দেশের ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের (আইএসপি) লাইসেন্স এবং আন–লাইসেন্স ব্যান্ডে রেডিও তরঙ্গ ব্যবহারের অনুমোদন নেই। ব্যবহার করতে হলে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা (বিটিআরসি) থেকে অনুমোদন নিয়ে ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু এমন ১৭টি আইএসপি প্রতিষ্ঠানের খোঁজ পাওয়া গেছেÍ যারা ৫ গিগাহার্টজ ব্যান্ডের হলেও রাষ্ট্রের ৭৮৫ মেগাহার্টজ তরঙ্গ ব্যবহার করছে কোনও ধরনের অনুমোদন ছাড়াই।
জানা গেছে, নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গে এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছে বিটিআরসি। একটি কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। সেই কমিটি এ বিষয়টির সুষ্ঠু সমাধান বের করবে বলে মনে করে বিটিআরসি। তবে বিটিআরসি আইএসপিগুলোকে যাচাই-বাছাই ও পর্যালোচনা করে দেখতে পেয়েছে যে, আইএসপিগুলো না জেনে অননুমোদিত বেতার তরঙ্গ ও বেতার যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে আসছে।
জানা যায়, প্রচলিত বিধিবিধান অনুযায়ী, বিটিআরসি থেকে আইএসপিগুলো পূর্বানুমোদন নিয়ে বেতার তরঙ্গ (স্পেক্ট্রাম) ব্যবহার করে গ্রাহকদের সেবা দিয়ে আসছে। তবে মাঠ পর্যায়ে তরঙ্গ মনিটরিং কার্যক্রম পরিচালনার সময় বেশ কয়েকটি অননুমোদিত রেডিও লিংক ব্যবহারের তথ্য পায় বিটিআরসি। এ কারণে রেডিও লিংকের পূর্ণাঙ্গ তথ্য সংগ্রহের জন্য বিটিআরসি কাজ শুরু করে এবং ১৭০টি আইএসপির তথ্য সংগ্রহ করতে সরেজমিন পরিদর্শনে যান কমিশনের সদস্যরা। গত ২৩ জুলাই থেকে ২৪ আগস্ট পর্যন্ত ১৭টি আইএসপি সরেজমিনে পরিদর্শন করে তথ্য সংগ্রহ করে বিটিআরসি দেখতে পায় কোনও ধরনের অনুমোদন না নিয়েই বেতার তরঙ্গ ও বেতার যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে আসছে তারা। যেসব প্রতিষ্ঠানের তথ্য বিটিআরসি সংগ্রহ করেছে, তার মধ্যে একটিরও লাইসেন্স এবং আন-লাইসেন্স ব্যান্ডে রেডিও তরঙ্গ ব্যবহারের অনুমোদন নেই। পাঁচ গিগাহার্টজ ব্যান্ডে অনুমোদন ছাড়া ব্যান্ডউইথ ব্যবহারের পাশাপাশি আন-লাইসেন্স ব্যান্ডে রেডিও লিংক ব্যবহার করছে আইএসপিগুলো।
অভিযুক্ত আইএসপিগুলো হলোÍ বিজয় অনলাইন লিমিটেড ৪০ মেগাহার্টজ, র্যাংকস আইটি লিমিটেড ২০ মেগাহার্টজ, অগ্নি সিস্টেমস লিমিটেড ৮০ মেগাহার্টজ, বাংলাদেশ এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট লিমিটেড ৪০ মেগাহার্টজ, মেট্রোনেট বাংলাদেশ লিমিটেড ২০ মেগাহার্টজ, টেলনেট কমিউনিকেশন লিমিটেড ৮০ মেগাহার্টজ, সার্কেল নেটওয়ার্ক ৪০ মেগাহার্টজ, সিস্টেম সলিউশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট টেকনোলজিস লিমিটেড ৬০ মেগাহার্টজ, ডিট নেটওয়ার্ক ৫ মেগাহার্টজ, পরী হক সাইবার ৮০ মেগাহার্টজ, এইচএন টেলিকম লিমিটেড ৮০ মেগাহার্টজ, আদিয়ান টেলিকম ২০ মেগাহার্টজ, ইথার টেকনোলজি নেটওয়ার্ক ২০ মেগাহার্টজ, চিটাগাং অনলাইন লিমিটেড ৮০ মেগাহার্টজ, সরাইল নেট ২০ মেগাহার্টজ ও রাইট নেট ২০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডইউথ ব্যবহার করছে। ব্যবহৃত মোট ব্যান্ডউইথের পরিমাণ ৭৮৫ মেগাহার্টজ।
জানা যায়, বিটিআরসির মনিটরিং এবং দ্রুত উদ্যোগ গ্রহণের ফলে দেশের ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আইএসপিএবি চিঠি দিয়েছে বিটিআরসিকে। সংগঠনটি চিঠিতে উল্লেখ করেছে, ‘রেডিও তরঙ্গ ব্যবহারের বিষয়ে পূর্বানুমোদন গ্রহণের বিষয়টি বেশিরভাগ আইএসপি অবগত ছিল না। কমিশনের অনুমোদন ছাড়া রেডিও লিংক ব্যবহারের মাধ্যমে সেবা প্রদান করার বিষয়টি অনিচ্ছাকৃত। এ কারণে সংগঠনটি আনুষ্ঠানিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছে।’
জানা গেছে, এ বিষয়ে গঠিত কমিটি এরইমধ্যে কাজ শুরু করেছে। এই কমিটি রেডিও তরঙ্গ ও সংশ্লিষ্ট বেতার যন্ত্রপাতি ব্যবহারের বিষয়ে আইএসপিএবি’র অনুকূলে কমিশন থেকে একটি পূর্ণাঙ্গ নির্দেশনা জারির লক্ষ্যে খসড়া প্রণয়নসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কাজ করবে।
অনুমোদন ছাড়া রেডিও তরঙ্গ ও রেডিও লিংক ব্যবহারের বিষয়ে জানতে চাইলে আইএসপিএবি’র সভাপতি এমদাদুল হক বলেন, ‘এটা আমাদের জানা ছিল না যে, এই ফ্রি ফ্রিকোয়েন্সি অনুমোদন নিয়ে ব্যবহার করতে হয়। আইএসপি ব্যবসায়ীরা সচেতন না থাকায় এমনটা হয়েছে। তবে বিষয়টি ২০-২৫ বছর ধরে চলে আসছে। পুরনো আইএসপিগুলোর মধ্যে কোনও কোনোটা অনুমোদন নিলেও নিতে পারে, তবে বেশিরভাগেরই কোনও অনুমোদন নেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘শুনেছি, বিটিআরসি নতুন নিয়ম করতে যাচ্ছে। এটা কার্যকর হলে আমরা অনুমোদন নিয়েই রেডিও তরঙ্গ ব্যবহার করবো। আমাদের রেডিও’র অনুমোদন দিতে হবে। কারণ, এখনও অনেক জায়গায় ক্যাবল দিয়ে ইন্টারনেট পৌঁছানো কঠিন। ফলে সেসব জায়গায় রেডিও লিংক ব্যবহার করে ইন্টারনেট পৌঁছাতে হয়। অনেক প্রতিষ্ঠান ক্যাবল এবং রেডিও লিংক দুটোই ব্যবহার করতে চায় নিরবছ্ন্নি সেবা পাওয়ার জন্য।’