ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ পৌর এলাকার ২নং ওয়ার্ড বাকুলিয়া গ্রামের বাকুলিয়া বিলের মধ্যে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় অবস্থিত। জহুরা খাতুন সরকারি প্রাথমিক এ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই যাওয়া আসার উপযুক্ত কোন সড়ক ছাড়াই চলছে। এতে করে শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকদের বিদ্যালয়টিতে যাওয়া আসার জন্য চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। বিশেষ করে বিদ্যালয়টিতে পড়ুয়া কোমলমতি শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মেঠো পথ ধরে দুইটি কাঠের ভাঙা ছোট সেতু পার হয়ে স্কুলে যাওয়া আসা করা লাগে মাসের পর মাস বছরের পর বছর।বিদ্যালয়টি বাকুলিয়া টু শ্রীরামপুর সড়ক থেকে প্রায় ৫ শত গজ দূরে বিলের মধ্যে অবস্থিত। প্রাক প্রাথমিক থেকে শুরু করে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত মোট ৭৬ জন শিক্ষার্থী এখানে নিয়মিত পাঠগ্রহন করছে। আর এসব শিক্ষার্থীদের পাঠদান করাচ্ছেন পাঁচজন শিক্ষক। বিলের মধ্যে ২০১৬ সালে ৩৩ শতাংশ জমির উপর ৩ টি শ্রেণি কক্ষ ও ১ টি অফিস কক্ষের ১ তলা ভবন নির্মীত হলেও আজ পর্যন্ত স্কুলে যাওয়ার জন্য কোন রাস্তা নির্মাণ করা হয়নি। বছর জুড়ে স্কুলের চার পাশের এসব নিচু জমিতে প্রায় পানি জমে থাকে।বর্ষা মৌসুমে পানির পরিমাণ বেশি হলে স্কুলটি যাতে পানিতে ডুবে না যায়, সেই জন্য জমে থাকা পানি বের করার স্বার্থে দুইটি ছোট ছোট কাঠের সেতু স্কুল কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় তৈরী করা হয়।ভঙ্গুর এই দুইটি কাঠের সেতু ও উঁচু-নিচু গর্তে ভরা মেঠো রাস্তায় স্কুলটিতে যাতায়াতের একমাত্র অবলম্বন। এই বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী সজিব হাসানের মা বিথী বেগমের সাথে এই প্রতিবেদকের কথা হলে তিনি আক্ষেপ করে বলেন,স্কুল করেছে তা রাস্তা করবে না? ঐ রাস্তা দিয়ে চলাচল করা যায় না। আমার ছেলে একদিন স্কুলে যাওয়ার সময় পড়ে গিয়েছিল। আমিও একদিন স্কুলে ছেলের টিফিন দিতে যেয়ে স্লিপ করে পড়ে যায়। বর্ষাকালে এ ধরনের সমস্যা আরো বেশি হয়। ছেলেকে স্কুলে দিয়ে চিন্তায় থাকা লাগে। সরোজমিনে বিদ্যালয়টিতে যেয়ে দেখা যায়, চলাচলের অনুপযুক্ত মেঠো রাস্তা ও ভাঙ্গা দুটি কাঠের সেতু পার হয়ে স্কুলে যাওয়া- আসা করছে শিক্ষার্থীরা।এদের মধ্যে চতুর্থ শ্রেণির রিপন মিয়া ও তৃতীয় শ্রেণির সুমাইয়া খাতুনের সাথে কথা হলে তারা জানায়,এই রাস্তা দিয়ে স্কুলে আসা যাওয়া করতে আমাদের খুব কস্ট হয়।অনেকে কাঠের এই সেতু দিয়ে পার হওয়ার সময় পানিতে পড়ে যায়।আবার আমাদের স্কুল মাঠে পানি কাদা থাকায় আমরা ভালোভাবে খেলতেও পারি না। জহুরা খাতুন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পারভীন খান বলেন, শুনেছি বাকুলিয়া টু শ্রীরামপুর সড়ক সংলগ্ন জমিতে একটি কলেজ হওয়ার কথা রয়েছে। এ কারণে স্কুলের রাস্তা নির্মানের জন্য জমি নির্ধারনের জটিলতা রয়েছে বিধায় রাস্তার কাজ শুরু করতে বিলম্ব হচ্ছে। জহুরা খাতুন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ফাতেমা খাতুন জানান,বিদ্যালয়টির রাস্তা করার জন্য নিজেস্ব জমি নেয়।সামনে একটি কলেজ হওয়ার কথা। সেটি হলে তখন দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য একটি রাস্তা করা হবে।আসলে বাচ্চাদেরসহ সকলের স্কুলে যাওয়া আসায় বেশ কস্ট হয়। আমিও চেষ্টা করছি যাতে স্কুলের রাস্তাটি দ্রুত হয় সে ব্যাপারে। কালীগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা( ভারপ্রাপ্ত) মাহমুদুল হাসান জানান,আমি বিদ্যালয়টির রাস্তার অভাবে সৃষ্ট দূর্ভোগ স্বচোখে দেখেছি। উপজেলার মাসিক সমন্বয় সভায় রাস্তার ব্যাপারে কথা বললে সেখানে উপস্থিত থাকা স্থানীয় সাংসদ তা গুরুত্বের সাথে নোট করে নেন এবং দ্রুত রাস্তাটি করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ব্যাক্ত করেন। কালীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আশরাফুল আলম বলেন, আমার কাছে বিদ্যালয়ের দাবি ছিল বৈদ্যুতিক খুঁটি ও যাতায়াতের রাস্তা। খুঁটি দিয়ে দিয়েছি, আর রাস্তা নির্মানের জাইগা নির্ধারণ করে দিলেই আমি করে দেবো। ইতিমধ্যে একটি প্রকল্পে ঐ স্কুলের রাস্তার স্টীমেট সংযুক্ত করে রেখেছি।