বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৪০ অপরাহ্ন

জামায়াতের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বাধা নেই: মতিউর রহমান আকন্দ

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় রবিবার, ১৯ নভেম্বর, ২০২৩

জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ বলেছেন, নিবন্ধন না থাকলেও সংবিধান অনুযায়ী জামায়াতের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনে কোনো বাধা নেই। নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন প্রয়োজন নির্বাচন করার জন্য রাজনীতি করার জন্য নয়। দেশে অনেক অনিবন্ধিত দল নিয়মিত রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করছে বলেও জানান তিনি। গতকাল রোববার (১৯ নভেম্বর) রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে দেওয়া নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন অবৈধ বলে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বহাল রাখেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। এর ফলে জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধই থাকছে। এদিন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের বিচারপতির আপিল বিভাগের বে এ আদেশ দেন। জামায়াতের মূল আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলীর অনুপস্থিতিতে আপিল খারিজ করে আদেশ দেন আপিল বিভাগ। আইনের ভাষায় এটাকে বলে ‌‘ডিসমিস ফর ডিফল্ট’।
জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ বলে হাইকোর্টের দেওয়া রায় আপিল বিভাগ বহাল রাখার পর এক তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জামায়াতের আইনজীবী ও দলটির প্রচার সম্পাদক বলেন, দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং হরতালের কারণে আমাদের সিনিয়র আইনজীবী শুনানি মুলতবি করার আবেদন দিয়েছিলেন। আপনারা জানেন এ মামলার আমাদের প্রধান আইনজীবী হচ্ছেন সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী। তার মুলতবির আবেদনটি আদালত আমলে নেননি, খারিজ করে দিয়েছেন। সেই সাথে আপিল বিভাগ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন মামলার হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে যে আপিল করা হয়েছিল সেই আপিলটিও ডিসমিসড ফর ডিফল্ট হিসেবে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে। ফলে আমাদের আপিলটি ডিসমিসড ফর ডিফল্ট হিসেবে শুনানির জন্য কার্যতালিকায় থাকবে না। পরবর্তীতে আমাদের প্রতিপক্ষ দু’টি আবেদন দিয়েছিলেন, আমাদের আপিল ডিসমিসড হওয়ার কারণে তাদের দুটি আবেদন শুনানির জন্য থাকবে না। আদালত রিজেক্ট করে দিয়েছেন। আজ এই মামলাটি সুপ্রিম কোর্টে নিষ্পত্তি হল। এই বিষয়ে জামায়াতে ইসলামীর পরবর্তী নির্দেশনা আলকে আইনি কী পদক্ষেপ নেওয়া যায়, সেই ব্যাপারে আমরা পদক্ষেপ গ্রহণ করব।
তিনি আরও বলেন, এখানে নিবন্ধনের বৈধতা নিয়ে মামলা ছিল, আদালত নিবন্ধন নিয়ে মতামত দিয়েছেন। তবে স্বাভাবিকভাবে জামায়াতের রাজনীতি বহাল থাকবে। সংবিধান অনুযায়ী রাজনীতি নিষিদ্ধ করার কোনো সুযোগ নেই। রাজনীতি করার সুযোগ জামায়াতে ইসলামী পাবে, অব্যাহত আছে। পাবে এবং থাকবে। এর আগে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত রোববার প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের আপিল বিভাগের একই বে পরবর্তী শুনানির জন্য ১৯ নভেম্বর দিন ধার্য করেন। আদালতে ওইদিন জামায়াতের পক্ষে সময় চান আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. জিয়াউর রহমান। জামায়াতের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে নিষেধাজ্ঞা ও আদালত অবমাননার অভিযোগের আবেদনের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর ও আইনজীবী আহসানুল করিম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ (এ এম) আমিন উদ্দিন, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ (এসকে) মোর্শেদ ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার মোহাম্মদ মেহেদী হাসান চৌধুরী। ওইদিন দলের নিবন্ধন বাতিলের আপিল শুনানির জন্য আইনজীবী উপস্থিত হতে না পারায় আট সপ্তাহ সময় চেয়ে আবেদন করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। সকালে জামায়াতের আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলীর পক্ষে সময় চান অন্য আইনজীবী মো. জিয়াউর রহমান। ওই আবেদনের শুনানিতে এই আদেশ দেন আদালত। এর আগে হাইকোর্টের রায়ে নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দায়ের করা লিভ টু আপিলের ওপর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে শুনানির দিন ধার্য ছিল। তারই ধারাবাহিকতায় শুনানি হলো আজ।
জামায়াতে ইসলামীর পক্ষের আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলীর আজ ব্যক্তিগত সমস্যা থাকায় তার পক্ষ থেকে আট সপ্তাহ সময় চাইলে আপিল বিভাগ এক সপ্তাহ সময় দিয়ে ১৯ নভেম্বর শুনানির দিন ধার্য করেন।

গত ১৯ অক্টোবর জামায়াতের রাজনৈতিক কার্যক্রম, রাজনৈতিক সভা, জনসভা বা মিছিলের ওপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর। পৃথক আবেদন দুটি হলো- রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন অবৈধ ঘোষিত হওয়া বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে রাজনৈতিক কর্মকা- পরিচালনা করা থেকে বিরত রাখতে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করা হয়েছে। পাশাপাশি জামায়াতের আমির, সেক্রেটারি জেনারেল, নায়েবে আমির, ঢাকা মহানগরের দক্ষিণের আমির ও দক্ষিণের নায়েবে আমিরসহ আটজনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে আবেদন করা হয়েছে। জামায়াতের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিটকারী মাওলানা সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরীসহ তিনজন হাইকোর্ট বিভাগের রায়ে নিবন্ধন অবৈধ করার বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক কার্যক্রম, রাজনৈতিক সভা, জনসভা বা মিছিলের ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং ১০ বছর পর রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করে নিবন্ধন ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি করায় আদালত অবমাননার অভিযোগ এনে পৃথক আবেদন করে। আপিল বিভাগে করা এই আবেদনে জামায়াতের নিবন্ধন সংক্রান্ত মামলা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় সম্প্রতি দলটি নিবন্ধন ফিরে পাওয়ার দাবি করে। তাদের এ দাবিকে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হয়। একই সঙ্গে জামায়াতে ইসলামী যাতে কোনো ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে না পারে সে বিষয়েও নিষেধাজ্ঞা চাওয়া হয়।
জামায়াতে ইসলামীর সবধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনে নিষেধাজ্ঞার আবেদনে পক্ষভুক্ত হয়েছেন বিশিষ্ট ৪২ নাগরিক। অন্যদিকে জামায়াত রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে পারেন বলে যুক্তি দিতে দলটির পক্ষে পক্ষভুক্ত হয়েছেন ৪৭ জন। ২০১৩ সালের ১ আগস্ট জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল ও অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট। এরপর ২০১৮ সালের ৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। পরে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের সারসংক্ষেপ জমা দেয় জামায়াতে ইসলামী।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com