ফরিদপুরের সদরপুরে ‘সোনালী আঁশ’ খ্যাত পাট বর্তমানে কৃষকের গলার ফাঁস হয়েছে। চলতি মৌসুমে উপজেলায় পাটের ফলন ভালো হলেও পাটের বর্তমান বাজার দর উৎপাদন খরচের চেয়ে অনেক কম হওয়ায় নিশ্চিতভাবে লোকসান গুনতে হচ্ছে স্থানীয় পাট চাষীদের। ফলে পাটচাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন পাটচাষীরা। পাটের পরিবর্তে বিকল্প হিসেবে আখ, সব্জি তরিতরকারি চাষের চিন্তা করছেন কেউ কেউ। কৃষক পর্যায়ে এমন ধারণায় ভবিষ্যতে পাট চাষের জমি কমে যাবে, হুমকির মুখে পড়তে পারে বিপুল সম্ভাবনার সোনালী আঁশ। উপজেলার হাটকৃষ্ণপুর, সাড়েসাত রশি বাজার, পিঁয়াজখালী, বালিয়াহাটি, নচুনগঞ্জ বাজারে পাটের মান ও রং ভেদে মণপ্রতি বর্তমান দর ১ হাজার ৮শ থেকে ২ হাজার ৫ শত টাকা। বিভিন্ন কৃষকের সাথে আলাপ করে জানা যায় জায়গা ভেদে পাট উৎপাদন ও বাজারজাত করা পর্যন্ত খরচ হয়েছে মণপ্রতি ২ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার ২ শত টাকা । অর্থাৎ বর্তমান বাজার দরের চেয়ে কৃষকদের প্রতিমণে লোকসান হচ্ছে ৫ শ থেকে ১ হাজার টাকার মতো। সুতরাং পাটে লাভের আশা ছেড়েই দিয়েছেন কৃষকরা, নিদেন পক্ষে উৎপাদন খরচ উঠলেই তারা খুশী। তবুও পাট নিয়ে ব্যস্ততার কমতি নেই চাষিদের। সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা যায় চাষিরা কেউ কেউ পাট কাটা, পচন, সংগ্রহ ও শুকাতে ব্যস্ত। আবার নিশ্চিত লোকসান গুনতে হবে ভেবে পাট না কেটে ক্ষেতেই রেখে দিচ্ছেন কেউ কেউ। উপজেলার ঢেউখালী ইউনিয়নের পাট চাষি সায়ীদ হাসান এ প্রতিবেদককে জানান, জমি চাষ, বীজ, সার, সেচ, আগাছা পরিষ্কার, কীটনাশকসহ জমি থেকে কেটে পানিতে পচিয়ে, আঁশ ছাড়িয়ে, রোদে শুকিয়ে বিক্রীর জন্য হাটে নেয়া পর্যন্ত মণপ্রতি ৩ হাজার ২ শত টাকার মতো খরচ হয়েছে। কিছু পাট বিক্রী করেছি। লোকসান হয়েছে। আগামীতে খরচ ওঠার মত দাম বাড়লে বাকী পাট বেচে দেব। আগামীতে আমি আর পাট চাষ করব না। সেখানে আখ বা সবজি চাষ করব। উপজেলার মটুকচরের চাষি হাসেম সরদার জানান, এই বছর পাট চাষে খরচ বেশি হয়েছে। দিনমজুর, বীজ, সার, কীটনাশক, পরিবহন সবকিছু মিলে খরচ অনেক বেশি। বাজার ঘুরে দেখেছি পাটের দাম একেবারেই কম। নিশ্চিতভাবে লোকসান হচ্ছে। না পারি বেচতে না পারি ঘরে রাখতে। এখন পাট আমাদের গলার ফাঁস হয়েছে। সাড়ে সাত রশি বাজারের পাট ব্যবসায়ী পরিতোষ সাহা জানালেন এ মৌসুমে পাটের উৎপাদন বেশি হয়েছে। বর্তমানে বাজারে পাটের প্রাপ্যতা বেশি হওয়ায় দাম কম। কিছুদিন গেলে পাট ভাল করে শুকালে দাম বাড়তে পারে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিটুল রায়ের সাথে কথা হলে তিনি জানান, এবছর উপজেলায় ৬ হাজার ৫২৮ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। উৎপাদনও আশানুরূপ । খাল বিলে বৃষ্টি ও বর্ষার পানি স্বল্পতার কারনে পাট পচন, সংগ্রহ ও পরিবহন বাবদ পাটের উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। অথচ প্রতিমণ পাটের বাজার মূল্য হওয়া উচিত ৪ হাজার টাকা। গুদামজাতকারী ও ফড়িয়াদের অপকৌশলের কারণে কৃষকরা সাময়িক ক্ষতির শিকার হন। তবে ১৯ ধরনের পণ্য সংরক্ষণ, সরবরাহ ও মোড়কীকরণে পাটের বস্তার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। যদি মিলগুলো চাহিদা বাড়ায়, পাট ও পাটজাত দ্রব্যের বহুবিধ ব্যবহার ও রপ্তানি বৃদ্ধি করা যায় তবে পাট চাষে কৃষকদের নিশ্চিত লাভ হবে এমুনটাই মনে করছেন অভিজ্ঞ মহল।