আদালতের অনুমতি ছাড়া বিদেশ যেতে পারবেন না পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা জাকির হোসেন। মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের মামলায় এ আদেশ দিয়েছেন চেম্বার আদালত। এছাড়া হাইকোর্টের দেয়া জামিনও বহাল রাখেন আদালত। তবে আদালতে পাসপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে।

গতকাল বুধবার চেম্বার আদালতের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম এ আদেশ দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদকের সিনিয়র অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ খুরশীদ আলম খান। তিনি বর্তমানে মন্ত্রণালয়ে কর্মরত বলেও জানান আইনজীবী। তার জামিন বাতিল চেয়ে দুদকের করা আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে আজ বুধবার আপিল বিভাগের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমের চেম্বার আদালত এ আদেশ দেন। আদালতে দুদকের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ খুরশীদ আলম খান। গত ১৭ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বে তার জামিন মঞ্জুর করে আদেশ দেন। পরে ওই জামিন স্থগিত ও বাতিল চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সে আবেদনের ওপর শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে গতকাল বুধবার। এর আগে গত ২৯ আগস্ট ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক ফয়সাল বিন আতিক তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছিলেন।
আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে করা মামলায় উচ্চ আদালত ছয় সপ্তাহের মধ্যে জাকির হোসেনকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের আদেশ দিয়েছিলেন। উচ্চ আদালতের সেই নির্দেশনা অনুযায়ী, আসামি ২৯ আগস্ট আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চান। তবে আদালত তার জামিন আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পরে তিনি হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেন। ১৭ সেপ্টেম্বর অবকাশকালীন আদালত তার জামিন মঞ্জুর করে আদেশ দেন। বর্তমানে মামলা তদন্তাধীন রয়েছে বলেও জানান দুদকের আইনজীবী। গত ১৪ মার্চ জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। মামলায় তার বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত ১৫ কোটি ৪০ লাখ টাকার সম্পদ অর্জন ও ভোগদখলের অভিযোগ আনা হয়।
জাকির হোসেনের জমা দেয়া আয়কর নথি ধরে অনুসন্ধান চালিয়ে দুদক তার অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদের তথ্য পায়। ২০২১-২২ আয়কর নথি অনুযায়ী, জাকির হোসেনের নামে ধানমন্ডির ১ নম্বর সড়কে ৫০ লাখ ৮৪ হাজার আট শ’ টাকা মূল্যের একটি ফ্ল্যাট, খিলগাঁওয়ের নন্দীপাড়ায় ২৬৩ অজুতাংশ জমির ওপর ৭৫ লাখ ৭৫ হাজার সাত শ’ টাকা খরচ করে পাঁচতলা ভবন নির্মাণসহ মোট এক কোটি ৫১ লাখ ১০ হাজার দুই শ’ টাকার স্থাবর সম্পদ পাওয়া যায়। এছাড়া ১৩ কোটি ৩০ লাখ টাকার স য়পত্র, ৩৮ লাখ ৯৫ হাজার টাকা মূল্যের টয়োটা গাড়ি, নগদ ১৯ লাখ ১৯ হাজার ৯৭০ টাকা ও ব্যাংক হিসাবে রক্ষিত ৭২ হাজার ৫০৬ টাকাসহ মোট ১৩ কোটি ৮৮ লাখ ৮৭ হাজার ৪৭৬ টাকার অস্থাবর সম্পদের তথ্য রয়েছে আয় করে। সব মিলিয়ে জাকির হোসেনের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের মূল্য দাঁড়ায় ১৫ কোটি ৩৯ লাখ ৯৭ হাজার ৬৭৬ টাকা। ওই সম্পদের বিপরীতে আয়ের উৎস সম্পর্কে তিনি সঠিক তথ্য প্রদর্শন করতে সক্ষম হননি বলে ওই সম্পদ তার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত মর্মে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়।
তাছাড়া অনুসন্ধানে আসামির নামীয় ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, বাগেরহাট শাখায় বিভিন্ন সময়ে সাতটি অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ৩১ কোটি ৭০ লাখ ৬০ হাজার নয়শ ১৩ টাকা, সোনালী ব্যাংক লিমিটেড ভিকারুননিসা নুন স্কুল শাখার একটি অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে চার কোটি তিন লাখ ১০ হাজার ৯৩০ টাকা এবং পদ্মা ব্যাংক লিমিটেডের ধানমন্ডি শাখায় এফডিআর হিসাবে পাঁচ কোটি ৬২ লাখ ৩৫ হাজার ১৫৯ টাকাসহ সর্বমোট ৪১ কোটি ৩৬ লাখ সাত হাজার টাকার লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। ব্যাংকগুলোতে লেনদেন করা ওই অর্থের বৈধ উৎস সংক্রান্ত কোনো রেকর্ডপত্র অনুসন্ধানের সময় পাওয়া যায়নি। মামলার বিবরণীতে আরো বলা হয়েছে, আসামিরা আরো অনেক অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন, যেগুলোর আয়ের উৎস উল্লেখ নেই। জাকির হোসেন ১৯৯২ সালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগ দেন। তিনি ১৯৯৫ সালে কুয়েত দূতাবাসে এবং ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত কেনিয়ার নাইরোবিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন।