আগের মতো সুদিন নেই রাজশাহী চিনিকলের। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে চিনিকলটি। লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে চলা চিনিকলটির এখন মরার ওপরে খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে আখ পরিবহনে ব্যবহৃত ট্রাক্টর ও ট্রলি। বছরে মাত্র ১৫-২০ দিনের ব্যবহারের পর এসব পরিবহন পড়ে থাকে খোলা আকাশের নিচে। ফলে পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে এসব পরিবহন। মেরামতে প্রতিবছর ব্যয় হচ্ছে মোটা অংকের টাকা। কর্তৃপক্ষ বলছে, এসব পরিবহন রাখাতে যে ধরনের শেড দরকার সেটি তৈরির সক্ষমতা তাদের নেই।
রাজশাহী চিনিকল সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী চিনিকলের আখ পরিবহনের জন্য ৬০০ ট্রলি ও ২০টি ট্রাক্টর আছে। ২০২২-২০২৩ মাড়াই মৌসুমে রাজশাহী সুগার মিল ৩৫ দিন চালু রাখার কথা থাকলেও ২১ দিনেই শেষ হয়েছে আখ মাড়াই কার্যক্রম। চলতি ২০২২-২৩ মৌসুমে ২৬ হাজার ৪৫ মেট্রিক টন আখ মাড়াই থেকে চিনি উৎপাদন হয়েছে মাত্র এক হাজার ৩৫৬ মেট্রিক টন। এ ক্ষেত্রে উৎপাদন খরচ ৮৩ কোটি ১ লাখ ২৯ হাজার টাকা। ফলে মাত্র ২১ দিনই ব্যবহার হয়েছে এসব পরিবহন। ব্যবহারের পর এসব পরিবহন আবার রাখা হয়েছে খোলা আকাশের নিচে।
সম্প্রতি রাজশাহীর হরিয়ান এলাকায় অবস্থিত চিনিকল ঘুরে দেখা গেছে, আখ পরিবহনের জন্য যেসব ট্রলি ও ট্রক্টর আছে সেগুলো খোলা আকাশের নিচে পড়ে আছে। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে অকেজো হয়ে গেছে অন্তত অর্ধেক পরিবহন। ট্রলিগুলোতে মরিচা ধরেছে। কোনোটির চাকা ফুটো হয়ে গেছে। কোনোটির আবার চাকা খুলে পড়েছে। দীর্ঘদিন পড়ে থাকলে এসব মূল্যবান যানবাহন ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মিলের একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রতিবছরই গড়ে প্রায় ১০ লাখ টাকার মতো খরচ হচ্ছে এসব গাড়ির পেছনে। দীর্ঘদিন খোলা আকাশের নিচে পড়ে থাকায় চাকা, বিয়ারিং নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে রাজশাহী সুগার মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল বাশার বলেন, আমাদের আখ পরিবহনের জন্য যত গাড়ি আছে সেই তুলনায় রাখার জায়গা নেই। এগুলো রাখতে হলে শেড বানাতে হবে। এতে ব্যয় হবে অন্তত দেড়কোটি টাকা। কিন্তু সে সক্ষমতা আমাদের নেই। তাই বাধ্য হয়েই এগুলো খোলা আকাশের নিচে রাখতে হচ্ছে।
সুজন রাজশাহী জেলার সমন্বয়ক মিজানুর রহমান বলেন, চিনিকলগুলো আমাদের জন্য কম মূল্যে চিনিও দিতে পারছে না। আবার তারা এভাবে অর্থের অপচয় করছে। এগুলোর বিষয়ে আমাদের সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে।