমিটি ও গঠন করা হয়। বক্তারা দেশের অর্ধ লক্ষাধিক গ্রাম পুলিশ সদস্যদের চাকুরি জাতীয়করণ, মহামান্য আদালতে চলমান জাতীয়করণের আইনি প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেয়া, তাদেরকে জাতীয় বেতন স্কেলের ১৯ ও ২০ তম গ্রেড প্রদান করা, দফাদার- মহল্লাদারদের চাকুরি রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করা সহ যৌক্তিক সকল দাবি-দাওয়ার প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করেন। অতিথিরা গ্রামপুলিশের প্রবীণ সদস্যদের যথাযথভাবে মূল্যায়ন, নবনিয়োগ প্রাপ্ত উচ্চ শিক্ষিত সদস্যদের পরামর্শ গ্রহণ এবং বিভিন্ন পরিষদে গ্রাম পুলিশের পাশাপাশি যারা কাজে সহায়তা করেন তাদেরকে সহযোগী হিসেবে রাখার পরামর্শ দেন। অনুষ্ঠানের মাঝামাঝি সময়ে নবনির্বাচিত কার্য্যকরী কমিটির শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এতে জেলার ৮ উপজেলা থেকে শতাধিক গ্রামপুলিশ সদস্য অংশ নেন। এদের মধ্যে ৩১ সদস্য বিশিষ্ট্য কমিটির ৩০ জন উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ঈদগাঁও অনলাইন প্রেস ক্লাব সাধারণ সম্পাদক শেফাইল উদ্দিন, গ্রাম পুলিশ জেলা শাখার সাবেক সহ-সভাপতি আমির হোসাইন (ইসলামপুর), প্রেস ক্লাবের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক বজলুর রহমান, সদস্য আজিজুর রহমান রাজু, বৃহত্তর ঈদগাঁও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সভাপতি কুতুব উদ্দিন চৌধুরী সহ সংবাদকর্মীবৃন্দ। গ্রাম পুলিশ নেতৃবৃন্দ বলেন, তাদেরকে প্রতিদিন ইউনিয়ন পরিষদ, থানা পুলিশ ও সরকারের বিভিন্ন হুকুম তামিল করতে করতে তাদের প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়ে পড়ে। পূর্বে তাদের যতটুকু সম্মান ও মর্যাদা ছিল বর্তমানে সেটাও নেই। কোন কোন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা তাদেরকে দিয়ে ব্যক্তিগত কাজও করান। ২০১১ সালে জারি করা স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) বিধি মালায় তাদের চাকুরীর শর্ত ও পদ্ধতি উল্লেখ করা হয়। বিধিমালা- ২০১৫ অনুযায়ী বর্তমানে এ বাহিনীটি পরিচালিত হচ্ছে। সরকারের স্থানীয় সরকার বিভাগের তত্ত্বাবধানে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে উপজেলা প্রশাসন। এ বছরের ১৯ মার্চ সর্বশেষ তাদের বেতন বৃদ্ধি করা হয়। গ্রাম পুলিশ সদস্যরা সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এলাকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে তাদের ভূমিকা অপরিসীম। তৃণমূল পর্যায়ে তারা সরকারের সহযোগী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। তবে দিনরাত পরিশ্রম করার পরও তারা যথাযথ সম্মান ও সম্মানি টুকু পান না। ১৯৭৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক তাদের চাকরিটা জাতীয়করণের পরিপত্র জারি করা হলেও এখনো পর্যন্ত তা কার্যকরে কেউ এগিয়ে আসেননি। অথচ পরিবার পরিজন নিয়ে খেয়ে না খেয়ে তারা তৃণমূল পর্যায়ে সরকারের মহতি উদ্যোগ বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছেন। নানা বঞ্চনা এবং লাঞ্ছনার মধ্যেও সমাজ ও সমাজের মানুষকে শান্তি এবং নিরাপদে রাখতে তাদের ভূমিকা অব্যাহত রয়েছে। আলোচকরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দেশ ডিজিটালি অনেক এগোলেও গ্রাম পুলিশের কোন উন্নতি হয়নি। তাদের নেই কোন অর্থনৈতিক ও সামাজিক নিরাপত্তা। তাই তাদেরকে সরকারি চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীর মতো বেতন দিতে হবে।