অন্নদাশঙ্কর রায় (১৯০৪-২০০২) বাংলা ছড়ার আধুনিক রূপকার। তার হাত ধরেই বাংলা সাহিত্যে ছড়া পেয়েছে নতুন প্রাণ। কিংবদন্তি এই ছড়াশিল্পী বাংলা ছড়াতে এনেছেন নতুন একটা ধারা। তিনি ছড়া, কবিতা, প্রবন্ধ, গল্প, উপন্যাস-ভ্রমণ কাহিনী, রম্যরচনা এবং আত্মজীবনীও লিখেছেন। বহুমুখী প্রতিভাধর এই ছড়াশিল্পী প্রতিটি ক্ষেত্রেই তার প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন। অন্নদাশঙ্কর রায়ের বাংলা ছড়াসম্ভার বিষয় বৈচিত্র্যে তাৎপর্যপূর্ণ। প্রথম জীবনে রবীন্দ্রনাথ এবং পরে বুদ্ধদেব বসুর অনুরোধে তিনি ছড়া রচনা শুরু করে। সামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয় থেকে শুরু করে প্রাণীজগতের ক্ষুদ্র জীবজন্তু স্থান পেয়েছে তার ছড়ায়। তীব্র শ্লেষে, স্নিগ্ধ পরিহাসে, আবার কখনো নিখাদ কৌতুকে তিনি মানুষের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনের অসঙ্গতিগুলো তুলে ধরেন ছড়ার মাধ্যমে। একসময়ের ছেলেভুলানো ছড়াকে তিনি উপেক্ষিত স্তর থেকে উন্নীত করেন অভিজাত সাহিত্যের শৈল্পিক স্তরে। মূলত তিনি ছোটদের ঘুমপাড়ানির ছড়াকে হঠাৎ করে ঘুম ভাঙানোর ছড়াতে বাঁক ঘোরানোর দায়িত্ব নিয়ে একটা বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটিয়েছে। তার বইয়ের নামকরণের মধ্যেই অন্যরকম স্বাদ রয়েছে। যেমন তার বিখ্যাত ছড়ার বইগুলোর মধ্যে রয়েছে- ‘উড়কি ধানের মুড়কি’ (১৯৪), ‘রাঙা ধানের খৈ’ (১৯৫০),‘ডালিম গাছের মৌ’ (১৯৫৮), ‘শালি ধানের চিড়ে’ (১৯৭২), ‘আতা গাছে তোতা’ (১৯৭৪), ‘হৈ রৈ বাবুই হৈ’ (১৯৭৭), ‘ক্ষীর নদীর কূলে’ (১৯৮০), ‘হট্টমালার দেশে’ (১৯৮০), ‘ছড়াসমগ্র’ (১ম সং, ১৯৮১), ‘রাঙা মাথার চিরুনি’ (১ম সং, ১৯৮৫), ‘বিন্নি ধানের খৈ’ (১৯৮৯), ‘কলকাতার পাঁচালি’ (১৯৯২), ‘ছড়াসমগ্র’ (২য় সং, ১৯৯৩), ‘সাত ভাই চম্পা’ (১৯৯৪), ‘যাদু এ তো বড়’ (১৯৯৪), ‘খেয়াল খুশির ছড়া’ (১৯৯৭), ‘দোল দোল দুলুনি’ (১৯৯৮), (২০০২) ইত্যাদি। মূলত স্বনামখ্যাত যোগীন্দ্রনাথ সরকারের ‘খুকুমনির ছড়া’ ছিল তার আদর্শ।
অন্নদাশঙ্কর রায় ছোটদের জন্য লেখা শুরু করেছিলেন ‘সন্দেশ পত্রিকায়’। তবে ছোটদের জন্য লেখা তার প্রথম বই ‘ইউরোপের চিঠি’। মূলত এটি একটি ভ্রমণকাহিনী। ‘কিশোর সঞ্চয়ন’ নামে শিশুকিশোরদের জন্য তিনি একটি অপূর্ব গ্রন্থ রচনা করেছেন। ছোটদের মনস্তত্ত্বকে ধারণ করে তিনি তাদের মনোজগতে বিচরণ করে তাদেরই উপযোগী মজার মজার ছড়া উপহার দিয়েছেন। যেগুলো ছিল বিষয় বৈচিত্র্যে অসাধারণ আর ভাববৈচিত্র্যে অতুলনীয়। রাশেদ রউফের মতে, ‘ছোটদের তিনি গভীরভাবে ভালোবাসতেন বলে তিনি আয়ত্ত করতে পেরেছিলেন শিশু মনস্তত্ত্ব। তাই তাদের জন্য যেমন লিখেছেন হালকা হাসি ও যতœশীল ছিলেন তাদের মানসিক ও নৈতিক ভিত্তি গঠনে। বিষয় বৈচিত্র্যে তিনি যেমন অসাধারণ, তেমনি ভাববৈচিত্রে?্য অতুলনীয়। তার চিন্তা-চেতনায় তিনি ছিলেন আধুনিক, আঙ্গিক ও শব্দ যোজনায় নির্মাণ ও উপস্থাপনায় ছিলেন সপ্রতিভ।’
ছোটদের ছড়ায় শিশুকিশোরদের সুখদুঃখ, প্রতিদিনকার অভিব্যক্তি, সরস কৌতুক ভালোলাগা ও মন্দলাগা ইত্যাদি অতি সহজে ও সরলভাবে ফুটে উঠেছে। যাতে করে ছড়াগুলো একইসাথে শিশু ও বড়দের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তিনি শৈশবের কল্পনাকে বাংলাদেশের লৌকিক প্রচ্ছদের, প্র?াত্যাহিক জীবনযাত্রায় এনে একই সুতায় গেঁথে ফেলেছেন। তিনিই বাংলায় প্রথম লিমেরিক রচনা করেন। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী অন্নদাশঙ্কর রায় ২০ বছর বয়সে ওড়িয়া সাহিত্যিক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। তার প্রথম কবিতা ওড়িয়া ভাষায় রচিত। কম বয়সি ‘প্রভা’ নামে ওড়িয়া ভাষায় হাতে লেখা একটি পত্রিকা বের করেন। বাংলা, ইংরেজি, ওড়িয়া, সংস্কৃত, হিন্দি সব ভাষায় পারদর্শী হলেও বাংলাকেই তিনি সাহিত্য চর্চার মাধ্যম হিসেবে বেছে নেন। বাড়ির ও কলেজের গ্রন্থাগার থেকে তিনি ভারতীয এবং ইউরোপীয় সাহিত্যের সাথে পরিচিত হন। স্কুলে তিনি শিশু, সন্দেশ, মৌচাক, সবুজপত্র, প্রবাসী, মডার্ন রিভিউ প্রভৃতি পত্রিকা পড়ার সুযোগ পান। মাত্র ১৩ বছর বয়সে অক্সফোর্ড থেকে প্রকাশিত পত্রিকার গ্রাহক হন এবং সে পত্রিকায় লেখা ছাপান। প্রমথ চৌধুরী সম্পাদিত ‘সবুজপত্র’ তাকে লেখক হতে অনুপ্রেরণা জোগান। সবুজপত্র পত্রিকার দুই প্রধান লেখক রবীন্দ্রনাথ ও প্রমথ চৌধুরীর জীবন দর্শন ও শিল্প দর্শন অন্নদাশঙ্কর রায়ের সাহিত্য জীবনের গভীর প্রভাব ফেলেন। তিনি ১৬ বছর বয়সে টলস্টয়ের গল্প ‘টুয়েন্টি থ্রি টেলস’ শুধু বাংলায় অনুবাদ করে ক্ষান্ত হননি তা প্রবাসী পত্রিকায় ১৯২০ সালে ছাপা হয়। ১৯২৮ সালে তার প্রথম প্রকাশিত প্রবন্ধ ‘তারুণ্য’ ‘বিচিত্রা’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। কিন্তু ইউরোপ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখা ‘পথে প্রবাসে’ দিয়ে বাংলা সাহিত্যের তিনি তার অবস্থান তৈরি করেন। ১৯২৭-১৯২৯ সাল পর্যন্ত এই দুই বছর উপেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায় সম্পাদিত ‘বিচিত্রা’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় ‘ইউরোপের চিঠি’। তিনি ‘লীলাময় রায়’ ছদ্মনামে বেশ কিছুদিন লিখেছেন। অন্নদাশঙ্কর রায়ের হাতেই আধুনিক বাংলা ছড়ায় বৈচিত্র্যতা আসে। বস্তুত বিভিন্ন সময়ে শিশু সাহিত্যের মৌলিক বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়।
লোকসাহিত্য বিজ্ঞানী অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান এক প্রবন্ধে বলেন, ‘এক-একটা দশকে এসে আমাদের শিশুসহিত্য এক বা একাধিক বৈশিষ্ট্যঅর্জন করেছে। মধ্য চল্লিশ মধ্য পঞ্চাশ পর্যন্ত রচিত শিশুসাহিত্যের দুটি দিক লক্ষ্য করা যায়। এক. পুরনো ঐতিহ্য ধারাবাহিকতা রক্ষা এবং দুই. কিছু বিচ্ছিন্ন প্রয়াস (ভিন্ন অবলোকন- সাহিত্যের দিকলয়)’
‘রাঙাধানের খৈ’ ছড়া গ্রন্থিটিতে রয়েছে সর্বমোট ছাব্বিশটি মনোরম ছড়া। এই গ্রন্থের ‘খুকু ও খোকা’(১৯৪৭) ছড়াটি উপমহাদেশীয় জনগোষ্ঠীর মনোযন্ত্রণা ও দেশপ্রেম প্রকাশিত হয়েছে। যারা দেশ ভাগের জন্য দায়ী তাদের প্রতি ছড়াকার ভর্ৎসনা প্রকাশ করেছেন। দেশভাগের রক্তাক্ত যন্ত্রণাকে তিনি তার ছড়ায় অবিস্মরণীয় করে রেখেছেন। একটি তেলের শিশি ভাঙার সাথে সার্বভৌমত্বকে ভাঙার তুলনা সত্যিই অতুলনীয়।
‘তেলের শিশি ভাঙ্গল বলে
খুকুর পরে রাগ করো
তোমরা যে সব বুড়ো খোকা
ভারত ভেঙ্গ ভাগ করো!
তার বেলা?’
এখানে কত সহজে ও সরলভাবে শৈল্পিক একটি বর্ণনা রয়েছে। এটি যত সহজ মনে হবে আসলে ততখানি সহজ নয়। এতে সুর দিয়েছেন বিখ্যাত সুরকার সলিল চৌধুরী। তার বেশ কিছু ছড়া প্রতিষ্ঠিত সুরকারদের সুরে অনেক জনপ্রিয় গানে রূপ পেয়েছে। যেগুলো কালজয়ী হয়েছে। তার শেষ ছড়াটি সুরজিৎ দাশগুপ্ত লিখে রাখেন। ২০০২ সালে সন্দেশ পত্রিকায় শারদীয় সংখ্যায় ‘ঐরাবত’ নামে তা প্রকাশিত হয়।
শিশুর প্রার্থনা ছড়াটি শিশুদের মনের অন্যরকম একটি ভাবনার উদ্রেক করে।
যেমন :
‘ভয় ভেঙে দাও সকল লোকের
সকল রোগের সকল লেখ
সকল রকম ভয়ানকের
ভয় ভেঙে দাও প্রভু।’
অন্নদাশঙ্কর রায় শিশু সাহিত্যের মধ্যদিয়ে ছড়াকে সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছেন। তাই ড. আশরাফ সিদ্দিকী বলেন, ‘ছড়া শুধু সমাজ সংসার নিয়ে কথা বলে না। দেশ ও দেশের রাজনৈতিক অবস্থা নিয়েও বলে। ছড়াও কালের সাথে অনবরত তার রূপ বদলায়।’ (আবহমান বাংলা- ড আশরাফ সিদ্দিকী, বাংলাদেশ ফোকলোর পরিষদ)
রবীন্দ্রনাথ ছেলেভুলানো ছড়ায় বলেছিলেন- ‘আমি ছড়াকে মেঘের সাথে তুলনা করিয়াছি। উভয়েই পরিবর্তনশীল, বিভিন্ন বর্ণের রঞ্জিত বায়ুস্রোতে যথেষ্ট ভাসমান। দেখিয়া মনে হয় নিরর্থক। ছড়াও কলা বিচার শাস্ত্রের বাহির। মেঘ বিজ্ঞান ও শাস্ত্র নিয়মের মধ্যে ভালো করিয়া ধরা দেয় নাই। অথচ জড়জগতে এবং মানব জগতে এই দুই উচ্ছৃঙ্খল অদ্ভুত পদার্থ। চিরকাল মহৎ উদ্দেশ্য সাধন করিয়া আসিয়াছে। মেঘ বারিধারায় নামিয়া আসিয় শিশু-শস্যকে প্রাণদান করিতেছে এবং ছড়াগুলি স্নেহরসে বিগলিত হইয়া কল্পনা বৃষ্টিতে শিশু-হৃদয় উর্বর করিয়া তুলিতেছে।’
‘ডালিম গাছে মৌ’ গ্রন্থের ছড়াসংখ্যা চৌত্রিশ। এ গ্রন্থের প্রতিটি ছড়ায় শিশুমনের কথা বলা হয়েছে। শৈশবের জিজ্ঞাসা, ভালোলাগা, সুখদুঃখ, প্রাণী উদ্ভিদের সাথে পরিবারের অভিজ্ঞতা। এ গ্রন্থের অসাধারণ আরো কিছু ছড়া ‘পুতুল’, ‘ছবি-আঁকা’, ‘কাতুকুতু’, ‘আদর কর বাদরকে’, ‘পটল’, ‘বাদুড় ঝোলা’ প্রভৃতি ছড়া যেন শিশুর সাথে সত্যের আলাপন। ‘পুতুল’ ছড়ায় শিশু বলেছেৃ
‘পুতুল আমার রাজা
খেতে দেব সাজা
পুতুল আমার রানী
কেমন মুখখানি।’
অসাধারণ সব ছড়া। ছোট ছোট সোনামণির মন, মনন ও স্বভাব সুলভ বৈশিষ্ট্য কত সহজভাবে প্রকাশিত হয়েছে। সাথে রয়েছে আনন্দময় শিক্ষা, ছড়াগুলো যেন তার কাছে এক একটি শিশু। যারা তার সাথে অনবরত ছন্দের জাদুতে তাদের মনের কথা বলে যাচ্ছে।
কাতুকুতু ছড়ায় এক সাহসী শিশুর কথা-
‘বাঘকে করি না ভয়
সাপকে করি না ভয়
ভয় করি নাকে ভুতুকে
আর কোনো ভয় নাইকো আমার
ভয় কই শুধু কাতুকুতুকে।’
‘আতা গাছে তোতা’ গ্রন্থের ছড়াসংখ্যা চল্লিশ। এ গ্রন্থে শিশু-কিশোরদের শৈশবের মনের ইচ্ছা-আকাক্সক্ষাগুলোই প্রতিফলিত হয়েছে। ‘হোঁদল’, ‘চিড়িয়াখানার খবর’, ‘বেড়ালের স্বপ্ন’, ‘লতাকাহিনী’, ‘কলাভবন’ প্রভৃতি ছড়াতেও শিশুমনের অভিব্যক্তি প্রকাশ পেয়েছে। কলাভবন ছড়ায়ৃ
‘১৬ রকম কলায় তিনি
পরম অনুরক্ত
তারই কথায় টিকিট কিনি
আমি কলার ভক্ত’
‘রাঙা মাথার চিরুনি’ গ্রন্থটিতেও রয়েছে ছত্রিশটি ছড়ার এক অনুপম শিল্পরূপ। এ গ্রন্থের ‘ঢাকাই ছড়া’, ‘বাঘের গন্ধ পাঁউ’, ‘বেড়াল মাসী’, ‘ভূত পায়েস’ প্রভৃতি ছড়া যেন রসের ভা-ার। শিশুকিশোররা এ সকল ছড়া থেকে তাদের আনন্দের সম্ভার খুঁজে পাবে। ‘এক হাতে বাজে না তালি’ ছড়াটি-
‘এক হাতে বাজে না তালি
গলার সঙ্গে আছে গালি।
মারার সঙ্গে আছে মারি।
কড়ার সঙ্গে আছে কাটি
লাঠার সঙ্গে আছে লাঠি।’
‘হৈ রে বাবুই হৈ’ গ্রন্থে মোট ছত্রিশটি ছড়া রয়েছে। এই গ্রন্থে শিশু-কিশোরদের জীবনমানের শিল্পরূপ সন্নিবেশিত হয়েছে এবং একই সাথে সমকালীন সামাজিক সমস্যাগুলো ফুটে উঠেছে। ‘লাল টুকটুকে বাঁচাও’, ‘আলাদিন’ প্রভৃতিতে এমনই সত্যের প্রকাশ ঘটেছে। ‘আর একটি তারা’ ছড়াতে কবি বলেছেন-
‘এখানে আর যায় না থাকা
কোথাও নেই জায়গা ফাঁকা
গা মেলবার পা ফেলবার ঠাঁই।
রাস্তা ছিলো, তাও খোঁড়া
তলিয়ে যাবে গাড়ি ঘোড়া
মাঠ ছিলো, তা দালানে বোঝাই।’
‘বিন্নি ধানের খই’ গ্রন্থটিতে চল্লিশটি ছড়া রয়েছে। এই গ্রন্থে শৈশব-কৈশোরের ভালো লাগাকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। অনেক ছড়াতে তিনি পশুপ্রেমী ভাবাবেগকে প্রাধান্য দিয়েছেন। ‘বিন্দু’ ছড়ায় প্রভুভক্ত প্রাণী কুকুরকে উপস্থাপন করেছেন প্রাঞ্জল ভাষায়-
‘যদি বহু দূরে যাই
খাওয়া-দাওয়া করবে সে বন্ধ
ক’দিন উপোসি থেকে হায়
শরীরের হাল হয় মন্দ!’
‘টাক’ ছড়াটি যেন রসের ভা-ারৃ
‘টাক পড়ার
এইতো সুগুন
টেকো মাথায়
হয় না উকুন।’
‘খেলোয়াড়’ ছড়ায় তিনি খেলার মাঠ আর জীবনের মাঠকে একরূপে
দেখিয়েছেন।
‘খেলোয়াড়, তুমি মনে রেখো এই কথা
সব খেলাতেই জিৎ আছে আর হার আছে
হার যদি হয় সেটাও খেলার অঙ্গ
জীবনের খেলা সেখানে ও এই রঙ্গ
জীবনের মাঠে জয় আছে পরাজয় আছে
জয় পরাজয় জীবনের দুই অঙ্গ
বেঁচে যদি থাকো পরে একদিন জয় আছে।’
অন্নদাশঙ্কর এক জায়গায় বলেছেন, ‘ছড়া একপ্রকার আর্টলেস আর্ট। শিশুরা সহজে পারে, বয়স্করা পারে না। মেয়েরা সহজে পারে, পুরুষেরা সহজে পারে না, অশিক্ষিতরা সহজে পারে, শিক্ষিতরা সহজে পারে না। মূর্খেতে বুঝিতে পারে, প-িতে লাগে ধন্ধ।’ অন্নদাশঙ্কর জটিলবিষয়কে সহজ ও সরলভাবে উপস্থাপন করতে পেরেছেন তার ছড়ায়। সেখানে রাজনৈতিক, সামাজিকসহ সকল বিষয়কে তিনি সমানভাবে উপস্থাপন করেছেন। যেমন-
‘দাদু, এ তো বড় রঙ্গ
দাদু, এতো বড় রঙ্গ
তোমরা তখন করেছিলে কি
ভাঙল যখন বঙ্গ
দিদি, আমরা তখন করতেছিলুম
ভায়ে ভায়ে দাঙ্গা
আপন যদি পর হয়ে যায়
ঘর হয়ে যায় ভঙ্গ।’
ছড়া প্রসঙ্গে ধীমান দাশগুপ্তকে দেয়া একটি সাক্ষাৎকারে অন্নদাশঙ্কর রায় বলেন, ‘আমার কাছে আদর্শ ছড়া ছিল আগডুম বাগডুম ঘোড়াডুম সাজে, খোকা ঘুমালো পাড়া জুড়ালো, হাট্টিমাটিম টিম। এইসব খাঁটি লোকসংস্কৃতি, মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে পুরুষানুক্রমে যা সঞ্চালিত হয়। একদিকে এই আরেকদিকে হিউমার আর ননসেন্স কিছু। এইসব লক্ষ্য ছড়ায় কত দিনের অভিজ্ঞতা উইজডম ধরা থাকে।’
তিনি আরো বলেন, ‘এমনিতে কবিতার মতো ছড়ার কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম নেই, ছড়া বানাবার। ছড়া হয় আকস্মিক, ইরেগুলার। সেখানে আর্ট আছে, আর্টিফিশিয়ালিটির স্থান নেই। ছড়া হবে ইরেগুলার, হয়তো একটু আনইভেন, বাকপটুতা, কারিগরি নয়।’
ছোটদের মনকে জয় করেছেন তাদেরই মনের জগতে বিচরণ করে। তিনি তার ছড়ায় শিশুদের মনের মজার কথা, কৌতুক আর ইচ্ছা আকাক্সক্ষাকে উপস্থাপন করেছেন। আর অতি সহজেই হয়ে গেছেন শিশুদের কাছের মানুষ। তাদের সাথে গড়ে উঠেছে বন্ধুত্ব। যেমন-
‘মিষ্টি লাগে দুষ্টু মেয়ের
দুষ্টুমি গো ঝুমঝুমি
কেমন মেয়ে কত তুমি।’
ছান্দাসিক প্রবোধচন্দ্র সেন অন্নদাশঙ্করের ছড়া প্রসঙ্গে লিখেছিলেন- ‘তার ছড়াগুলো ছন্দ ও বলার ভঙ্গিতে হালকা কিন্তু ভাবে ভারি। শিল্পগুণ বজায় রেখে তিনি তার রচনার ছন্দ ও বলার ভঙ্গিকে যথাসম্ভব মুখের ভাষার কাছাকাছি নিয়ে গেছেন।’
অন্নদাশঙ্কর রায়ের ছড়াগুলো ভাবে গম্ভীর কিন্তু ছন্দ ও প্রকাশে অতি সরল। শিল্পগুণ সমন্বিত ছড়াগুলো সাধারণ মানুষের মুখের কথার মতো।
যা শিশু-কিশোর থেকে সব বয়সেরই পাঠ্য। যেমন-
‘হাঁ গো হাঁ
পটলের মা
বর্গীরা পৌঁছালো বর্মা
আসতে কি পারে গঙ্গার ধারে
এদিকে যে রয়েছেন শর্মা।’
তার ছড়ার সহজ সরল ছন্দ সরল কথাগুলো দুলকি তালে চলে পাঠকের মন অনায়াসে জয় করে নেয়। যেমন-
‘বাতাসিয়া লুপ
ছটা কুড়ি
ট্রেন ছেড়েছে শিলিগুড়ি।
ডিং ডং
ছাড়িয়ে গেলো কার্সিয়ং
ঝুম ঝুম
এবার বুঝি এলো ঘুম।
টিং টং
ঘুম থেকে যায় দার্জিলিং
ইয়া ইয়া
এই কি সেই বাতাসিয়া?
চুপ চুপ
সামনে বাতাসিয়া লুপ
নমো নমো
বিশ্বমাঝে উচ্চতম।’
খেলনা রেলগাড়ির ঢিমেতালে ছুটে চলাকে শব্দপ্রবাহ ও ছন্দের অনুরণনে এত মাধুর্যভাবে ছড়াতে উপস্থাপন করা গেছে যা শুনলেই পাঠক মনে গেঁথে যায়। অন্নদাশঙ্কর রায়ের ছড়াগুলোতে বিষয় বৈচিত্র্যতার প্রাধান্য লক্ষ্য করা যায়। ছোটদের ছড়াগুলো ছোট, সরল এবং স্বতঃস্ফূর্ত। লোকজ ছড়াগুলো সৌন্দর্য ও মাধুর্যতায় পরিপূর্ণ। যেমন-
‘বিষ্টি পড়ে টাপুর টাপুর
পথে এল বান
ইস্টিশনে যাব আমি
কোথায় পাব যান?
বাস চলে না, ট্রাম চলে না
ট্যাক্সি সেও জব্দ
থেকে থেকে আসছে কানে
ইঞ্জিনেরই শব্দ
এমন সময় কোথা থেকে
হাজির হল এসে
রিকশা টেনে রিকশাওয়ালা
রক্ষাকারী বেশে
রিকশা তুলে দিচ্ছ কভু
শহর থেকে সদ্য
রিকশা যদি না চড়ো তো
কি চড়বে অদ্য?’
অন্নদাশঙ্কর রায়ের ছড়াগুলোকে সত্যিকারের ছড়া তিনি ধীমান দাশগুপ্তকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ছড়া প্রসঙ্গে যথার্থই বলেছেন- ‘আমি মনে করি ছড়া যদি কৃত্রিম হয় তবে তা ছড়াই নয়, হালকা চালের পদ্য। গল্প যা উপন্যাস বানিয়ে লেখা হয় ছড়া বানাতে গেলে তাজ করার মতো শোনায় না। পদ্যের মতো শোনায়।’ তাতে বাহাদুরি থাকতে পারে কারিগরি থাকতে পারে কিন্তু তা আবহমানকাল প্রচলিত খাঁটি ভেষজ ছড়ার সাথে মিশে যায় না। মিস খাওয়ানোটাই লক্ষ্য। যদি লক্ষ্যভেদ করতে পারি তবেই ছড়া মিস খাবে নয় তো নয়।’
যানবাহন নিয়ে অন্নদাশঙ্কর রায়ের বেশ মজার কিছু ছড়া আছে। রেলগাড়ি, হেলিকপ্টার ও প্লেন এই তিনটি যানবাহনের বাস্তব চিত্র দেখতে পাই- ‘ট্রেন, প্লেন কপটার’ (হৈ রৈ বাবুই হৈ) এই ছড়াটিতে। শিশুরা খেলতে খেলতে তারা নিজেদের স্বপ্নের জগতে চলে যায়। আর ছড়া তখনই তাদের কাছে রঙিন ছবি হয়ে ধরা দেয়। যেমন-
‘রেলগাড়ি রেলগাড়ি
আই ভাই তাড়াতাড়ি
চলো ফিরে যাই বাড়ি
আধঘণ্টার পাড়ি
হেলিকপ্টার হেলিকপ্টার
ভয় করে না ঝড়ঝাপ্টার
রাস্তায় ভিড় ভাবনা কি তার
ট্রাম বাস জ্যাম, তখনই পার
এরোপ্লেন এরোপ্লেন
কোথায় লাগে ট্রেন মেল ট্রেন
হিল্লী দিল্লী কায়রো স্পেন
উড়ছেন তো উড়ছেন।’
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই ছড়াগুলোকে বলেছেন, ‘ছড়াগুলো যেন এক একটি চিত্র।’
বস্তুত লোকসংস্কৃতির বিকাশে তার ভূমিকা অপরিসীম। ছন্দ মিলের জন্য শব্দের যে অভিঘাত ঘটিয়ে তিনি যেসব ছড়া লিখেছেন তা যে কত মজার তা বলার অপেক্ষা রাখে না। যেমন-
‘এক যে ছিল অসুর
রাবণ তার শ্বশুর।’
অন্নদাশঙ্কর রায় ছড়া সম্পর্কে বলেছেন- ‘ছড়া যদি কৃত্রিম হয় তবে ছড়াই না, তা হালকা চালের পদ্য। তাতে বাহাদুরি থাকতে পারে, কারিগরি থাকতে পারে। কিন্তু‘ তা আবহমানকাল প্রচলিত খাঁটি দেশজ ছড়ার সাথে মিশ খায় না। মিশ খাওয়ানোটাই আমার লক্ষ্য। যদি লক্ষ্যভেদ করতে পারি তবেই আমার ছড়া মিশ খাবে, নয়তো নয়।’
বাংলা ভাষায় চিরায়িত ছড়ার প্রাচীন ধারাকে বর্তমান প্রেক্ষাপটের সাথে মিলিয়ে তিনি নতুন আঙ্গিকের ছড়া লিখেছেন। যেমন-
‘উলু উলু মাদারের ফুল
বর এসেছে কত দূর?
বর নয় গো বিশ্বকাপ
দিগি¦জয়ের শেষ ভাগ’
তার লেখা ব্যঙ্গমূলক ছড়াগুলোর মধ্যে ‘হচ্ছে হবের দেশ’ ছড়াটি উল্লেখযোগ্য। যেমন-
‘সব পেয়েছির দেশে না
হচ্ছে হবের দেশে
কাঁঠাল গাছে আম ধরেছে
খাবে সবাই শেষে।’
খাদ্যদ্রব্য দিয়ে তার কিছু মজার রসাত্মক ছড়া রয়েছে। ছড়াগুলো এমনই শ্রুতি মধুর যা শিশু-কিশোরদের কাছে আকর্ষণীয় ও গ্রহণযোগ্য। আসলে ছড়ার মধ্যে শিশুরা পায় নির্মল আনন্দ। আর তখনই ছড়া হয়ে উঠে বর্ণিল, উজ্জ্বল ও জীবন্ত। যেমন-
‘ও: কি আয়েস!
তালের পায়েস!
বেশ! বেশ! বেশ! দুঃখ তো এই
মুখ লাগাতেই
হয়ে যায় শেষ
একবাটি আরো
হি হি হি
হা হা হা
দাও, যত পারো।’ (পায়েস হৈ রৈ বাবুই হৈ)
আবার,
‘যার নাম মুড়ি ভাজা
তারই নাম হুড়ুম
গুড়ুম খেয়ে কি হবে
আক্কেল গুড়ুম?
তিনি শিশুদের জন্য রূপকথার ছড়াও লিখেছেন। অনন্য মেধাবী অন্নদাশঙ্কর রূপকথার গল্প কি অন্যমাত্রায় রূপ দিয়েছেন। যেমন-
‘সুয়ো রানী দিল সোনার মঞ্জিলে
দুয়ো যে রানী ছিল বনে
একদা কি করিয়া মিলন হলো দোঁহে
কী ছিল ভূপতির মনে।
ভূপতি বলে শোন, তোমরা দুই বোনে
প্রাসাদে মিলেমিশে রহ
আমিই চলে যাই যাবার আগে তাই
ভবন দান করি, লহ।
সুয়ো যে রানী বলে, না
চাহি না একসাথে থাকা
আমারে আলাহিদা মহল দিয়ে যাও
পাঁচিল গড়ে দাও পাকা।’ (দুই রানী, উড়কি ধানের মুড়কি)
শিশুমন সব সময় বিচরণ করে কল্পনা আর অজানা স্বপ্নের রূপকথার রাজ্যে। তাদের কল্পনার অজানার স্বপ্নরাজ্য নিয়ে ছড়া-
‘পক্ষীরাজের খেয়াল হল ঘাস খাবে
স্বর্গে কোথায় ঘাস পাবে।
একদিন সেই ইন্দ্ররাজের সুখের দেশ
শূন্য করে নিরুদ্দেশ।
উড়তে উড়তে নেমে এলো এইখানে
পক্ষীরাজের জায়গা হল গোহালে
থাকল সেথা গো হালে।
বার্তা গেল রটতে রটতে রাজধানী
মন্ত্রী এলেন সন্ধানী।’ (পক্ষীরাজ, ডালিম গাছে মৌ)
ইঁদুরের ক্রিয়া-কলাপ শুনে শিশু-কিশোরদের মনে কৌতুকে ভরে ওঠে ও আপ্লুত হয়। যার মধ্য দিয়ে সামান্য প্রাণী ইঁদুর ও ছড়াসাহিত্য গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠে। এটি মূলত লৌকিক ছড়ার বৈশিষ্ট্যম-িত।
‘দার্জিলিয়ের ইঁদুর ওরে
সাবান খাবার অরি
সাবান খেয়ে উদাও হল
সাধ্য নেই যে ধরি
তোমার জন্য সাবান আমি
কোথাও এত পাব
সাবান খেলে ফর্সা হবে
একি তুমি ভাবো!
দার্জিলিংয়ের ইঁদুর ওরে
বহরমপুরের দাদু
আমার ঘরে আছে রে ভাই
সাবানের চেয়ে সাধু
খবরদার খাস নে আমার
পশমের ওই শুট
তার বদলে দেব খেতে পাউরুটি বিস্কুট।’
অন্নদাশঙ্করের ছড়ার প্রাণীজগতে বিশেষ জায়গা গুরুত্ব দখল করে আছে। শালি ধানের চিঁড়ে গ্রন্থটিতে ছোটদের মন ভালো ভোরে ওঠার মতো অনেক ছড়া আছে।
‘চাঁদ বেড়ানী মাসি পিসি
চাঁদে নিয়ে যাও
এবার মাসি সাধবো নাকো
চাঁদ এনে দাও।
আয় চাঁদ আর নয়
যাই, চাঁদে যাই।
ফিরে আসবনে যেন
পথ খুঁজে পাই।’
সামান্য কীট উকুনের মাধ্যমে তিনি দেশ বিভাগকারীদের মুখোশ তুলে ধরেছিলেন।
‘উকুনের উৎপাত সয় নাকো আর
মাথাটাকে কেটে, ভাই, করো দুই ধার
আধখানা উকুনকে দাও উপহার
তা হলেই বাকিটাতে টিকির বাহার।’
আবার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পতঙ্গকে নিয়ে ছড়া লিখে তিনি শিশুদের আনন্দের ভেলায় ভাসিয়েছিলেন।
‘পিঁঁপড়েরা কেন এত ভালোবাসে
আমাকে আমাকে আমাকে!
ভালোবাসে নাকো মাসীকে মামীকে মামাকেও
মানুষটি আমি এতোই কি বলো
মিষ্টি, এত কি মিষ্টি!’
আসলে মায়েরা আমাদের গ্রাম বাংলার লৌকিক ছাড়া শুনিয়ে শিশু-কিশোরদের মন ভোলাতো আর তাদেরকে স্বপ্নের রাজ্যে নিয়ে যেতো অন্নদাশঙ্করের এমন একটি ছড়া যা এখনো সমাদৃত।
‘আরসুল সে পক্ষী
শুনছি কদিন
আরসুলাকে ধরতে পেলে
আরসুলা উড্ডীন।
বাড়ী ছেড়ে পাড়ি দিই
নেইকো চালচুলা
শূন্য ঘরে রাজি করে
সম্রাট আরসুলা।’ (আরসুলা, বিন্নি ধানের খই)
এই ছড়াটি ক্ষুদ্র প্রাণী আরশোলাকে জীবন্ত করেছে শিশু-কিশোরদের কাছে। আর ছড়াটির রস মাধুর্য ও ছন্দ শিশু-কিশোরদের মন আপ্লুত করে দেয়।
খাঁটি বাঙালি অন্নদাশঙ্কর রায় ১৯৫২ সালের মহান ভাষা আন্দোলন নিয়েও ছড়া লিখেছেন আর মহান শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছে-
‘প্রাণ দিল যারা ভাষার জন্যে
জয় কি হবে না তাদের?
জয় তো তাদের হয়েই রয়েছে
জনতা পক্ষে যাদের।’
মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি কলকাতার শিল্পী, সাহিত্যিক বুদ্ধিজীবীদের ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে। মুক্তিযুদ্ধের অন্তিমপর্বে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে রচনা করেন চিরভাস্কর কবিতা-
‘যতকাল রবে পদ্মা, মেঘনা,
গৌরী যমুনা বহমান,
ততদিন রবে কীর্তি তোমার
শেখ মুজিবুর রহমান।
দিকে দিকে আজ অশ্রু গঙ্গা
রক্তগঙ্গা বহমান
তবু নাই ভয়, হবে হবে জয়
জয় মুজিবুর রহমান।’
শিশুসাহিত্যের অনন্য ধারা ছড়া। আর এই ছড়াই শতাব্দীর অতন্ত্র প্রহরী অন্নদাশঙ্করের হাত ধরে বাংলা সাহিত্যে নতুন করে জেগে উঠেছে। তিনি বাংলায় প্রথম লিমেরিক রচনা করেন। আধুনিক বাংলা ছড়ায় যে বৈচিত্র?্য তার সূত্রপাত ঘটেছে অন্নদাশঙ্করের হাত ধরে। উনিশ শতকের বাঙালি রেনেসাঁ ঐতিহ্যের শেষ বুদ্ধিজীবী হিসেবে অন্নদাশঙ্করের নাম উচ্চারিত হয়। তিনি দেশ, সমাজ ও জীবনবোধকে এবং চেতনাকে নিয়ে শিশুদের মনোজগৎকে রাঙিয়ে দিয়েছেন। চির নমস্য এই ছড়াকার আমাদের বাংলা সাহিত্যের গৌরব ও অহংকার। ( সংকলিত)