# পরিশোধিত চিনির চাহিদা ১৮-২০ লাখ টন
# পরিশোধিত ও অপরিশোধিত চিনির শুল্ক অর্ধেক করেছে সরকার
# মিলার ও দ্বিতীয় পক্ষের সিন্ডিকেট কারসাজিতে উল্টো বাড়ছে দাম
ডিম, আলু, সবজিসহ অধিকাংশ খাদ্যপণ্যের ঊর্ধ্বমুখী দামে অস্থির বাজার। নাভিশ্বাস ক্রেতাদের। বাজার নিয়ন্ত্রণে নানানভাবে চেষ্টা করছে সরকার। আলু আমদানির সিদ্ধান্তের পাশাপাশি চিনিতে শুল্ক কমানো হয়েছে ৫০ শতাংশ। দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে দাম কমা দূরে থাক, উল্টো বেড়েছে। চারদিনের ব্যবধানে প্রতি মণ চিনিতে দাম বেড়েছে ২০০ টাকার বেশি। জানা যায়, দেশে বছরে কমবেশি ১৮ থেকে ২০ লাখ টন পরিশোধিত চিনির চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে রাষ্ট্রীয় চিনিকলগুলো থেকে আসে ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টনের মতো। গত বছর থেকে তা ২৫ হাজার টনে ঠেকেছে। অবশিষ্ট চিনি আমদানি করে চাহিদা মেটানো হয়। দেশের চাহিদা মেটাতে প্রতি বছর আমদানি করতে হয় প্রায় ৯৬ শতাংশের বেশি চিনি। ব্যক্তিখাতের পাঁচ শিল্পগ্রুপ সিটি, মেঘনা, এস আলম, আবদুল মোনেম লিমিটেড ও দেশবন্ধু সুগার মিল অপরিশোধিত চিনি আমদানি করে। পরে নিজেদের মিলে পরিশোধন করে বাজারজাত করে। সিটি ও মেঘনা গ্রুপ জায়ান্ট আমদানিকারক। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে চট্টগ্রামের আলোচিত শিল্পগ্রুপ এস আলম। জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ভোক্তাদের স্বস্তি ফেরাতে চিনিতে আমদানি শুল্ক কমানোর সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। গত ১ নভেম্বর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, অপরিশোধিত চিনি আমদানির ক্ষেত্রে বর্তমানে টনপ্রতি আমদানি শুল্ক দিতে হবে দেড় হাজার টাকা। আর পরিশোধিত চিনির ক্ষেত্রে টনপ্রতি আমদানি শুল্ক দিতে হবে তিন হাজার টাকা। আগে অপরিশোধিত চিনি আমদানির ক্ষেত্রে টনপ্রতি আমদানি শুল্ক দিতে হতো তিন হাজার টাকা। আর পরিশোধিত চিনির ক্ষেত্রে টনপ্রতি আমদানি শুল্ক ছিল ছয় হাজার টাকা। অর্থাৎ, উভয় ধরনের চিনির আমদানি শুল্ক কমিয়ে অর্ধেক করা হয়েছে।
সরকার চিনি আমদানিতে শুল্ক কমানোর ঘোষণা দিলেও বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়েনি। উল্টো আরও দাম বেড়েছে। দেশে ভোগ্যপণ্যের দ্বিতীয় বৃহৎ পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জ এবং নগরীর বেশ কয়েকটি মুদি দোকান পরিদর্শন করে চিনি নিয়ে অস্থিরতার তথ্য মিলেছে। অভিযোগ উঠেছে, সরকার শুল্ককর কমালেও মিলাররা চাহিদামাফিক সরবরাহ না দেওয়ায় বাজারে চিনির দাম কমছে না। ডিও ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে বলছেন, মিলার ও ডিও বিক্রেতারা কারসাজির মাধ্যমে চিনির বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন।
খাতুনগঞ্জের ডিও ব্যবসায়ী শাহজাহান বাহাদুর জাগো নিউজকে বলেন, ‘বাজারে চিনির বিক্রি কম। তারপরেও দাম বাড়ছে। কারণ মিলার ও প্রথম হাতবদলকারী ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কাছে চিনির বাজার বন্দি। খাতুনগঞ্জের যারা ডিও বিক্রি করেন তাদের সঙ্গে মিলারদের যোগসাজশ রয়েছে। সরকার বুধবার প্রতি কেজিতে দেড় টাকা শুল্ক কমিয়েছে। সে অনুযায়ী প্রতি মণে ৬০ টাকার মতো কমার কথা। কিন্তু বৃহস্পতিবার উল্টো আগের দিনের চেয়ে ৫০-৬০ টাকা বেড়েছে। শনিবার এসে সেটা প্রতি মণে ২০০ টাকার মতো বেড়েছে। বুধবার যেটি ৪৬৫০-৬০ টাকা ছিল, শনিবার সেটি ৪৮৫০ টাকা হয়েছে। তবে এস আলমের চিনির দাম তেমন বাড়েনি।’
খাতুনগঞ্জের আড়তদার ব্যবসায়ী মেসার্স ইমাম শরীফ ব্রাদার্সের পরিচালক ছৈয়দুল হক শনিবার দুপুরে জাগো নিউজকে বলেন, ‘চট্টগ্রামে এস আলমের চিনি ৪৭০০-৪৭৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ঢাকার সিটি ও মেঘনার ফ্রেশ চিনির দাম বাড়তি। এগুলো ৪৮শ টাকার ওপরে। এগুলো নিতে সিরিয়ালও ধরতে হচ্ছে।’খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী আর এম এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আলমগীর পারভেজ জাগো নিউজকে বলেন, ‘সরকার শুল্ক কমালেও এর প্রভাব পাইকারি বাজারে পড়েনি। উল্টো বুধবার থেকে বেড়েছে। তবে বিক্রি কম। সিটি, মেঘনায় (কারখানায়) সিরিয়াল রয়েছে। তাদের চিনিতে প্রতি মণে বেড়েছে ৪০-৫০ টাকা।’ তিনি বলেন, ‘মিলারদের ১০ শতাংশ শুল্ক কমানোর দাবি ছিল। কিন্তু সরকার এক দশমিক পাঁচ শতাংশ কমিয়েছে। মূলত শুল্ক কমালেও মিলাররা চিনি সরবরাহ দিচ্ছেন না। সরবরাহ না দিলে বাজারে দাম কমার তো কোনো সম্ভাবনা নেই। এতে সরকার শুল্ক কমালেও গ্রাহক পর্যায়ে এর সুফল মিলবে না।’ এদিকে ডিও ক্রেতারা অভিযোগ করে বলছেন, খাতুনগঞ্জে চিনির বাজার নানান সিন্ডিকেটের কাছে বন্দি। এস আলমের চিনি কিনলেও তাদের নির্ধারিত ট্রান্সপোর্টের মাধ্যমে চিনি পরিবহন ও সরবরাহ নিতে হয়। নির্ধারিত ওই ট্রান্সপোর্টের লোকদের খুশি রাখা না গেলে আগে কিনেও এস আলম ফ্যাক্টরি থেকে চিনি সরবরাহ পাওয়া যায় না। এ বিষয়ে ভুক্তভোগীরা মুখ খুলতে নারাজ। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ওই ট্রান্সপোর্টের বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ করছেন জানলেও পরবর্তীসময়ে তাদের (ডিও ক্রেতা) আর চিনি দেওয়া হবে না। এদিকে পাইকারি বাজারের মতো খুচরা পর্যায়েও চিনির দাম নিয়ন্ত্রণহীন। কাজীর দেউড়ি ১ নম্বর গলির মুদি দোকানি দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা ১৩২ টাকা কেজিতে চিনি কিনে এনেছি। এখানে খুচরা ভোক্তাদের কাছে ১৩৫ টাকা কেজিতে বিক্রি করছি। সরকার শুল্ক কমানোর কথা বলেছেন, কিন্তু বাজারে উল্টো দাম বেড়েছে।’ নগরীর ব্যাটারি গলি এলাকার মুদি ব্যবসায়ী মেসার্স আকবর স্টোরের ম্যানেজার বাসুদেব দাশ জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা শনিবার ৪ হাজার ৭৪০ টাকা করে এস আলম চিনির মণ কিনে এনেছি। চিনির মিল থেকে আমাদের দোকানে আসা পর্যন্ত পরিবহন ভাড়াসহ ৫০ কেজির বস্তায় ৬ হাজার ৪৪১ টাকা পরতা পড়েছে। এতে প্রতি কেজির মূল্য ১২৮ টাকা ৮৩ পয়সা পড়ছে। আমরা ১৩২ টাকা কেজিতে বিক্রি করছি।