একনেক বৈঠকে ৩৯ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকায় ৪৪ প্রকল্প অনুমোদন
ভর্তুকি থেকে ধীরে ধীরে বের হয়ে এলাকা ও আয়ের ওপর ভিত্তি করে বিদ্যুৎ ও পানির দাম নির্ধারণ করতে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) রাজধানীর শেরেবাংলা নগর এনইসি সভাকক্ষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় তিনি এ নির্দেশনা দেন। প্রধানমন্ত্রী একনেক সভায় সভাপতিত্ব করেন। সভাশেষে প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসনের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘ধীরে ধীরে ভর্তুকি থেকে বের হওয়ার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। আমি মন্ত্রী, আমি পানি বিদ্যুতে যে ভর্তুকি পাই- একই ভর্তুকি যদি একজন দিনমজুর পান তাহলে এটা ঠিক হলো না। তাই প্রধানমন্ত্রী এরিয়া ও ইনকাম ওয়াইজ (এলাকা ও আয়ের ওপর নির্ভর করে) পানি-বিদ্যুতের দাম নির্ধারণের কথা বলেন।’
‘প্রধানমন্ত্রী বলেন ভর্তুকি যেন বিচারসম্মত হয়। আমি যে রেট দিচ্ছি, একজন নি¤œ শ্রেণির (নি¤œ আয়ের) মানুষও একই ভর্তুকি দিচ্ছে- এটা হয় না। ধীরে ধীরে ভর্তুকির ধারণা থেকে বের হতে হবে। এলাকাভিত্তিক পানি ও বিদ্যুতের দাম নির্ধারণ করতে হবে।’ এম এ মান্নান বলেন, ‘ঢাকায় উঁচু ভবন নির্মাণে সতর্ক হতে হবে, যাতে এয়ার ফানেলে না পড়ি। রাস্তার পাশে জলাধার খননের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।’ সভায় দেশব্যাপী সর্বজনীন পেনশন আরও জোরালো প্রচারের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।
৩৯ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকায় ৪৪ প্রকল্প অনুমোদন: ৩৯ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪৪টি প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। গতকাল বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সভাকক্ষে একনেক সভায় এসব প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একনেক সভায় সভাপতিত্ব করেন। সভা শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
তিনি জানান, প্রকল্পগুলোর মোট ব্যয়ে সরকারি অর্থায়ন ৩০ হাজার ১২৩ কোটি টাকা এবং বাকি অর্থ বৈদেশিক ঋণ। গতকাল বৃহস্পতিবার একনেক সভায় যেসব প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ঢাকাস্থ শেরেবাংলা নগর এলাকায় পার্ক নির্মাণ, শেরেবাংলা নগর প্রশাসনিক এলাকায় বহুতল সরকারি অফিস ভবন নির্মাণ, তেজগাঁও শিল্পা ল এলাকায় সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য ১২৩টি ফ্ল্যাট নির্মাণ, চট্টগ্রাম শহরে জলাবদ্ধতা নিরসনে খাল পুনরুদ্ধার সম্প্রসারণ সংস্কার ও উন্নয়ন।
এছাড়াও অনুমোদন পাওয়া প্রকল্পগুলোর মধ্যে আরও রয়েছে- সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর অর্থনৈতিক অ লের সঙ্গে লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী ও ফেনী জেলার সংযোগকারী সড়ক যথাযথ মানে উন্নীতকরণ; ইলিয়টগঞ্জ-মুরাদনগর-রামচন্দ্রপুর-বাঞ্ছারামপুর জেলা মহাসড়কটি যথাযথ প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ; ভাঙ্গা-যশোর-বেনাপোল মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীতকরণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ।
একই সঙ্গে গাবতলী সিটিতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের জন্য বহুতল বিশিষ্ট আবাসিক ভবন নির্মাণ; বর্ধিত ঢাকা পানি সরবরাহ ও রেজিলিয়েন্স প্রকল্প; ঢাকা পানি সরবরাহ উন্নয়ন, ঢাকা স্যানিটেশন উন্নয়ন, বরিশাল সিটি করপোরেশন এলাকায় বিভিন্ন রাস্তা উন্নয়ন, জলাবদ্ধতা নিরসন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন।
এছাড়া মুগদা মেডিকেল কলেজের প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ, মহেশখালী অর্থনৈতিক অঞ্চল-৩-এর গ্যাস বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ উন্নয়ন, যশোর রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা, সারাদেশে শহর ও ইউনিয়ন ভূমি অফিস নির্মাণ দ্বিতীয় পর্ব, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক মৌলভীবাজার প্রথম পর্যায়ের প্রকল্প এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম পল্লি অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প ইত্যাদি।