নিম্নমানের মশার কয়েলে সয়লাব মাধবদীর বাজারগুলো। এসব কয়েল ব্যবহারে স্বাস্থ্যের ঝুঁকিতে পড়েছে মানুষ। তারপরও মশার উপদ্রব থেকে বাঁচতে নিম্নমানের কয়েলই কিনছেন। এসব কয়েল বিক্রি বন্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। যার ফলে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা অধিক মুনাফা লাভের আশায় এ নিম্নমানের কয়েল বাজারজাত করছেন। মাধবদীতে ক্রমেই দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। দিন দিন মশাবাহিত এ রোগের প্রকোপ বাড়ায় মশা থেকে বাঁচতে বেড়েছে কয়েলের চাহিদা। শিল্পাঞ্চল নরসিংদীর মাধবদীতে করোনার মতো ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা যখন দিন দিন বাড়ছে তখন ডেঙ্গু আতঙ্কে মশার কামড়ের হাত থেকে বাঁচতে মাধবদীর দরিদ্র মানুষ কয়েলের ওপর নির্ভর করে থাকে। দিনে-রাতে মশা তাড়াতে মানুষ কয়েল ব্যবহার করে থাকে। ডেঙ্গুর কারণে অন্য বছরের তুলনায় চলতি বছর মাধবদীতে মশার কয়েলের চাহিদা বেড়েছে কয়েকগুণ। সেই সুযোগে মাধবদী শহরের বাজার সহ আশপাশের এলাকার বাজারগুলোতে ছেয়ে গেছে নিম্নমানের অনুমোদনহীন নন-ব্র্যান্ডের কয়েলে। ফলে গরিব ও অসহায় মানুষ মশা তাড়াতে গিয়ে অসহায় অবস্থার মধ্যে পড়েছে। এসব নিম্নমানের কয়েলে উচ্চমাত্রার রাসায়নিক ব্যবহারের কারণে মশা দূরে থাকে আবার দামেও সস্তা। ফলে নন-ব্র্যান্ডের কয়েলের দাপট এখন পুরো বাজারজুড়ে। নিম্নমানের এসব কয়েল জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাতœক ক্ষতিকর বলে জানিয়েছেন স্থানীয় স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। কয়েল ব্যবহারে স্বাস্থ্যঝুঁকি বিষয়ে স্থানীয় একজন এমবিবিএস ডাক্তার ওবায়ুদল বারী বলেন, মশার কয়েলে পারমেথ্রিন, বায়ো-অ্যালোথ্রিন, টেট্রাথ্রিন, ইমিপোথ্রিনের মতো রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়। কোনো পণ্যে অতিরিক্ত মাত্রায় এসব ব্যবহার হলে শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি ও ফুসফুসের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এমনকি দীর্ঘমেয়াদে কিডনি রোগ এবং ক্যানসারেরও ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। এছাড়া কয়েলের ধোঁয়া থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড ও কার্বন মনোঅক্সাইড বের হয়, যা শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর। বিশেষ করে গর্ভবতী নারী ও শিশুর বেশি ক্ষতি করে। এমনকি গর্ভপাতের মতো ঘটনাও ঘটতে পারে। শুধু তাই নয়, একটি মশার কয়েল থেকে যে পরিমাণ ধোঁয়া বের হয় তা একশ’টিরও বেশি সিগারেটের সমান ক্ষতির করে একজনের মানবদেহে। তথ্য মতে, বাজারে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) অনুমোদিত ব্র্যান্ডের বা তালিকাভুক্ত মশার কয়েলের সংখ্যা ১০৩টি। মাধবদী বাজার ঘুরে দেখা যায়, এসিআই, গুডনাইট, ঈগল ও গ্লোব সহ আরো কিছু ব্রান্ডের কয়েল রয়েছে। তাছাড়া মাধবদী বাজার সহ আশপাশের বিভিন্ন বাজারে দৃশ্যমান পান্ডা, পান্ডা কিং, এট্টাক কিং, এক্সটেইম (বসুন্ধরা গ্রুপ), বাওজা (চায়না), নিনজা, ফোর্স, প্রেন্ড কিং, পাতা কিং, সোনালী কিং, জাম্বু এক্সটা পাওয়ার, পঙ্খিরাজ, জোনাকী, ঈগল ম্যাক্স, বারুদ, স্কোরপিয়ন, গুড নাইট, ঈগল ওয়ান স্ট্রেইট গুটার, ঈগল বুস্টার, তিতাস, রিকো, জাম্বু বেঙ্গল, দোয়েল সুপারসহ বিভিন্ন নামীয় কয়েল রয়েছে। এছাড়াও আরো বাহারি নামের অনেক মশার কয়েল রয়েছে মাধবদী বাজারের বিভিন্ন ছোট বড় দোকানগুলোতে। তবে কোনো কোনোটি অনুমোদিত ব্র্যান্ড হলেও বাজারে ওই নামেরই নকল কয়েলও মিলছে অহরহ। ক্রেতাদের জন্যও বুঝতে পারা কঠিন কোনটা আসল, আর কোনটা নকল কয়েল। এমনকি এসব কয়েলের প্যাকেটের গায়ে নেই কোনো উৎপাদক বা বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানের সুনির্দিষ্ট ঠিকানা। আবার কোনো কোনো কয়েলের প্যাকেটে বিএসটিআইয়ের লোগো সাঁটা থাকলেও সেগুলো বিএসটিআই অনুমোদিত নয়। অন্য বছরের তুলনায় এ বছর মশার কয়েলের চাহিদা বেড়েছে অন্তত তিনগুণ। এই সুযোগে মাধবদী বাজার ছেয়ে গেছে নি¤œমানের অনুমোদনহীন নন-ব্র্যান্ডের কয়েলে। কথা হয় এসব কয়েলের ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে। অধিকাংশ বিক্রেতা এসব কয়েলের অনুমোদনের বিষয়ে জানেন না। অনেকে আবার ঠিকঠাক কয়েলের ব্র্যান্ডের নামও বলতে পারেন না। এসব কয়েলের সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বা কোনো বিক্রয় প্রতিনিধির খোঁজ নেই বিক্রেতার কাছে। শুধু আছে কয়েকটি মোবাইল ফোন নম্বর। কয়েলের চাহিদা থাকলে ওই নম্বরে ফোন দিয়ে নতুন কয়েল নেন তারা। মানহীন মশার কয়েল উৎপাদন ও বাজারজাত করণের প্রক্রিয়াটি সম্পুর্ন ভাবে সরকারের নিয়ন্ত্রনে নিয়ে আসতে হবে বলে মনে করেন স্থানীয় সচেতন মহল। অন্যথায় মানহীন মশার কয়েল ব্যবহারে সাধারণ মানুষকে চরমভাবে খেসারত দিতে হবে বলেও মনে করেন সচেতন মহল।