বর্তমানে ইন্টারনেট ছাড়া এক মুহূর্তও চলে না। কোনো না কোনো কাজে ব্যবহার করছেন ইন্টারনেট। কম্পিউটারে ঘরে বসেই অনেক কাজ করে ফেলা সম্ভব। এমনকি এখন অনেকেই ফ্রিল্যাংসিং করে আয় করছেন মাসে লাখ লাখ টাকা। এজন্য প্রয়োজন নিজের একটি কম্পিউটার।
যারা নতুন কম্পিউটার কিনতে চাচ্ছেন তাদের কিছু বিষয় জেনে রাখা জরুরি। কম্পিউটার কেনার আগে কিছু বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। এতে নিজের প্রয়োজন ও সাধ্যের মধ্যে খুব ভালো একটি কম্পিউটার কিনতে পারবেন। জেনে নিন কম্পিউটার কেনার আগে যা জানা জরুরি-
প্রসেসর
প্রথমেই যে কম্পিউটারটি কিনতে চাচ্ছেন সেটির প্রসেসর কেমন তা জেনে নিন। প্রসেসর হলো কম্পিউটারের প্রধান উপকরণ। কম্পিউটারের মূল নিয়ন্ত্রণ করে থাকে এই প্রসেসর। এটিকেই মূলত সিপিইউ বলা হয়। বর্তমানে বাজারে থাকা প্রসেসর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান গুলোর মধ্যে রয়েছে ইন্টেল ও এডিএম এর নাম।
তবে ইন্টেল প্রসেসরের চাহিদা বেশি। যেহেতু প্রসেসর কম্পিউটারের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ তাই এটি কেনার সময় অবশ্যই বিশেষ ভাবে সতর্ক থাকতে হবে। প্রসেসরের ক্লক স্পিড একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ক্লক স্পিড যত বেশি হবে প্রসেসরের প্রসেসিং ক্ষমতা তত বেশি হবে। আর একটি বিষয় হলো- প্রসেসরের সিরিজ যত উন্নত হবে এর স্পিড তত বাড়বে হবে।
বর্তমান বাজারে কোর-আই সিরিজ সবচেয়ে আধুনিক। সপ্তম প্রজন্মের প্রসেসরের মধ্যে কোর-আই৭ এক্সট্রিম অন্যতম। প্রসেসর কেনার সময় এর থ্রেড কয়টি তাও লক্ষ্য করা জরুরি। কোর এবং থ্রেড এর সংখ্যা বেশি হলে স্পিড বেশি হবে। এছাড়াও বাস স্পিড ও ক্যাশ মেমোরি সম্পর্কেও খেয়াল রাখতে হবে। ইন্টেল প্রসেসর কিনলে এটি টার্বো বস্ট টেকনোলজির কি-না তাও খেয়াল করতে হবে।
মাদারবোর্ড নির্বাচন
মাদারবোর্ড
কম্পিউটারের সব যন্ত্রাংশ এটির সঙ্গে যুক্ত থাকে। বর্তমানে গিগাবইই, ইন্টেল ও আসুসসহ অনেক ভালো মাদারবোর্ড আছে বাজারে। তবে যেটিই কিনেন সেটি আপডেট প্রসেসর সমার্থন যোগ্য হতে হবে। মাদারবোর্ডে থাকা র্যামের স্লট দেখে র্যাম কিনতে হবে। আধুনিক র্যামের টাইপ হলো ডিডিআর৪। এছাড়াও মাদারবোর্ডের ইউএসবি টাইপ, এর ভার্সন কতো তাও জেনে নিতে হবে। মাদারবোর্ডে এইচডিএমআই পোর্ট আছে কি না তাও দেখে নেওয়া জরুরি। স্মার্ট টেলিভিশন ও প্রজেক্টরের সঙ্গে কানেক্ট করতে হলে মাদারবোর্ডে এইচডিএমআই পোর্ট থাকতে হবে।
র্যাম
র্যাম একটি কম্পিউটারের গতি বাড়াতে সাহায্য করে। বর্তমানে দেশের বাজারে অনেক ব্র্যান্ডের র্যাম পাওয়া যায়। যতগুলো কোম্পানির র্যাম পাওয়া যায় তার মধ্যে ট্রানসেন্ড, টুইনমস খুবই জনপ্রিয় ব্র্যান্ড। র্যাম কেনার সময় এর বাস ফ্রিকোয়েন্সি দেখে কেনাই ভালো। ডিডিআর-থ্রি এর চেয়ে ডিডিআর ফোর র্যামের দক্ষতা বেশি। আর একটি বিষয় হলো- মাদারবোর্ডে র্যামের স্লট যেমন হবে আপনাকে ওই অনুপাতেই র্যাম কিনতে হবে।
হার্ডডিস্ক
একটি কম্পিউটারের যাবতীয় তথ্য জমা রাখতে হার্ডডিস্ক ব্যবহার করা হয়। এটি কম্পিউটারের ভার্চুয়াল র্যাম হিসেবেও কাজ করে। তসিবা, স্যামসাং ও ট্রানসেন্ড কোম্পানির হার্ডডিস্ক বর্তমানে বাজারে রয়েছে। হার্ডডিস্কে যত বেশি জায়গা থাকবে আপনি তত বেশি তথ্য সংগ্রহ করতে পারবেন। বর্তমানে ৫০০ জিবি থেকে ৩টিবি পর্যন্ত হার্ডডিস্ক পাওয়া যায়। হার্ডডিস্কের আরপিএম বেশি হলে এর ডাটা ট্রন্সফার ক্ষমতা বেশি হবে।
কম্পিউটার কেসিং
মাদারবোর্ড, হার্ডডিস্কসহ অন্যান্য যন্ত্রাশং সাজিয়ে রাখার বক্সটিই হলো কেসিং। কেসিং নির্বাচনের জন্য ব্র্যান্ড ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। তবে কেসিং নির্বাচন করার সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন এটি দেখতে সুন্দর এবং এটি দিয়ে বাতাস যাতায়াতের সু-ব্যবস্থা থাকে। আর একটি বিষয় হলো-কেসিং এর সঙ্গেই পাওয়ার সাপ্লাই সংযুক্ত থাকে এ কারণে কেসিং এর মূল্য পাওয়ার সাপ্লাইয়ের কোয়ালিটির ওপর অনেক নির্ভর করে।
মনিটর
একটি কম্পিউটারের প্রধান আউটপুট হলো এর সঙ্গে সংযুক্ত মনিটরটি। কম্পিউটারের জন্য একটি ভালো ব্র্যান্ডের মনিটর কিনুন। মনিটর কেনার সময় আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী স্ক্রিনের সাইজ নির্বাচন করুন। এখনকার অনেক মনিটরে বিল্ট-ইন টিভি কার্ড রয়েছে। কম্পিউটার ও টেলিভিশনের সুবিধা একত্রে ভোগ করতে চাইলে টিউটার যুক্ত মনিটর কিনে নিতে পারেন বা আলাদা টিভি কার্ড সংযুক্ত করতে পারেন।
কি-বোর্ড ও মাউস
কম্পিউটারের গুরুত্বপূর্ণ ইনপুট ডিভাইসের মধ্যে অন্যতম হলো কি-বোর্ড। বাজারে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের কি-বোর্ড পাওয়া যায়। এফোরটেক, ওয়ালটন, ডিলাক্স ও মারকারি ব্র্যান্ডের কি-বোর্ড এগুলোর মধ্যে অন্যতম। এটি কেনার সময় লক্ষ্য করবেন বাংলা অক্ষর রয়েছে কি-না অথবা আপনার প্রয়োজনীয় ফন্ট আছে কি-না? কম্পিউটারের গুরুত্বপূর্ণ ইনপুট ডিভাইসের মধ্যে অন্যতম আর একটি হলো মাউস। বাজারে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের কি-বোর্ড পাওয়া যায়। এফোরটেক, ওয়ালটন, ডিলাক্স ও মারকারি ব্র্যান্ডের মাউস পাওয়া যায়। ব্যবহার বান্ধব বা ধরতে সুবিধা হয় এমন মাউস নির্বাচন করলে ভাল। রয়েছে বিভিন্ন কালারের মাউস। চাইলে আপনি আপনার পছন্দ মতো কালার নির্বাচন করতে পারেন। বর্তমানে গেমারদের জন্য কালারফুল ও আলাদা সুবিধা যুক্ত মাউস পাওয়া যায়।
ইউপিএস
ডেস্কটপ কম্পিউটারের জন্য ইউপিএস একটি অপরিহার্য অংশ। বাজারে দুই ধরনের ইউপিএস পাওয়া যায়। একটি হলো অনলাই ইউপিএস ও অন্যটি হলো অফলাইন ইউপিএস। সাধারণত একটি শর্ট ব্যাকআপের ইউপিএস ২০ থেকে ২৫ মিনিট ব্যাকআপ দিয়ে থাকে। সূত্র: লাইফওয়্যার