বিশ্বের অর্থনৈতিক অবস্থা স্বাভাবিক রাখার জন্য ব্যবসা-বাণিজ্যে সম্পদশালীদের বিনিয়োগ অতিপ্রয়োজন। এ জন্য ইসলাম ব্যবসা-বাণিজ্যে উৎসাহিত করে। পাশাপাশি উৎপাদনশীল কোনো খাতে বিনিয়োগ না করে সম্পদ জমিয়ে রাখতে নিরুৎসাহিত করে ইসলাম। ব্যবসায় উৎসাহিত করে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘নামাজ শেষ হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে (ব্যবসা-বাণিজ্য কিংবা জীবিকা উপার্জনের অন্যান্য উপায়ের মাধ্যমে), আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান করবে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করবে, যাতে তোমরা সফলকাম হও’ (সূরা জুমুআ : ১০)।
পবিত্র কুরআনের আরো কয়েকটি আয়াতে ব্যবসা-বাণিজ্য ও জীবনোপকরণ উপার্জনের চেষ্টাকে আল্লাহর অনুগ্রহের অনুসন্ধান বলা হয়েছে। যেমন এক আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা (হজের সময়ে ব্যবসা করে বা শ্রম দিয়ে) আপন প্রতিপালকের অনুগ্রহ সন্ধান করলে তাতে কোনো গুনাহ নেই’ (সূরা বাকারা: ১৯৮)। অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর কিছু লোক এমন থাকবে, যারা আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধানের জন্য পৃথিবীকে ভ্রমণ করবে (অর্থাৎ, ব্যবসার জন্য দেশ-বিদেশ সফর করবে)’ (সুরা মুজ্জাম্মিল ২০ )। রাসূল সা: অসংখ্য হাদিসের মাধ্যমে লোকজনকে ব্যবসার প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছেন। যেমন এক হাদিসে তিনি এরশাদ করেন, ‘সৎ ব্যবসায়ী কিয়ামতের দিন সত্যবাদী ও শহীদগণের সঙ্গে উত্থিত হবেন’ (তিরমিজি, হাকিম)। অন্য হাদিসে বলেন, ‘তোমরা ব্যবসা করো, কেননা রিজিকের ১০ ভাগের ৯ ভাগ ব্যবসার মধ্যে রয়েছে’ (মুসনাদে সাইদ ইবনে মানসুর)। হজরত উমর রা: বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যেন জীবিকার অন্বেষণ ছেড়ে অলস বসে না থাক’ (কানজুল উম্মাল)। ওমর ইবনে খাত্তাব রা: আরো বলেন, ‘আমি চাই, জিহাদের ময়দানে জিহাদরত অবস্থায় কিংবা বাজারে ব্যবসা-বাণিজ্য করা অবস্থায় আমার মৃত্যু হোক’ (কানজুল উম্মাল)।
যারা সম্পদ জমিয়ে রাখে এবং তা থেকে জাকাতও দেয় না, পবিত্র কুরআনে তাদের কঠিন হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘এবং যারা সোনা ও রুপা জমিয়ে রাখে এবং তা আল্লাহর রাস্তায় খরচ করে না, তাদের বেদনাদায়ক আজাবের সুসংবাদ দাও’ (সূরা তওবা: ৩৪)। আয়াতের ব্যাখ্যায় মহানবী সা: বলেন, আল্লাহ যাকে সম্পদ দিয়েছেন, কিন্তু সেই সম্পদের জাকাত দেয় না, কিয়ামতের দিন তার সম্পদ তার জন্য চোখের পাশে দুটি কালো দাগবিশিষ্ট বিষধর সাপে পরিণত হবে। তারপর সেটি তার চোয়ালের দুই পাশে দংশন করবে এবং বলতে থাকবে, আমি তোমার সম্পদ, আমি তোমার গচ্ছিত ধন (বুখারি: ১৪০৩)।
আমাদের সমাজে নারীদের বিয়ের সময় মোহরানা বাবদ যে স্বর্ণালঙ্কার দেয়া হয়, অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা উৎপাদনশীল কোনো খাতে ব্যবহৃত না হয়ে এমনিতেই পড়ে থাকে। এটা ইসলামী অর্থনীতির ধারণার বিপরীত। এর ফলে দেখা যায়, অনেক পরিবারে এক-দুই ভরি স্বর্ণ থাকা সত্ত্বেও তাদের নুন আনতে পান্তা ফুরানোর অবস্থা। এ সম্পদ যদি সুষ্ঠু উপায়ে ব্যবসার আওতায় আনা যায়, তা হলে এক দিকে অনেক পরিবারে যেমন সচ্ছলতা আসবে, অন্য দিকে দেশের অর্থনীতিতেও ইতিবাচক অগ্রগতি সাধিত হবে। লেখক: শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়