অন্যকোনো রাজনৈতিক দলে যোগ দিচ্ছেন না সাফ জানিয়ে দিয়েছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর অবসরপ্রাপ্ত হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম বলেছেন, ৩১ বছরের রাজনীতিতে বিএনপির হয়েই রাজনীতি থেকে বিদায় নিতে চাই। গতকাল বুধবার বেলা ১১টায় বনানীর নিজ বাসভবনে আগামী জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও নিজের অবস্থান তুলে ধরতে সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি। তথ্যমন্ত্রীর হাসান মাহমুদের বক্তব্যের প্রসঙ্গ তুলে ধরে হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, বিএনপির গুরুত্বহীন ব্যক্তি হিসেবে নিজেকে দাবি করি। শারীরিক অসুস্থতার জন্য রাজনীতিতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছি। রাজনীতি থেকে দুরে অবস্থান করছি। তথ্যমন্ত্রীর বক্তব্য সঠিক নয়। কোনো রাজনৈতিক কর্মকা-ে এখন জড়িত নই। শারীরিক কারণে শিগগিরই রাজনীতি থেকে অবসর নিব। ৩১ বছরের রাজনীতি করে এই দল থেকেই বিদায় নিতে চাই। পুলিশের স্কট নিয়ে আট বছর পর এলাকায় যেতে পেরেছেন বলেও জানান বিএনপির এই নেতা।
তিনি বলেন, ২৩ বছর আমি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান। ড. মোশাররফ ও রফিকুল ইসলাম মিয়া ছাড়া সবাই আমার জুনিয়র। কিন্তু আমি ছাড়া সবাই উপরে উঠে গেছে। আমি পদবীর জন্য রাজনীতি করি না। জিয়াউর রহমানের সাথে রাজনীতি করেছি। তার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে দলে যোগদান করেছি। বেগম জিয়ার অনুপুস্থিতিতে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। জুনিয়র নেতারা সিনিয়র পদপদবী পেলেও কোনো অভিযোগ নেই। শারীরিক অসুস্থতার কারণে নিস্ক্রিয় আছি। রাজনীতে এখন কোনো আগ্রহ নেই।
মেজর হাফিজ বলেন, ‘২০২০ সালের ১৪ ডিসেম্বরে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয় আজগুবি ১১টি অভিযোগে। সরকার বিরোধী কর্মসূচিতে অংশ না নিলেও অভিযুক্ত করা হয়েছে। তিন বছর পার হলেও নোটিশের উত্তরে কোনো পাল্টা জবাব দল থেকে পাইনি। ৩১ বছর রাজনীতি করে এমন প্রাপ্তি পীড়াদায়ক।’ দলের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘অনেক ভুল আমরা করেছি। দলীয় বলার সুযোগ নাই। আট বছর কোনো কাউন্সিল হচ্ছে না। জাতির স্বার্থে কিছু কথা বলতে হয়। দলের সব নেতার প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই কথা বলা। বিএনপিতে একটি সত্যি কথা বলা লোক চোখে পরেনি সাইফুর রহমান ছাড়া। সবাই ইয়েস স্যার, রাইট স্যার বলা লোক।’ তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনে শারীরিক কারণে অংশ নেয়া সম্ভব নয়। জনগণের সাথে কথা বলে রাজনীতি থেকে বিদায় নেয়ার চেষ্টা করব।
মেজর হাফিজ বলেন, বিএনপির নির্বাচনে যাওয়া উচিৎ। কেয়ারটেকারের কথা না ভেবে বিকল্প ভাবা উচিৎ। জাতিসঙ্ঘের মধ্যস্ততায় বিএনপির নির্বাচনে যাওযা উচিৎ। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপি ক্ষমতায় যাবে। সুষ্ঠু নির্বাচন আদায়ের সক্ষমতা লাগে তা নেই বিএনপির। বিএনপির আন্তর্জাতিক যোগাযোগ দুর্বল।
সরকারে সমালোচনা করে তিনি বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না। জনগণ সুযোগ পেলে সঠিক বিচার করে। ক্ষমতাসীনরা মনে করে উন্নয়ন কাজে ভোট পাবে। আসলে মানুষ বিচার করে নিত্যপণ্যের দাম, মতপ্রকাশের স্বাধীনতায়। শুধু উন্নয়ন কাজে ভোট হয় না। প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, অনুগ্রহ করে সামাজিক সম্প্রীতির দিকে লক্ষ্য রেখে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করুন। কারণ নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবে না। পাশের দেশ ভারত দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়ন করেছে। শক্ত ভিত্তির ওপর তাদের গণতন্ত্র। তাদের অনুসরণ করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। বিএনপির ও অন্যান্য দলের সাথে বসে সুষ্ঠু ভোটের ব্যবস্থার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহবান জানান জানিয়ে তিনি বলেন, দেশের অবস্থা খারাপ হলে প্রধান দু’টি রাজনৈতিক দল দায়ী থাকবে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রতি আহ্বান জানিয়ে হাফিজ বলেন, দলের সংস্কার করতে হবে। ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করতে হবে। কেন দলের মধ্যে এক নায়কত্ব হচ্ছে, কেন পদ বাণিজ্য হচ্ছে প্রশ্ন রাখেন এই নেতা। হাজার হাজার কোটি টাকা পাচারকারী আমলাদের পাচার করা টাকা ফেরত আনার উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির এই ভাইস চেয়ারম্যান।