এ বছর অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। ২০০০ সাল থেকে শুরু করে ২০২২ পর্যন্ত বছরে সর্বোচ্চ মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ২৮১ জন। সেখানে চলতি বছরের আগস্ট মাসেই মারা যান ৩৪২ জন। তবে সেপ্টেম্বরের প্রথম ১৫ দিন ছাড়িয়ে যাচ্ছে আগস্ট মাসের ভয়াবহতাকেও। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, আগস্ট মাসের প্রথম ১৫ দিন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৩৮ হাজার ৪৩ জন। কিন্তু সেপ্টেম্বরের প্রথম ১৫ দিনে আগস্টের তুলনায় ১১৩ জন বেশি অর্থাৎ ৩৮ হাজার ১৫৬ জন রোগী শনাক্ত হয়েছেন। মৃত্যুর সংখ্যাও সেপ্টেম্বরের প্রথম ১৫ দিনে আগস্টের তুলনায় বেশি। আগস্টের প্রথম ১৫ দিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১৭৫ জন মারা গেলেও সেপ্টেম্বরে ১৯৭ জন মারা গেছেন।
দেশে ডেঙ্গু সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার পর থেকে প্রায় প্রতিবছর সেপ্টেম্বর মাসেই ডেঙ্গুর প্রকোপ পাওয়া গেছে সবচেয়ে বেশি। ফলে চলতি সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ ডেঙ্গু পরিস্থিতি কোথায় দাঁড়াবে, তা নিয়ে গভীর শঙ্কার কথা জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। ঢাকার বাইরের পরিস্থিতি ভয়াবহ: চলতি সেপ্টেম্বরের প্রথম ১৫ দিনে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে ৩৮ হাজার ১৫৬ জন। এর মধ্যে রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনে ১৩ হাজার ৪৮২ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। অন্যদিকে এই সময়ে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের বাইরে দেশের অন্য এলাকায় ২৪ হাজার ৬৭৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের হাসপাতালগুলো থেকে সুস্থ হয়ে ১২ হাজার ৭২৪ জন ডেঙ্গু রোগী ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। অন্যদিকে ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলো থেকে ২৩ হাজার ২৭২ জন ডেঙ্গু রোগী সুস্থ হয়ে ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। সেপ্টেম্বরের প্রথম ১৫ দিনে রাজধানীতে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১০৯ জন মারা গেছেন বিভিন্ন হাসপাতালে। অন্যদিকে ঢাকার বাইরের হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৮৮ জন।
১০ সেপ্টেম্বর দেশে দুই হাজার ৯৯৩ জন ডেঙ্গু রোগী দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয় যা দেশে ডেঙ্গু সংক্রমণের ইতিহাসে ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ। ১৫ হাজার ২২২ জন মহিলা সেপ্টেম্বরের প্রথম ১৫ দিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। অন্যদিকে ২২ হাজার ৯৩৪ জন পুরুষ সেপ্টেম্বরের প্রথম ১৫ দিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তবে মৃত্যুর পরিসংখ্যানে নারীদের সংখ্যা বেশি। সেপ্টেম্বরের প্রথম ১৫ দিনে দেশে ১১২ জন নারী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে মারা গেছেন। অন্যদিকে এই ১৫ দিনে ৮৫ জন পুরুষ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।
এ বিষয়ে জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এবং কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার বলেন, অন্যবারের তুলনায় এবার এখন রোগীর যে সংখ্যা দেখা গেছে তা উদ্বেগজনক। তাই সামনের দিনগুলোতে সতর্ক না হলে পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ হতে পারে।
তিনি বলেন, ‘হটস্পট ব্যবস্থায় ব্যর্থ হওয়ার কারণে ডেঙ্গুর প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে না। ডেঙ্গু রোগী যেসব এলাকা থেকে বেশি আসে, সেখানে কার্যকরী ভূমিকা নেওয়া প্রয়োজন। দরকার হলে ক্র্যাশ প্রোগ্রাম পরিচালনা করে উড়ন্ত মশাগুলোকে মেরে ফেলতে হবে। তা হলে এক রোগী থেকে অন্য রোগী আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে না। এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে স্থানীয় প্রশাসনকে। যদি এমনটা না হয় তবে সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘ঢাকার সব জায়গায় ডেঙ্গু রোগীর হার সমান নয়। যেসব এলাকায় ডেঙ্গু রোগী বেশি, সেখানে মশা নিধনের জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। মাইকিং, জনসচেতনতা, ওষুধ ছিটানো—সবকিছু একসঙ্গে করতে হবে। এমনটা না করতে পারায় এখন পর্যন্ত জ্যামিতিক হারে বাড়ছে ডেঙ্গু।’