সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৪:৩২ অপরাহ্ন

রঙিন হাওয়াই মিঠাইয়ের মতো মিলেয়ে যায় স্বপ্ন

কালীগঞ্জ (গাজীপুর) প্রতিনিধি :
  • আপডেট সময় শনিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

হাওয়াই মিঠাই লাগবে? হাওয়াই মিঠাই….মিষ্টি নরম গোলাপি, সাদা হাওয়াই মিঠাই…। এমন হাঁক-ডাক শুনলেই শৈশবে ছুটে যেত শিশু কিশোররা। এখন আধুনিকতার ছোঁয়ায় এমন দৃশ্য খুব একটা চোখে পড়ে না কি শহরে, কি গ্রামে। তবে তা একেবারে হারিয়ে গেছে তাও বলা যাকে না। এত খাবারের ভিড়েও চাহিদা একবারেই কমে গেছে তা কিন্তু মোটেও না। হাওয়াই মিঠাই। গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী একটি মিঠাইয়ের নাম। এখনো এটি গ্রাম-গঞ্জের মানুষের কাছে তুমুল জনপ্রিয়। একটা সময় ‘হাওয়াই মিঠাইয়ের দেখা মিলতো শুধুমাত্র গ্রামাঞ্চলে। কিন্তু এখন শহুরে জীবনে বিভিন্ন পার্কে বা মেলায় যুক্ত হয়েছে এই গোলাপী, সাদা হাওয়াই মিঠাই। এত খাবারের ভিড়েও চাহিদা একবারেই কমে গেছে তা কিন্তু মোটেও না। মূলত হাওয়ার সঙ্গে এই মিঠাই মিশিয়ে যায় বলে একে হাওয়াই মিঠাই। এটি তৈরির সাথে সাথে মুখে দিয়ে খেতে হয়। এ মিঠাইয়ে পেট ভরে না, তবে খেতে মিষ্টি। শুধু মুখের স্বাদ মেটায়। দৃশ্যত এটা দেখতে অনেক বড় মনে হলেও মুখের ভেতর নিমিষেই এটি গলে যায়। বিশেষ করে গ্রাম-গঞ্জের শিশুরা এই হাওয়াই মিঠায়ে বেশি আনন্দ পায়। তবে বড়রাও এর স্বাদ থেকে দূরে থাকে, তাও না। দাম কম হওয়ায় সবার আগ্রহ থাকে এই হাওয়াই মিঠাইয়ের প্রতি। লম্বা কাঠির মাথায় পলিব্যাগে মোড়ানো গোলাপি সাদা হাওয়াই মিঠাই। ঘাড়ে করে ঘুরে বেড়ায় ফেরিওয়ালা। তবে এদের মধ্যে কিশোর বয়সী ফেরিওয়ালাই বেশি। কিছু কিছু ব্যবসায়ি আজও এই হাওয়াই মিঠাইকে হাওয়ায় মিলিয়ে যেতে দেননি। বংশ পরাম্পরায় ব্যবসা চালিয়ে আসছেন তারা। শুধুমাত্র চিনিকে তাপ দিয়ে গলিয়ে তা একটি হাতে ঘুরানো যাতায় পিষে অল্প সময়ে তৈরি করা হয় হাওয়াই মিঠাই। একসময় লাল-গোলাপী-হলুদ-বেগুনি-সবুজসহ নানা রঙে তৈরি করা হতো এই মিঠাই। তবে এসব রঙে রাসায়নিক পদার্থ থাকায় এখন আর রঙ ব্যবহার করা হয় না। শুধু চিনির সাদা রঙই হলো এ মিঠাইয়ের রঙ। এখন গোলাপী আর সাদা রঙের হাওয়াই মিঠাই ছাড়া অন্য কোন রঙের দেখা যায় না। বিশেষ করে গ্রামে মেলা বসলে দেখা মিলে হাওয়াই মিঠাইয়ের। তবে প্রায় সারাবছরই গ্রামগঞ্জে দেখা যায় হাওয়াই মিঠাই বিক্রেতা ফেরিওয়ালাদের। গাজীপরে জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার ভাদার্ত্তী গ্রামের ষাটোর্ধ রবিউল ইসলাম জানান, তার কৈশোর বয়সের হাওয়াই মিঠাইয়ের স্বাদ, তিনি আজও ভুলতে পারেন না। এখনকার ছেলেমেয়েদের এসবের প্রতি খুব একটা আগ্রহ দেখা যায়না বলেও তিনি খুব আক্ষেপ করেন। এখনও গ্রামে গ্রামে হাওয়াই মিঠাই বিক্রেতা আসলে তিনি তা কিনে শিশুদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মজা করে খান। রবিউল ইসলাম বলেন, আমাদের সময়ে এক পয়সা দিয়ে হাওয়াই মিঠাই কিনে খেতাম। ওই সময় যখন দাদা, বাবা কিংবা কাকাদের সঙ্গে গ্রামগঞ্জের হাট-বাজার বা মেলায় যেতাম, তখন প্রথম বায়নাটি ছিলো এই হাওয়াই মিঠাই খাওয়া। তবে ওই সময় যেখানে সেখানে পাওয়াও যেত এটি। একই গ্রামের পঞ্চাশোর্ধ শরীফা বেগম বলেন, হাওয়াই মিঠাই মজার একটা জিনিস। খেতে খুব মিষ্টি ও সুস্বাদু। এটি পেট না ভরলেও মুখের স্বাদ মিটে। দামে সস্তা হওয়ায় আমরা ছোটবেলায় প্রচুর খেতাম। এখন আর খাওয়া হয়না। তবে আমি খাইনা বলে যে কিনি না, তা কিন্তু নয় এখনও মাঝে মধ্যে হাওয়াই মিঠাইয়ের ফেরিওয়ালা আসলে দুই নাতি রিহান ও সাদাবের জন্য কিনি। এখন ওরা খুব মজা করেই খায়। ভাদাত্তী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩য় শ্রেণির ছাত্র ও একই গ্রামের শিশু রাফসান নূর রাফি(৯) বলে, হাওয়াই মিঠাই খেতে আমার খুব ভাললাগে। আমাদের গ্রামে বা স্কুলে ফেরিওয়ালা আংকেল হাওয়াই মিঠাই বিক্রি করতে আসলে আমি ছুটে যাই। বাবা কিংবা মাকে টাকা দিতে বলি। একেকটা হাওয়াই মিঠাই মাত্র ১০ টাকা করে। আমি এক সাথে দুইটা কিনি। একটা আমি খাই, আরেকটা আমার বড় আপুকে দেই। তবে মাঝে মধ্যে খুব বেশি মজা লাগলে আমি দুইটাই খেয়ে ফেলি। শিশু রাফসানের বাবা নুরুল ইসলাম(৪০) বলেন, আমাদের সময়ে আমরা ১টাকা করে কিনে খেয়েছি। কিন্তু সেই স্বাদ আর না থাকলেও বেড়েছে ওই একই জিনিসের দাম। এখন সেই হাওয়াই মিঠাই আমাদের শিশুরা কিনে খায় ১০ টাকায়। এক সময় আমিও আমার বাবার কাছে একই জিনিস খেতে আবদার করেছি এবং বাবা সেটা কিনে দিয়েছেন। এখন আমি আমার সন্তানদের আবদার রক্ষা করি। ভাদার্ত্তী গ্রামে ফেরি করে হাওয়াই মিঠাই বিক্রি করা কিশোর ফেরিওয়ালা সাগর মিয়া(১৭) জানান, তার বাড়ি ময়সনসিংহের তারাকান্দা উপজেলার ওলামাকান্দা গ্রামে। বর্তমানে সে কালীগঞ্জ পৌর এলাকার মুনশুরপুর গ্রামে অন্য আরো ৩ জন হাওয়াই মিঠাই ফেরিওলাদের সাথে একটি বাড়িতে ভাড়া থাকে। সাগর মিয়া আরো জানায়, একজন মালিকের দায়িত্বে আমরা ৩ জন থাকি এবং ওই মালিকের দায়িত্বে কাজ করি। তবে মালিক থাকা-খাওয়া বহন করেন। সকাল ৭টায় বের হয়ে ফিরে সন্ধ্যা ৭/৮ টায়।। একেক দিন কালীগঞ্জের একেক এলাকায় এই হাওয়াই মিঠাই বিক্রি করতে যায় সে। কখনো কখনো পার্শ্ববর্তী পলাশ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ছুটে যায় এই হাওয়াই মিঠাই নিয়ে। প্রতিদিন ১২/১৫শ টাকা বিক্রি করলেও হাজিরা মিলে মাত্র সাড়ে ৩শ টাকা। এই টাকা বাড়িকে পাঠায় বাব-মা, ভাই-বোনের জন্য। এক সময় বাবা কাজ করতো। কিন্তু তাঁর বয়স হয়েছে বলে জীবন জীবিকার তাগিদে পরিবারের হাল ধরতে কম বয়সে কাজ শুরু করেছে বলে জানায় সে। তবে হাওয়াই মিঠাইয়ে রঙিন সৌন্দর্য্যরে মত এতোটা রঙিন তাদের জীবন নয়।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com