গাজায় ইসরাইলি বোমা বর্ষণে নিহত সাত হাজার লোকের নামের তালিকা প্রকাশ করেছে ফিলিস্তিনের হামাস যোদ্ধারা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নিহতের সংখ্যা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করার পর হামাস বৃহস্পতিবার এই তালিকা প্রকাশ করে। গত ৭ অক্টোবর হামাস ইসরাইলে হামলা চালানোর কারণে ইসরাইল গাজায় প্রতিশোধমূলক যে পাল্টা অভিযান শুরু করে তাতে এই পর্যন্ত সাত হাজার ২৮ জন প্রাণ হারিয়েছেন। হামাস এই কথা জানিয়েছে। অন্যদিকে ইসরাইলে হামাসের হামলায় ১৫ শ’ লোক নিহত হয়েছে। হামাস নিয়ন্ত্রিত সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ছয় হাজার ৭৪৭ জনের তালিকা প্রকাশ করেছে। তালিকায় নিহত প্রত্যকের লিঙ্গ, বয়স এবং পরিচিতি কার্ড নম্বর তুলে ধরা হয়েছে। মন্ত্রণালয় বলেছে, তারা এখনো পর্যন্ত ২৮১ জনের পরিচয় শনাক্ত করতে পারেনি। মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র তাদের ঘোষিত সংখ্যা নিয়ে নির্লজ্জভাবে সন্দেহ প্রকাশ করেছে।
জো বাইডেন বুধবার হামাসের ঘোষিত নিহতের পরিসংখ্যান নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে বলেছেন, এতো লোক মারা যায়নি।
ইসরাইলিরাও এখন স্থল হামলার বিপক্ষে: সময় যত গড়াচ্ছে, ইসরাইলিরাও তত বেশি হারে স্থল হামলার বিপক্ষে চলে যাচ্ছে। তারা এখন গাজাভিত্তিক ফিলিস্তিনি আন্দোলন হামাসের হাতে আটক লোকদের মুক্তিকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছে। গতকাল শুক্রবার প্রকাশিত দৈনিক মারিভের সর্বশেষ জনমত জরিপে দেখা যাচ্ছে, প্রায় অর্ধেক ইসরাইলি এখন গাজা উপত্যকায় স্থল হামলা সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার পক্ষে।
ইসরাইলি এই পত্রিকাটি ৫২২ জন প্রাপ্তবয়স্ক ইসরাইলির মতামত নেয়। অবিলম্বে গাজায় ব্যাপকভিত্তিক স্থল হামলা চালানো দরকার কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ২৯ ভাগ লোক হ্যাঁ-সূচক জবাব দেয়। আর ৪৯ ভাগ জানায়, অপেক্ষা করাই ভালো হবে।’ আর ২২ ভাগ সিদ্ধান্তহীনতায় ছিল। উল্লেখ্য, এই মারিভ পত্রিকাতেই ১৯ অক্টোবরের জরিপে দেখা যায়, ৬৫ ভাগ লোক অবিলম্বে স্থল হামলা চালানো উচিত। মারিভ পত্রিকাটি শুক্রবার জানায়, ‘প্রায় নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, বন্দীর বিষয়টি এখন অ্যাজেন্ডার শীর্ষে অবস্থান করছে। জনমত জরিপে এটি বড় ধরনের প্রভাব ফেলছে।
গাজায় নিহত ৭ হাজার লোকের নামের তালিকা প্রকাশ হামাসের: গাজা উপত্যকায় অব্যাহত ইসরাইলি হামলায় প্রায় ৫০ বন্দী নিহত হয়েছে। গাজাভিত্তিক ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলনের সামরিক শাখা আল-কাসসাম ব্রিগেডের মুখপাত্র আবু ওবায়দা বৃহস্পতিবার তাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে এই তথ্য জানিয়েছেন। গত বুধবার জেরুসালেম পোস্ট খবর প্রকাশ করেছিল যে আইডিএফ জানতে পেরেছে, আবু ওবায়দার আসল নাম হলো হুদায়ফা খালত।
টেলিগ্রাম বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আল-কাসসাম ব্রিগেডেটের হিসাব অনুযায়ী, জায়নবাদীদের বোমা হামলা ও গণহত্যার ফলে গাজা উপত্যকায় জায়নবাদী বন্দীদের মধ্যে নিহতের সংখ্যা প্রায় ৫০ জনে পৌঁছেছে।’
ওই মুখপাত্র এ ব্যাপারে বিস্তারিত কোনো তথ্য দেয়নি। জেরুসালেম পোস্টও সংখ্যাটি যাচাই করতে পারেনি বলে জানিয়েছে। অধিকন্তু, চলতি মাসে আগেই হামাস একই ধরনের দাবি করেছিল। ৭ অক্টোবর ইসরাইলের অভ্যন্তরে হামাসের ভয়াবহ হামলার এক সপ্তাহ পর সংস্থাটি দাবি করে, ইসরাইলি বিমান হামলায় ৯ বন্দী নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে চারজন বিদেশী নাগরিক। উল্লেখ্য, হামাস ওই অভিযানে অন্তত ২২২ জনকে বন্দী করেছিল। দুই পর্যায়ে মোট চারজনকে তারা মুক্তি দিয়েছে। কাতার ও মিসরের মধ্যস্ততায় মুক্তিপ্রাপ্তদের দুজন আমেরিকান এবং দুজন ইসরাইলি নাগরিক। হামাস বলে আসছে, গাজায় যুদ্ধবিরতি না দিলে তারা বন্দীদের মুক্তি দেবে না।
নেতানিয়াহুকে বরখাস্ত করুন: ইসরাইলের এক সাবেক সেনাপ্রধান বলেছেন, তিনি যুদ্ধের সময় প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে বরখাস্ত করে অন্য একজনকে ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করার ধারণাটি সমর্থন করেন। সাবেক সেনাপ্রধান ড্যান হালুটজ আর্মি রেডিওকে বলেন, তিনি ‘যুদ্ধে নেতৃত্ব দিতে’ অন্য কাউকে সমর্থন করেন। তিনি বলেন, ‘যুদ্ধে আমরা জবাবদিহিতা দাবি করতে পারি।’ গত বছর থেকে বর্তমান পরিস্থিতি পর্যন্ত ইসরাইলের অবস্থা নিয়ে নেতানিয়াহুর দায়দায়িত্ব নিয়ে তিনি প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, ইসরাইলি কারাগারগুলোতে আটক ফিলিস্তিনি বন্দীদের বিনিময়ে গাজায় আটক ইসরাইলি বন্দীদের বিনিময়ের ধারণাকেও তিনি সমর্থন করেন। তিনি বলেন, বন্দী বিনিময়ের মাধ্যমে মুক্তি দেয়া ফিলিস্তিনিদের পরে আটক করা যাবে। তিনি বলেন, ‘[ইসরাইলি সৈন্য] গিলাদ শাতিলের বিনিময়ে ১,০২৭ জনকে মুক্তি দেয়া হয়েছিল। ওই হিসাবে ২২০ জন অপহৃতের বিনিময়ে দুই লাখ লোককে মুক্তি দেয়া যেতে পারে।’ ড্যান হালুটজ ২০০৬ সালে দ্বিতীয় লেবানন যুদ্ধে ইসরাইলের সেনাপ্রধান ছিলেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘আমি বিষয়টি খুবই গুরুত্ব দিয়ে বলছি। আমাদের অবশ্যই তাদেরকে সেখানে পাঠিয়ে দিয়ে পরে তাদের নিয়ে আসব।’ তিনি ইসরাইলি বন্দিদের মুক্তির আগে স্থল হামলা চালানোর বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। তিনি বলেন, এই মুহূর্তে স্থল হামলার অর্থ কী, যখন ইসরাইলি অপহৃতরা সেখানে আছে? হামাস যদি একে মনোস্তাত্ত্বিক যুদ্ধে ব্যবহার করে, তবে ঈশ্বর না করুন, তাদের অনেকে আহত হবে এবং তাদের অনেকে আর ফিরবে না।’ উল্লেখ্য, হামাসের হাতে বন্দীদের পরিবারগুলো প্রায় প্রতিদিনই তাদের স্বজনদের মুক্তির জন্য ইসরাইল সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে আসছে।
সিরিয়ায় ইরানি অবস্থানে মার্কিন হামলা: সিরিয়ায় ইরানের রিভুলুশনারি গার্ড বাহিনীর ব্যবহৃত স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে ইসরালি। মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানিয়েছেন।
চলতি সপ্তাহে সিরিয়ায় মার্কিন কর্মকর্তাদের ওপর হামলার জবাবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের নির্দেশে এই আক্রমণ পরিচালনা করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। ওই হামলার সময় এক মার্কিন ঠিকাদার আশ্রয় গ্রহণ করার সময় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান এবং ২১ মার্কিন কর্মকর্তা সামান্য আহত হয়েছিলেন। আহতরা ইতোমধ্যেই তাদের কাজে ফিরে গেছেন। বিবৃতিতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র সঙ্ঘাত চায় না এবং বৈরিতা আর বাড়ানোর কোনো ইচ্ছা পোষণ করে না। তবে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ইরান-সমর্থিত বাহিনীর হামলা অগ্রহণযোগ্য এবং তা রুখতেই হবে। তিনি বলেন, এই হামলা ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে চলমান সঙ্ঘাতের সাথে সম্পর্কহীন। ইসরাইল-হামাস সঙ্ঘাতের ব্যাপারে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির কোনো পরিবর্তনও নয় এই হামলা। সূত্র : আল জাজিরা, টাইমস অব ইসরাইল, জেরুসালেম পোস্ট এবং অন্যান্য