বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৪৭ পূর্বাহ্ন

আঞ্জুয়ারাকে হারিয়ে সন্তান-স্বজনদের আহাজারি

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শনিবার, ১১ নভেম্বর, ২০২৩

গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে আন্দোলনরত পোশাকশ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে নিহত আঞ্জুয়ারা খাতুনের (৩০) দাফন সম্পন্ন হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) রাত ৩টার সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার চরগিরিশ ইউনিয়নের চরগিরিশ গ্রামে শ্বশুর বাড়ির আঙিনায় তাকে দাফন করা হয়েছে।
আঞ্জুয়ারা কাজীপুর উপজেলার চরগিরিশ ইউনিয়নের চর নাটিপাড়া গ্রামের পিতা মৃত মন্টু মিয়ার মেয়ে। তিনি কোনাবাড়ীর ইসলাম গার্মেন্টসে সেলাই মেশিন অপারেটর হিসেবে কাজ করতেন।
আঞ্জুয়ারার এমন মৃত্যুতে সন্তান ও স্বজনদের আহাজারি কিছুতেই থামছে না। খবর পেয়ে রাতেই প্রতিবেশীরা আঞ্জুয়ারাকে শেষবারের মতো একনজর দেখতে ছুটে আসেন।
নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, আঞ্জুয়ারা চার ভাই-বোনের মধ্যে দ্বিতীয় ছিলেন। ২০১৪ সালে একই ইউনিয়নের সালাল গ্রামের জামাল মিয়ার সঙ্গে তার বিয়ে হয়। তাদের ঘরে আরিফ নামের ৭ বছরের একটি ছেলে ও জয়া নামের ৬ বছর বয়সী একটি মেয়ে রয়েছে। তারা দুজনই স্থানীয় চরগিরিশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে।

আঞ্জুয়ারার মা মাজেদা খাতুন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, কাজের জন্য আঞ্জুয়ারা গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে থাকত। দুই শিশু সন্তান আমার কাছে থেকে স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করত। সম্প্রতি পূজার ছুটিতে দুই সন্তান কোনাবাড়ীতে গিয়েছিল। ছুটি শেষে আবার বাড়িতে চলে এসেছে। ঠিক এমন সময়ে ঘটে গেল এই ঘটনা। আঞ্জুয়ারার শাশুড়ি নূরজাহান বেগম বলেন, আমার ছেলের বউ প্রতিদিনই মোবাইলে কথা বলত। বাড়ির সবার খোঁজখবর নিত। মঙ্গলবার রাতে মোবাইল করে জানায় মা, আমি শুক্রবারে বাড়ি আসব। বাড়িতে ঠিকই আসলো কিন্তু লাশ হয়ে।
তিনি আরও বলেন, দুইটা মাসুম বাচ্চা এতিম হয়ে গেল। কিছু সময় পর পর শুধু মা-মা বলে ডাকে। আমরা কীভাবে তাদের মায়ের দুঃখ দুর করব। মাসুম বাচ্চাদের কান্নাকাটি কিছুতেই থামাতে পারছি না।
আঞ্জুয়ারার শ্বশুর শাহ-আলম বলেন, আমার বউমা ফোন দিয়েই বলত, আব্বা এই বয়সে বেশি কাজ কাম করবেন না। শরীর খারাপ হবে। আপনেরা ভালো থাকলেই আমরা ভালো থাকব। এই কথা আর কোনোদিন কেউ কইবো না।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আল-আমিন বলেন, অকালে মাকে হারিয়ে ফুটফুটে দুটি সন্তানের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে গেল। তাই, সমাজের সচেতন মানুষদের তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে।
আঞ্জুয়ারার স্বামী জামাল মিয়া বলেন, আমি কোনাবাড়ীতে একটি ডিজাইন প্রিন্টিং কারখানায় কাজ করি। গত মাসে দুর্গাপূজার ছুটিতে সন্তানদের আমাদের কাছে এনেছিলাম। শুক্রবার সবার বাড়িতে যাওয়ার কথা ছিল। এখন আমার মাসুম দুইটা বাচ্চাদের কে দেখবে। ওদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে গেল।
জামাল মিয়ার খালাতো ভাই সুলতান হোসেন বলেন, এই দুর্ঘটনার পর থেকে প্রতিটি মুহূর্তে আমি আঞ্জুয়ারার লাশের পাশে ছিলাম। আঞ্জুয়ারার লাশটি গ্রামের বাড়িতে আনার পর দ্রুত দাফন করা হয়েছে।
চরগিরিশ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জহুরুল ইসলাম বলেন, মেয়েটির এমন মৃত্যু বেদনাদায়ক। তাদের ফুটফুটে দুটি সন্তানের ভবিষ্যৎ এখন অনেকটাই অনিশ্চিত। কারণ, মা বেঁচে থেকে দূরে থাকলেও সন্তানের একটা শক্তি থাকে।
উল্লেখ্য, গত বুধবার (৮ নভেম্বর) গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে পুলিশের সঙ্গে পোশাকশ্রমিকদের সংঘর্ষে আহত হন আঞ্জুয়ারা। আহতাবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com